
ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করে নির্বাচনটি বাতিল ও নতুন করে ভোট গ্রহণের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি।
তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বলছে, বিএনপি পরাজিত হয়ে এখন নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই এসব দাবি তুলছে।
গতকালের এ নির্বাচনের বেসরকারি ফলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী প্রায় দু লাখ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন। ভোট গ্রহণকালে নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠলেও নির্বাচন কমিশন বলেছে, যেসব কেন্দ্রে অনিয়ম হয়েছে সেগুলোতে ভোট গ্রহণ তখনই বন্ধ করা হয়েছে।
প্রাথমিক যে ফলাফল তাতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জাহাঙ্গীর হোসেন পান চার লাখ দশ ভোট। আর তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির হাসান উদ্দিন সরকার এক লাখ সাতানব্বই হাজার ছশো এগারো ভোট। তবে ব্যালট বাক্স তুলে নেয়া আর জালভোটসহ নানা অনিয়মের কারণে ৪২৫টি কেন্দ্রের মধ্যে নয়টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন।
বুধবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতাসীনরা নির্বাচনের ফল দখল করেছে।
তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশনের সমর্থনে সরকার গাজীপুরে আমাদের বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছে। নির্বাচনের নামে একটি তামাশা হয়েছে। ভোট ডাকাতির নতুন কৌশল আবিষ্কার করে তা প্রয়োগ করেছে। এ নির্বাচনে ফল ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি। এ নির্বাচন বাতিল করে পুনরায় নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছি।”
এর আগে খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে হারার পরেও প্রায় একই ধরনের বক্তব্য এসেছিলো বিএনপির তরফ থেকে। এবার গাজীপুরের নির্বাচনেও ভোটের আগেই ব্যালটে সীল দেয়া, কেন্দ্র দখল, এজেন্টদের জোর করে বের করে দেয়ার অভিযোগ তুলেছে বিএনপি।
পাশাপাশি ঢাকার গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন অনিয়মের নানা চিত্র প্রকাশিত হয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে আগামী মাসেই যে বরিশাল, সিলেট ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে তাতে কি অংশ নেবে বিএনপি ?
এমন প্রশ্নের জবাবে মি. আলমগীর বলেন, “সরকারের চরিত্র প্রকাশের জন্য এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি আন্দোলনের অংশ হিসেবে। বরিশাল সিলেট ও রাজশাহীতেও নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি একই কারণে”।
একদিকে নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ও অন্যদিকে সামনের নির্বাচনের প্রস্তুতিকে তাদের সরকার বিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবেই আখ্যায়িত করছেন বিএনপি মহাসচিব।
তবে গাজীপুর নির্বাচন নিয়ে বিএনপি সংবাদ সম্মেলন যখন চলছিলো, তখন প্রায় একই সময়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম নিয়ে বিএনপি যেসব অভিযোগ করেছে তার জবাবে মি. কাদের বলেন, কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে ঝামেলার কারণে নয়টি কেন্দ্রে ভোট স্থগিত হয়েছে।
“এর বাইরে কোথায় অনিয়ম হয়েছে সেটি বিএনপিকে বলতে হবে। অন্ধকারে ঢিল ছুঁড়লে হবেনা”।
ওবায়দুল কাদের বলছেন বিএনপি শুরু থেকেই এ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার ষড়যন্ত্র করেছে। আর এ ষড়যন্ত্রের উদাহরণ হিসেবে ওবায়দুল কাদের নির্বাচনের আগের রাতে আটক হওয়া বিএনপি নেতা মেজর অবসরপ্রাপ্ত মিজানুর রহমানের নামে প্রচার হওয়া অডিওর কথা উল্লেখ করেছেন।
তবে বিএনপি মহাসচিব বলছেন এটি সরকারেরই একটি চক্রান্ত, তারাই এগুলো প্রচার করছে।
ওদিকে নির্বাচন কমিশনও আগেই জানিয়েছে যে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া গাজীপুরের নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষই হয়েছে।
Source from: http://www.bbc.com/bengali/news-44631303