বাংলাদেশের চট্টগ্রামে হেপাটাইটিস ‘ই’ প্রকোপ কতটা উদ্বেগের

Date:

Share post:

হেপাটাইটিস ই ভাইরাস ছবির কপিরাইট BSIP
Image caption হেপাটাইটিস ই ভাইরাস

বাংলাদেশের বন্দরনগরী চট্টগ্রামের হালিশহর এলাকায় পানিবাহিত রোগ, বিশেষ করে হেপাটাইটিস ই সংক্রান্ত রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে সেখানকার বাসিন্দাদের মধ্যে।

প্রায় দেড় মাস আগে থেকে হালিশহর এলাকায় পানিবাহিত নানা ধরনের রোগ ছড়াতে শুরু করে।

ন্ডিস, টাইফয়েডসহ এসব পানিবাহিত রোগের পাশাপাশি হেপাটাইটিস ই’ এর সংক্রমণ হচ্ছে- এরকম ধারনা থেকে আতঙ্ক সৃষ্টি হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে।

হেপাটাইটিস ই সংক্রমণের ্য নিশ্চিত করেন চট্টগ্রাম জেলার সিভিল সার্জন আজিজুর রহমান সিদ্দিকী।

তিনি বলেন, “হেপাটাইটিস ই সংক্রমণ নিয়ে কোনো সন্দেহ । ঢাকা থেকে আসা টিম এবং এখানকার প্যাথলজিকাল সেন্টারে হালিশহর এলাকার যত রক্তের ীক্ষা করা হয়েছে সেখানে প্রায় সবলোতেই হেপাটাইটিস ই পাওয়া গেছে।”

যে কারণে হেপাটাইটিস ই সংক্রমণ

টানা বৃষ্টিপাতের কারণে তৈরি হওয়া জলাবদ্ধতার কারণে পানিবাহিত রোগের প্রকোপ বেড়েছে বলে মনে করেন আজিজুর রহমান সিদ্দিকী।

চট্টগ্রাম শহরের আরো কয়েকটি এলাকায় জলাবদ্ধতার সমস্যা থাকলেও বিশেষ কিছু কারণে হালিশহরে পানিবাহিত রোগের ব্যাপকতা বেশি বলে মনে করেন তিনি।

মি. সিদ্দিকী বলেন, “হালিশহরের দুটো জিনিস অন্য জায়গা থেকে আলাদা। এখানকার লোকজনের অভিযোগ ওয়াসার পানিতে সমস্যা। রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় পানির লাইনে লিকেজ আছে বলে বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন।”

“এখানে জোয়ারের পানি আসে যা অন্য জায়গায় আসে না।”

আরো পড়তে পারেন:

বিদেশিদের জন্য ঢাকা নগরী কেন এত ব্যয়বহুল?

‘তারা পাপ করেছে, আমি তো কোন ভুল করিনি’

গাজীপুর সিটি নির্বাচন: অনিয়মের নানা অভিযোগ

আপনার ডিভাইস মিডিয়া প্লেব্যাক সমর্থন করে না

চট্টগ্রামে এবারো জলাবদ্ধতার আশঙ্কা?

খাল খননের জন্য রাস্তা খোড়াখুঁড়ি হচ্ছে বলে হালিশহর এলাকায় আরো বেশি হেপাটাইটিস ই সংক্রমণ হচ্ছে বলে জানান মি. সিদ্দিকী।

তিনি বলেন, “আরেকটি অভিযোগ, যেটা সব জায়গাতেই রয়েছে, সেটা হলো ষজন পানির ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করে না।”

স্থানীয় বাসিন্দাদের ধারণা ওয়াসার সরবরাহ করা পানি দূষিত হওয়ার কারণে হেপাটাইটিস ই-এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

তবে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক একেএম ফজলুল্লাহর মতে, এই ধরনের রোগ ছড়ানোর প্রধান কারণ অপরিচ্ছন্নতা ও মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব।

মি.ফজলুল্লাহ বলেন, “বর্ষার পানিতে ঐ এলাকার সমস্ত নালা নর্দমা ডুবে একাকার হয়ে যায়। সেসব পানিতে মশা-মাছি বসে এবং সেসব মশা মাছির মাধ্যমে রোগ ছড়াতে পারে বলে আমার ধারণা।”

আরো পড়তে পারেন:

উত্তর কোরিয়ার রহস্যময় এক হোটেলের কাহিনী

মিয়ানমারের অন্যতম শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা বরখাস্ত

সুস্বাস্থ্যের জন্য দিনে কতটা ঘুম দরকার

ভারতে সরকার কেন এসি-র তাপমাত্রাও বেঁধে দিচ্ছে

নিয়মিত পানির ট্যাঙ্ক পরিষ্কার না করাও পানিবাহিত রোগ সংক্রমণের অন্যতম প্রধান কারণ বলে মনে করেন মি. ফজলুল্লাহ।

“আমরা সবাইকে বলেছি পানির ট্যাঙ্ক চার মাস পরপর পরিষ্কার করতে। নিজেরা পরিষ্কার করতে না পারলে ওয়াসাকে জানাতেও বলা হয়েছে। বিনামূল্যে আমরা ঐসব ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করবো।”

“তারপরও অধিকাংশ বাড়ির পানির ট্যাঙ্কই বছরের পর বছর পরিষ্কার করা হয় না। অনেকে জানেও না শেষ কবে ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করা হয়েছিল”, জানান মি.ফজলুল্লাহ।

পানি সরবরাহ ব্যবস্থায় যেন কোনো ত্রুটি না থাকে সেবিষয়ে ওয়াসা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে বলে নিশ্চিত করেন মি. ফজলুল্লাহ। তিনি জানান ওয়াসা বিভিন্ন এলাকা থেকে পানির করছে।

“পানির নমুনায় যদি কোনো রকম সমস্যা থাকে তাহলে যা যা করা দরকার আমরা করবো। পানিতে ক্লোরিন বাড়িয়ে দেয়া, লাইনগুলো পরিষ্কার করা এধরনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।”

হালিশহর এলাকায় পানির লাইনে লিকেজ আছে কিনা তা’ও খুঁজে দেখা হবে বলে জানান মি. ফজলুল্লাহ।

তিনি জানান, আক্রান্ত এলাকার মানুষদের সচেতন করতে পত্রিকায় বিজ্ঞাপণ দেয়া এবং স্কুল-কলেজে গিয়ে প্রচারণা চালানো হচ্ছে ওয়াসার পক্ষ থেকে।

রোগ িরোধে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবাদান, পানি বিশুদ্ধকরণ বড়ি ও প্রচারণাসহ নানা ধরণের কার্যক্রম হাতে নিয়েছে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগও।

Image caption চট্টগ্রামের হালিশহরের জলাবদ্ধতার চিত্র

হেপাটাইটিস ই আসলে কতটা ক্ষতিকর?

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, হেপাটাইটিস ই অন্যান্য হেপাটাইটিসের মত মারাত্মক নয়।

হেপাটাইটিস বি অথবা সি আক্রান্ত হলে যতটা মৃত্যুর ঝুঁকি তৈরি হয়, হেপাটাইটিস ই-র কারণে সেরকম ঝুঁকি সৃষ্টি হয় না।

তবে গর্ভবতী মায়েদের জন্য এই রোগ বেশ ক্ষতিকর হতে পারে, বলেন মি. সিদ্দিকী। প্রতি পাঁচজনে একজন গর্ভবতী মা মারা যায় হেপাটাইটিস ই’তে।

মি. সিদ্দিকী জানান, এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে জন্ডিসের মতই লক্ষণ দেখা যায়। খাওয়ায় অরুচি, বমি করা, চোখ হলুদ হওয়া, গায়ের রঙ হলুদ হওয়া, প্রস্রাব অতিরিক্ত হলুদ হওয়া এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ।

মি. সিদ্দিকী বলেন, “শুরুতে জন্ডিসের পরীক্ষাই করা হয়। তারপর কোন ধরনের হেপাটাইটিস তা জানার জন্য পরীক্ষা চালানো হয়।”

এই রোগের প্রতিরোধের একমাত্র উপায় নিরাপদ পানির ব্যবহার নিশ্চিত করা।

মি.সিদ্দিকী বলেন, “শুধু খাবার পানির বিশুদ্ধতা নিশ্চিত করলেই হবে না; তৈজসপত্র ধোয়া, করা এবং অন্যান্য ব্যবহারের পানিও যেন বিশুদ্ধ হয় সেটাও নিশ্চিত করতে হবে।”

মি.সিদ্দিকী বলেন, সব ধরনের পানি ফুটিয়ে ব্যবহার করলে হেপাটাইটিস ই সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে না। এছাড়া পানি বিশুদ্ধ করতে হালিশহরে এলাকায় স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

অনেক সময় পচা-বাসি খাবার খেলেও হেপাটাইটিস ই সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে বলে জানান মি.সিদ্দিকী।

Source from: http://www.bbc.com/bengali/news-44618564

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Related articles

আমেরিকা পার্টি নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করলেন ইলন মাস্ক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির পর নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠন করার ঘোষণা দিয়েছেন...

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সদস্য সচিব নিজাম উদ্দিনকে সাময়িকভাবে পদ থেকে বরখাস্ত

ডেস্ক নিউজ সংগঠনের নীতিমালা ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সদস্য সচিব নিজাম উদ্দিনকে...

গাজায় একদিনে ৭০ জন নিহত, সকাল থেকে ৪৭ জনকে হত্যা

গত ২৪ ঘণ্টায় উপত্যকাজুড়ে বিভিন্ন হাসপাতালে কমপক্ষে ৭০ জনের লাশ আনা হয়েছে। একই সময়ে ৩৩২ জন আহত ব্যক্তি...

পাঁচটি সামরিক স্থাপনায় ইরানের সফল হামলার বিষয়ে ইসরায়েল নীরব: টেলিগ্রাফ

মার্কিন ওরেগন স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষকদের পরিচালিত স্যাটেলাইট তথ্য বিশ্লেষণের বরাত দিয়ে দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, একটি বৃহৎ বিমানঘাঁটিসহ...