রসগোল্লার উৎপত্তি পশ্চিমবঙ্গে, ভারতের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত

Date:

Share post:

জিনিসটা মিষ্টি, কিন্তু তা নিয়েই শুু হয়েছিল তিক্ততা – ভারতেরই ুই প্রতিবেশী রাজ্যের মধ্যে।

অবশেষে তর্কের অবসান হয়েছে, বাঙালির অন্যতম প্রিয় মিষ্টি রসগোল্লা যে বাংলারই, সেই স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।

প্রায় ড়াই বছর ধরে চলার পরে ‘জিওগ্র্যাফিকাল ইন্ডিকেশন’ বা ‘জি আই’ ট্যাগ দেওয়া হয়েছে ‘বাংলার রসগোল্লা’কে।

ভারত সরকারের পেটেন্ট অফিস আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী বিচার বিবেচনা করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

কোন জিনিস বা নাম কোন অঞ্চলের বিশেষত্ব, সেই অনুযায়ী সেটিকে মেধাস্বত্ত্ব বা ইন্টেলেকচুয়াল প্রর ভৌগোলিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়ে থাকে।

বিশ্বে অন্য কেউ সেই ান-নামের সঙ্গে মিশিয়ে কোনো জিনিস বিক্রি করতে পারে না। এর আগে দার্জিলিং চা যেমন জি আই ট্যাগ পেয়েছে।

“শুধু ছানা দিয়ে তৈরি যে গোল মিষ্টি রসে জারিয়ে তৈরি হয়, সেটির উদ্ভাবক যে আমাদেরই পূর্বপুরুষ নবীন চন্দ্র দাস- সেটা আমরা সবাই জানতাম। কিন্তু আজ তার স্বীকৃতি পেলাম। একই সঙ্গে গোটা রাজ্যের রসগোল্লাকেও স্বীকৃতি দেওয়া হল,” বলছিলেন কলকাতার মিষ্টি বিক্রেতা কেসি দাসের বর্তমান কর্ণধার ধীমান দাস।’রসগোল্লা আবিষ্কারক বরিশাল অঞ্চলের লোক’

প্রতিবেশী ওড়িশা দাবি তুলেছিল যে রসগোল্লার ‘জি আই’ তাদের প্রাপ্য, কারণ পুরীর জগন্নাথের মন্দিরে বহু শতক ধরে এই মিষ্টি বছরে অন্তত একবার ভোগ হিসাবে দেওয়া হয়ে থাকে।

ওড়িশার বিখ্যাত সাময়িকী পৌরুষের সম্পাদক ও সাংস্কৃতিক বিশেষজ্ঞ অসিত মোহান্তি এর আগে বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছিলেন, “উনিশ শতকের মাঝামাঝি বহু বাঙালি পরিবারে ওড়িয়ারা পাচকের কাজ করতেন, তাদের ঠাকুর বলা হতো”।

“এরাই রসগোল্লার রেসিপি ওড়িশা থেকে বাংলায় নিয়ে গেছেন – বহু গবেষণাতেও তার সমর্থন মিলেছে। বলা যেতে পারে, রসগোল্লার উৎপত্তি ওড়িশাতেই, তবে তা জনপ্রিয়তা পেয়েছে বাংলায়।”

কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ সরকার নথি প্রমাণ হাজির করে বলেছিল, পুরীতে যে মিষ্টি দেওয়া হয়, তার সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের রসগোল্লার অনেক ফারাক রয়েছে।

উত্তর কলকাতায় একশো বছরেরও বেশী সময় ধরে রসগোল্লা বিক্রি হয় চিত্তরঞ্জন মিষ্টান্ন ভান্ডারে।

দোকানটির বর্তমান মালিক নিতাই চন্দ্র ঘোষ জানাচ্ছিলেন, “রসগোল্লাতো কলকাতার বাইরে সব জায়গাতেই এখন তৈরি হয়। কিন্তু যে টিমটি রসগোল্লা নিয়ে সার্ভে করার জন্য সারা দেশে রছিলেন, তারা এখানে এসে আমাদের দোকানে রসগোল্লা খেয়েই বলেছিলেন যে সেই প্রথম তারা আসল রসগোল্লা খেলেন। ওই একটা মন্তব্যেই বোঝা যায় যে বাংলার রসগোল্লার বিশেষত্বটা।”

কেসি দাস সংস্থার অন্যতম কর্ণধার ধীমান দাসের কথায়, “এখানে যে রসগোল্লা তৈরি হয়, তাতে শুধুই ছানা থাকে। কিন্তু অন্য জায়গায় ময়দা বা খোয়া-ক্ষীর মিশিয়ে একটা মিষ্টি তৈরি করে বাঙালি রসগোল্লা নামে বিক্রি করে। এই জি আই ট্যাগের পরে সেটা বন্ধ হবে। আমাদের যে রেসিপি, সেটারই স্বীকৃতি পাওয়া গেল। ছানাটা কীভাবে তৈরি হচ্ছে, তার ওপরেই রসগোল্লার স্বাদ নির্ভর করে।”

মি. নিতাই দাসের কথায় অবশ্য ছানা তৈরিতো অনেক পরের ব্যাপার, গরু কী খাচ্ছে, তার প্রজনন ঠিক কেমন, সেখান থেকে রসগোল্লার মান তৈরি হতে শুরু করে। দুধটাই সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ।

আর তৈরি হওয়ার পরে রসগোল্লা খাওয়ারও কায়দাটা জানা দরকার।

“আলতো করে দুই আঙুলে ধরে ধীরে ধীরে কামড় দিতে হবে – গপগপ করে খেলে চলবে না। রসগোল্লা খাওয়া শেষ হলে রসে সামান্য চুমুক – তবেই আপনি রসগোল্লাটা পুরো উপভোগ করতে পারবেন।

আর রসগোল্লা খাওয়ার পরে তো কোনোমতেই খাওয়া চলবে না,” জানাচ্ছিলেন ছয় পুরুষ ধরে রসগোল্লা ব্যবসায় রয়েছে যে চিত্তরঞ্জন মিষ্টান্ন ভান্ডার, তার মালিক নিতাই চন্দ্র ঘোষ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Related articles

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আধা ঘণ্টার বেশি সময় ধরে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক

ব্যাংককে বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আধা ঘণ্টার...

চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় আহত কিশোরী তাসনীম ইসলাম প্রেমা (১৮) মারা গেছে

চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় আহত কিশোরী তাসনীম ইসলাম প্রেমা (১৮) মারা গেছে। শুক্রবার (৪ এপ্রিল) সকালে চট্টগ্রাম...

পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেছে

দেখতে দেখতে রমজান শেষ হয়ে এলো। স্বভাবতই রমজান শেষে মহিমাময় পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা এবং চাঁদ দেখে...

চট্টগ্রামের আলোচিত সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদকে ঢাকার বসুন্ধরা সিটি থেকে গ্রেফতার

চট্টগ্রামের আলোচিত সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদকে ঢাকার বসুন্ধরা সিটি থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শনিবার (১৫ মার্চ)...