সৌদি আরব – ইরান দ্বন্দ্ব: কে কার বন্ধু?

Date:

Share post:

স্যেদি যুবরাজ মোহাম্ বিন সালমান ও ের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানী

সৌদি আরব এবং ইরানের মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে উত্তেজনার মাত্রা বাড়লেও, দেশ দুটির মধ্যে আঞ্চলিক বৈরিতার ইতিহাস বেশ পুরনো। মধ্যপ্রাচ্যে এবং বাইরে দুটি দেশেরই রয়েছে প্রভাবশালী নিজস্ব বন্ধু এবং শত্রুর আলাদা বলয়।

সৌদি আরব

সুন্নী প্রধান রাজতান্ত্রিক দেশটিকে ইসলাম ধর্মের জন্মভূমি বলা হয়। ইসলামী বিশ্বের সরচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর বেশিরই এদেশে অবস্থিত।

বিশ্বের অন্যতম প্রধান তেল রপ্তানীকারী এবং তেল রপ্তানীকারী দেশগুলো অন্যতম শীর্ষ ধনী রাষ্ সৌদি আরব।

ইরানের বিরুদ্ধে সৌদি আরবের সাম্প্রতিক বৈরিতার পেছনে রয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কঠোর অব। এছাড়া ক্রমে ক্ষমতাবান হয়ে ওঠা সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন।

সৌদি আরব অভিযোগ করছে, হুতিদের ইরান সরঞ্জামাদি সরবারহ করে, যদিও তেহরান সে দাবী প্রত্যাখ্যান করেছে। আবার সৌদি আরব ইরানের মিত্র সিরিয়ার বিদ্রোহীদের স্থন দেয় এবং প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের উচ্ছেদ চায়।

সৌদি আরবের আশংকা মধ্যপ্রাচ্যে ইরান আধিপত্য বিস্তার করবে, এবং এ অঞ্চলে শিয়াদের প্রভাব প্রতিপত্তি বাড়ার বিষয়টির বিরোধিতা করে আসছে দেশটি।

মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম সেরা সুসজ্জিত সেনাবাহিনী সৌদি আরবের। দেশটি বিশ্বের সবচেয়ে বেশি অস্ত্র আমদানিকারক এবং দুই লাখ সাতাশ হাজার সৈন্য রয়েছে।

ইরান

১৯৭৯ সালে ইরান ইসলামিক প্রজাতন্ত্র কায়েম হয়, রাজতন্ত্র উৎখাত হয়, এবং ধর্মীয় নেতারা আয়াতোল্লাহ খোমেনির নেতৃত্বে রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে। ইরানের ৮০ শতাংশ লোকই শিয়া।

ইরানে এ অঞ্চলে প্রধান শক্তি, এবং তাদের প্রভাব গত এক দশকে লক্ষণীয়ভাবে বেড়েছে – বিশেষ করে ইরাকে সাদ্দাম হোসেন উৎখাত হবার পর।

ইরান সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে সমর্থন দিচ্ছে – তার শাসনের বিরোধী গোষ্ঠীগুলো এবং ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে। ইরানের ইসলামী বিপ্লবী গার্ড বাহিনী ইরাক ও সিরিয়ায় সুন্নি জিহাদিদের অগ্রযাত্রা ঠেকাতে বড় ভুমিকা করেছে।

ইরান বিশ্বাস করে সৌদি আরব লেবাননকে অস্থিতিশীল করে তোলার চেষ্টা করছে। ইরানের সমর্থনপুষ্ট হেজবোল্লাহ নামের শিয়া আন্দোলন লেবাননের সরকারের অংশ।

ইরান তাদের প্রধান প্রতিপক্ষ বলে মনে করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে।

ধারণা করা হয়, ইরানের কাছে ওই অঞ্চলের সবচেয়ে আধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র আছে। ই বাহিনীতে সৈন্যসংখ্যা ৫ লাখ ৩৪ হাজার।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

মার্কিন-ইরান সম্পর্ক এখন অত্যন্ত শীতল । ১৯৫৩ সালে সিআইএর সহায়তার এক অভ্যুত্থানে ইরানের প্রদানমন্ত্রী ক্ষমতাচ্যুত হন। ইসলামি বিপ্লব এবং তেহরানের মার্কিন দূতাবাসে জিম্মি করার ঘটনা দু দেশের সম্পর্কের ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছে।

অন্যদিকে সৌদি আরব সবসময়ই মার্কিন মিত্র ছিল, তবে বারাক ওবামার সময় ইরানের ব্যাপারে নীতির কারণে এ সম্পর্ক শীতল হয়েছিল। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হবার পর তিনি ইরানের ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। অন্যদিকে হোয়াইট হাউস এবং সৌদি রাজপরিবার পরস্পরের জন্য লাল কার্পেট পেতে দেয়।

একই ভাবে মি. ট্রাম্প বা তার াসন সৌদি আরবের কট্টর ইসলামের সমালোচনা করেননি – যেভাবে তারা ইরানকে সন্ত্রাসবাদের সাথে সম্পর্কিত করে থাকেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম বিদেশ সফর ছিল মধ্যপ্রাচ্যে। সেখানে তিনি সৌদি আরব এবং ইসরায়েলের নেতাদের সাথে সাক্ষাত করেন।

তাদের অভিন্ন ইচ্ছা হলো, ইরানের আঞ্চলিক প্রভাব নিয়ন্ত্রণে আনা।

রাশিয়া

রাশিয়ার সৌদি আরব এবং ইরান উভয়েরই মিত্র, অর্থনৈতিক সম্পর্ক ছাড়াও দু দেশের কাছেই রাশিয়া উন্নত অস্ত্র বিক্রি করেছে।

তেহরান এবং রিয়াদের এই বিবাদে রাশিয়া কোন একটি পক্ষ নিয়েছে বলে মনে হয় না, তারা মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করার জন্য তৈরি এমন আভাস দিয়েছে।

সোভিযেত সাম্রাজ্যের পতনের পর মধ্যপ্রাচ্যে তাদের প্রভাব কমে গেলেও – সম্প্রতি রাশিয়া এ প্রভাব বাড়িয়েছে। সিরিয়ায় রাশিয়ার বিমান র ফলেই সেখানকার গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতি বাশার আল-আসাদের পক্ষে চলে আসে।

তুরস্ক

ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে এক সূক্ষ্ম ভারসাম্য রাখার নীতি নিয়ে চলছে তুরস্ক।

সিরিয়ার আসাদ সরকারের বিরোধিতার ক্ষেত্রে – সুন্নি শক্তি হিসেবে তাদের অবস্থান সৌদি আরবের মতোই। সৌদি আরবের সাথে তাদের শক্তিশালী সম্পর্ক আছে। তবে ইরানের ব্যাপারে তাদের গভীর অবিশ্বাস সত্বেও তারা কুর্দিদের প্রভাব ঠেকাতে একটা মিত্রতা গড়ে তুলেছে। কারণ দুটি দেশই কুর্দিদের একটি হুমকি হিসেবে দেখে।

ইনরায়েল

আরব বিশ্বে ইসরায়েলের সাথে শুধুমাত্র মিশর ও জর্ডনের কূটনৈতিক সম্পর্ক আছে। ইরান ও ইসরায়েল হচ্ছে পরস্পরের চরম শত্রু। ইরানের প্রেসিডেন্ট আহমেদিনেজাদ ইসরায়েলকে পৃথিবীর বুক থেকে মুছে দেবার কথাও বলেছিলেন।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বিনিয়ামিন নেতানিয়াহু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ইরানের পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী হওয়া ঠেকাতে।

তিনি এটাও বলেছেন, ইরানের ক্রমবর্ধমান প্রভাব ঠেকাতে তাদের সাথে কিছু আরব দেশের একটা সহযোগিতা সম্পর্ক রয়েছে। সম্প্রতি একজন সৌদি যুবরাজ আলোচনার জন্য গোপনে ইসরায়েল সফর করেছেন এমন খবর বেরুনোর পর সৌদি আরব তা অস্বীকার করেন।

সিরিয়া

প্রেসিডেন্ট বাশার আসাদের সরকারের নাথে ইরানের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। তার সরকারের পক্ষে লড়াইয়ের জন্য হেজবোল্লাহ হাজার হাজার যোদ্ধা পাঠিয়েছে।

মিশর

মিশর মধ্যপ্রাচ্যের রাজধানীতে কেন্দ্রীয় ভুমিকা পালন করে। তাদের সাথে ইরানের চাইতে সৌদি আরবের সম্পর্কই বেশি ঘনিষ্ঠ।

লেবানন

লেবাননের প্রধানমন্ত্রী সাদ হারির সৌদি আরবের ঘনিষ্ঠ হলেও লেবাননের সরকারের অংশ হেজবোল্লাহ ইরানের মিত্র।

উপসাগরীয় দেশসমূহ

কাতার, বাহরাইন বা কুয়েতের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ইরানের তুলনায় সৌদি আরবের সাথেই বেশি।

তবে সৌদি আরব সম্প্রতি কাতারকে ইরানের সাথে সম্পর্ক কমাতে বলেছে। কাতার ইরান আগস্ট মাসে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনপ্রতিষ্ঠা করে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Related articles

যাত্রাবাড়ীতে ১৫১ বোতল বিদেশি মদ ও ট্রাকসহ এক মাদক কারবারিকে গ্রেফতার করেছে ডিবি-রমনা

স্থানীয় প্রতিনিধি রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে ১৫১ বোতল বিদেশি মদ ও মদ পরিবহনে ব্যবহৃত ট্রাকসহ এক মাদক কারবারিকে গ্রেফতার...

ডিসি হিলে ঐতিহ্যবাহী নববর্ষের অনুষ্ঠানের প্রস্তুতিকালে হামলা এবং ভাঙচুর,নববর্ষের অনুষ্ঠান বাতিল

স্থানীয় প্রতিনিধি চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালী থানার ডিসি হিলে ঐতিহ্যবাহী নববর্ষের অনুষ্ঠানের প্রস্তুতিকালে হামলা এবং ভাঙচুরের ঘটনায় আগামীকালকের নববর্ষের অনুষ্ঠান...

অভিনেত্রী মেঘনা আলমকে ডিটেনশন আইনে ৩০ দিনের জন্য কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত

সময় ডেস্ক  মিস আর্থ বাংলাদেশ ২০২০-এর বিজয়ী অভিনেত্রী মেঘনা আলমকে ডিটেনশন আইনে ৩০ দিনের জন্য কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার...

কে এই আশিক চৌধুরী

সময় ডেস্ক  পাইলট পরিবারের সন্তান আশিক চৌধুরী। পেশায় ব্যাংকার হলেও রপ্ত করেছেন বিমান চালানো। অন্তত অর্ধশত বার ঝাঁপ দেন...