রুশ বিপ্লবের শতবর্ষে এসে বিশ্বে সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের সফলতা কতটা তা নিয়ে নানা বিশ্লেষণ হচ্ছে।
১৯১৭ সালের ৭ই নভেম্বর (তৎকালীন চালু বর্ষপঞ্জী অনুযায়ী ২৫শে অক্টোবর) লেনিনের নেতৃত্বে রাশিয়ায় বলশেভিক বিপ্লবের মধ্য দিয়ে জার শাসনের অবসান এবং সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়নের উত্থান হয়।
বিংশ শতকের ইতিহাসে যুগান্তকারী এ বিপ্লবের শতবর্ষে দেখা যায় সেই রাশিয়াতেই সমাজতন্ত্রের পতন হয়েছে আরও প্রায় তিন দশক আগে।
যদিও সোভিয়েত ইউনিয়নের উত্থানের পর সমাজতন্ত্রে আকৃষ্ট হয়েছিল পূর্ব ইউরোপ, লাতিন আমেরিকাসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে কিউবা, উত্তর কোরিয়া, চীন, লাওস আর ভিয়েতনামের মতো গুটিকয়েক দেশেই কেবল সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা টিকে আছে।
বাংলাদেশে অক্টোবর বিপ্লবের শতবর্ষ উদযাপন কমিটির আহবায়ক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী এ পরিস্থিতিকে পুঁজিবাদের সাফল্য হিসেবেই দেখেন। বাংলাদেশে অক্টোবর বিপ্লবের শতবর্ষ উদযাপন কমিটির আহবায়ক অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
তিনি বলেন, “একশো’ বছর পরে আমরা যেটা বুঝতে পারছি যে পুঁজিবাদের দৌরাত্ব আরও বাড়লো। পুঁজিবাদ ছড়িয়ে গেলো। পুঁজিবাদ মনে করলো যে তাদের জয় হয়ে গেছে। ইতিহাস পৌঁছে গেছে তার চরম পরিণতিতে।”
“কিন্তু তারপরে যেটা হচ্ছে, পুঁজিবাদের নিজের মধ্যেই কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বিতা আছে। ভেতরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা আছে। বাইরে একটা দেশের সঙ্গে আরেকটা দেশের প্রতিদ্বন্দ্বিতা আছে। গণতন্ত্র বলতে যা বোঝাচ্ছে সে গণতন্ত্র কাজ করছে না।”
মি. চৌধুরী বলেন, “এইটা আমি দেখবো যে পুঁজিবাদের সফলতা। এখানকার (সমাজতন্ত্রের) ভেতরের নেতৃত্বের দুর্বলতা দেখবো। কিন্তু সমাজতন্ত্রের দুর্বলতা আমি মনে করি না। কেননা সমাজতন্ত্র হচ্ছে সামাজিক মালিকানা। আর একটা বিষয় খুবই পরিষ্কার সেটা হলো পুঁজিবাদ বিশ্বাস করে মুনাফাতে, আর সমাজতন্ত্র বিশ্বাস করে মনুষ্যত্বে। এই দুটো সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়।”
সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার উদ্দেশ্য শোষনহীণ, শ্রেণিহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা। কিন্তু এ ব্যবস্থা ছেড়ে দেশে দেশে কেন পুঁজিবাদী ব্যবস্থা মানুষকে আকৃষ্ট করলো?
এ প্রসঙ্গে রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলেন, “সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা কঠিনভাবে মানুষের ব্যক্তিগত জীবনটাকে কন্ট্রোল করে। আমি কোন স্কুলে যাব কোথায় পড়বো সেটাও রাষ্ট্র ঠিক করে দেবে। আমার তো সেই ফ্রিডমটা নাই।”সমাজতন্ত্রের দুর্বল দিক তুলে ধরে দিলারা চৌধুরী বলেন, “মানুষ নিজের জন্য বাঁচে। এবং নিজে বাঁচার জন্য প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে। এখানে সমাজতন্ত্রে উল্টা বলা হয়েছে। বলা হয়েছ প্রতিষ্ঠানের জন্য তুমি থাকবে। মানে রাষ্ট্রের জন্য তুমি সব বিকিয়ে দেবে। এটা সম্ভব নয়।”
পুঁজিবাদের সংকট সামনে এনে বামপন্থীরা সর্বদা সমাজ পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখেন এবং মানুষকে দেখান।
কিন্তু বাস্তবতা হলো সারা বিশ্বে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের একে একে পতন হয়েছে আর বাংলাদেশেও সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন সফল হয়নি।
বিশ্বে সমাজতন্ত্রের এ পরিণতি সামনে এলেও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি বা সিপিবি’র সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম মনে করেন, “সোভিয়েত ইউনিয়নের অবলুপ্তি হলেও সমাজতন্ত্রের সংগ্রামের কিন্তু কোনও অবলুপ্তি হয় নাই।”
“সেটা মানবমুক্তির লড়াইয়ের ধারায় অগ্রসর হচ্ছে দেশে দেশে।”