‘আমি চাই আমার মৃত্যু যেন বার্তা কক্ষেই হয়’

Date:

Share post:

গোলাম সারওয়ার কয়েক দশক ধরে অনেকগুলো সংবাদপত্রের সাথে জড়িত থাকার পর এখন দৈনিক সমকালের সম্পাদক। ষাটের দশকের শুরুতে দৈনিক পয়গামের মাধ্যমে কাজ শুরু করলেও পরে দীর্ঘ প্রায় ২৭ বছর কাজ করেছেন দৈনিক ইত্তেফাকে। অনেকেই মনে করেন তিনি বাংলাদেশের সাংবাদিকতা জগতে ‘সেরা বার্তা সম্পাদক’।

১৯৪৩ সালে বরিশালের বানারীপাড়ায় জন্মগ্রহণের পর স্কুল কলেজের শিক্ষাজীবন শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন গোলাম সারওয়ার।

বিবিসিকে তিনি বলেন, “বানারীপাড়া সবুজে ঘেরা একটি গ্রাম।সাংবাদিকতা ও সাহিত্যের দিক থেকে প্রসিদ্ধ একটি এলাকা। ছোট বেলা থেকে পড়াশোনা, পত্রিকার দিকে ঝোঁক।ছড়া লিখতাম। ষাটের দশকে খেলাঘর করেছি, ছাত্র ইউনিয়নে ছিলাম। প্রচুর ছড়া লিখেছি। অনেকে বলে দু বাংলার শ্রেষ্ঠ ছড়াতেও আমার দু একটি ছড়া সংকলিত হয়েছে”।

কিন্তু পত্রিকার দিকে মনোযোগ এলো কি করে ?

জবাবে বাংলা দৈনিক যুগান্তর ও সমকালের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক গোলাম সারওয়ার: “সৈনিক নামে একটি পত্রিকা ছিলো। বাংলা ভাষায় মুখপাত্র ছিলো। সৈয়দ মুস্তফা জামান আমার বাসার কাছেই থাকতেন। উনি আমাকে সৈনিকে নিয়ে যান। তখন থেকে সাংবাদিকতার দিকে ঝোঁক, এটা ৬২ সালের দিকের ঘটনা”।

“তবে পেশা হিসেবে নেই পয়গাম পত্রিকা থেকে। এর আগে স্কুল জীবন শেষ করে চাখার কলেজে ভর্তি হলাম। আব্বা আমাকে কমার্সে ভর্তি করালেন কিন্তু আমার আগ্রহ সাহিত্যে। আব্বার অগোচরে বাংলা পড়া শুর করলাম। ইন্টারমিডিয়েটে সারা পূর্ব পাকিস্তানে বাংলায় সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছিলাম। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্টারভিউর সময়ে আব্দুল হাই স্যার বললেন তোমাকে ইন্টারভিউ নেয়ার জন্য ডাকিনি, ডেকেছি তোমাকে দেখার জন্য কারণ গ্রামের কলেজ থেকে কিভাবে বাংলায় এতো নম্বর পেলে?”

পেশাগত জীবনের সূচনালগ্নের বিবরণ দিয়ে তিনি বলেন, “বাংলা পড়লাম আগ্রহের কারণে আর পেশায় এলাম পয়গাম দিয়েই। ১২৫ টাকা বেতনে পয়গাম পত্রিকায় চাকরী হলো ১৯৬১ সালে। সেটাই শুরু। শহীদুল্লাহ কায়সার শুনে বললেন তুমি খেলাঘর করো আর মোনায়েম খানের পত্রিকায় চাকুরী করছো? তুমি কালই সংবাদে যোগ দাও। সংবাদে চলে আসলাম ২০০ টাকা বেতনে ১৯৬২ সালে। তবে চাকুরী জীবনের সোনালী দিন কেটেছে দৈনিক ইত্তেফাকে”।

মুক্তিযুদ্ধের সময় নিজ এলাকায় মুক্তিযুদ্ধে সম্পৃক্ত হন গোলাম সারওয়ার। পরে যুদ্ধ শেষে ৭২ সালে যোগ দেন ইত্তেফাকে। তবে সংবাদে ক্রিকেট নিয়ে রিপোর্টিংও করেছেন।

“নিজের অজান্তেই সম্পাদনার সাথে যুক্ত হয়েছি। এডিটিংর দিকেই আমার মনোযোগ ছিলো। সামান্য ভুল হলেই আমি ইমোশনাল হয়ে যাই”।

আপনাকে কেন অনেকে বাংলাদেশের ‘সেরা বার্তা সম্পাদক’ বলেন?

জবাবে গোলাম সারওয়ার বলেন, “প্রয়াত শ্রদ্ধেয় মুসা ভাই বলতেন বাংলাদেশে একজন বার্তা সম্পাদক আর সেটা গোলাম সারওয়ার। সম্পাদক হিসেবে কতখানি ভালো জানিনা কিন্তু বার্তা সম্পাদক হিসেবে তুলনা হয়না। এটা আমার ইন্সটিংকট। আমি কপি ধরলে রিপোর্টার সতর্ক থাকে। অনেক সময় ছোটোখাটো ভুলে হৈ চৈ করি। নিউজের ব্যাপারে আমার খুঁতখুঁতে স্বভাব। বার্তা কক্ষের প্রতিটি বিষয়ের প্রতি আমার আগ্রহ থাকে। আসলে বার্তা সম্পাদক হিসেবেই আমি কাজটা ভালো করি”।দৈনিক সমকালে নিজ কার্যালয়ে সম্পাদক গোলাম সারওয়ার

২৭ বছর ইত্তেফাকে থেকে যুগান্তর প্রতিষ্ঠার পর পত্রিকাটি জনপ্রিয়তা পেলেও আপনি কেন পরে থাকেননি বা থাকতে পারেননি- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “সম্পাদক হওয়ার চ্যালেঞ্জ থেকেই যুগান্তর প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। যতদিন আমার সম্পাদকীয় কাজে হস্তক্ষেপ হয়নি ততদিন আমি কাজ করেছি”।

আদালতে আপনাকে দীর্ঘ সময় দাঁড় করিয়ে রাখার একটি ঘটনার পর আপনি সম্পাদকের ‘জবানবন্দী শিরোনামে’ একটি লেখা লিখেছিলেন যা ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছিলো—কি হয়েছিলো সেখানে ?

জবাবে গোলাম সারওয়ার বলেন, “যুগান্তরে একটি লেখা ছাপা হয়েছিলো যাতে আদালত সম্পর্কে কিছু কথা ছিলো। পরে আদালত আমাকে ও প্রকাশককে ডেকে আপত্তিকর ভাষায় কথা বললো এবং আমাকে তিন মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছিলো। সাথে সাথ অ্যাটর্নি জেনারেলসহ সবাই ছুটে আসলেন। একপর্যায় আদালত নিজেই তার রায় বাতিল করলেন। পরে এসে আমি ‘সম্পাদকের জবানবন্দী’ লিখলাম। তার আগে প্রকাশককে বলেছিলাম যে এটা লিখলে আমার ছয় মাসের জেলও হতে পারে। তিনি তারপরেও রাজী হলেন লেখাটি ছাপতে”।

কিন্তু আপনার লেখায় দলীয় আনুগত্যের প্রকাশ পায় এমন অভিযোগও রয়েছে- এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে গোলাম সারওয়ার বলেন, “আপনি আওয়ামী লীগের কথা বলছেন। আমি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস। বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে বাংলাদেশ হতোনা। আমি আওয়ামী লীগের সদস্য নই। আমার মধ্যে দলীয় আনুগত্য আছে কিন্তু আমি চেষ্টা করি সমকালকে নিরপেক্ষ পত্রিকা হিসেবে পরিচালনা করার জন্য”।

আপনার বয়স এখন ৭৩ বছর, বাংলাদেশের রাজনীতি এবং সাংবাদিকতা থেকে অবসর নেয়ার রেওয়াজ নেই, আপনার চিন্তা কি?

জবাবে সাংবাদিকতায় অবদানের জন্য একুশে পদক পাওয়া গোলাম সারওয়ার বলেন, “আমি ঠাট্টা করে বলি যে এটা অভিশপ্ত পেশা। সব পেশায় অবসরের নিয়ম আছে আমাদের নেই। আমার মনে হয় যতদিন কর্মক্ষম আছি, অনেক সময় ইমোশনালি বলি আমি চাই আমার মৃত্যু বার্তা কক্ষেই হোক”।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Related articles

আবারো এস আলমে আগুন 

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী এলাকায় এস আলম গ্রুপের চিনির গুদামের পর এবার তেলের মিলে আগুন লেগেছে। ফায়ার সার্ভিসের ৮টি ইউনিটের...

জিম্মি নাবিকদের উদ্ধার চেষ্টার সময় গুলি বিনিময়

সময় ডেস্ক সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর নাবিকদের উদ্ধারে অভিযান চালিয়েছে অন্য একটি জাহাজ। দুই...

শেষ ম্যাচে ভুটানকে উড়িয়ে দিলো বাংলাদেশ

সময় স্পোর্টস ডেস্ক সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল আগেই নিশ্চিত করেছিলো বাংলাদেশের মেয়েরা। ১০ মার্চ ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে মাঠে...

নারী দিবসে নারী কর্মীদের সম্মান জানিয়ে এবারই প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করছেন নারী কর্মীরা

সময় ডেস্ক আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আজ শুক্রবার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট পরিচালনা করেছেন নারীরা। রাজধানীর শাহজালাল...