‘এবার বন্যা সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে’

Date:

Share post:

বগুড়ায় বন্যার্তরা টিনের চালা খুলে য়ে নিরাপদ আ্রয়ের খোঁজে। ঘ কবে ফিরতে পারবেন জানেননা এই মানুষেরা।

বাংলাদেশের কুড়িটির ওপর জেলায় এখন বন্যার কবলে। সরকারি হিসেবে চয়টি জেলায় মৃতের সংখ্যা ৩২ জন কিন্তু নিখোঁজ অনেক মানুষ।

সরকার ছয় লাখের মত মানুষ তিগ্রস্ত বললেও, বিভিন্ন জেলায় খোঁজ-খবর নিয়ে জানা যাচ্ছে মোট ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ১৫ লাখ ছাড়িয়ে গেছে এরমাঝে।

বিভিন্ন এলাকায় স্কুল কলেজ মাদ্রাসায় আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে হাজার খানেক, যেগুলোতে এখন আর মানুষের ধারণক্ষমতাও নেই। বানের জল ধেয়ে যাচ্ছে আরও নতুন এলাকার দিকে। খোদ কর্মকর্তারাই বলছেন, এবারের বন্যার ভয়াবহতা এর আগের বন্যাগুলোকে ছাড়িয়ে গেছে।

কুড়িগ্রামের সদর উপজেলার বাসিন্দা বাসন্তী রানী তার পুরো পরিবার নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন হেলি-প্যাডে। কাছাকাছি আশ্রয় কেন্দ্রে এখন আর লোক ধারণের জায়গা নেই। তাই তিনদিন ধরে এভাবে হেলি-প্যাডের উঁচু জায়গায় কোনোরকমে দিন কাটাচ্ছে।

“আমার ঘরে এক-বুক পানি। আমি আমার ছেলে-মেয়ে, স্বামীসহ তিনদিন ধরে এভাবে আছি। সাঁতরে আসছি। কোনোরকমে ছোট ছেলেকে এই দোকান থেকে কোনোমতে রুটি কিনে খাওয়াইছি”।

তার মত অনেকের পরিবার এখন এভাবে যে যেখানে পারছেন উঁচু জায়গায় গিয়ে আশ্রয় নিচ্ছেন। পানি বাড়ছেই। ডুবে গেছে ঘর-বাড়ি-স্কুল। কুড়িগ্রামের চিলমারী থেকে তোলা ছবি।

সরকারি হিসেবে বন্যায় দেশের বিভিন্ন এলাকায় মারা গেছে এ পর্যন্ত ৩২ জন। সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছে দিনাজপুর জেলাতে।

কর্মকর্তারা বলছেন পানিতে ডুবে এবং সাপের কামড়েও মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।

দিনাজপুর জেলা শাসক মীর খায়রুল আলম বিবিসি বাংলাকে বলেন, সেখানে সেনাবাহিনীর সাহায্য নিয়ে উদ্ধার কাজ শুরু হয়েছে।

তিনি জানান, “৩৫৯টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলেছি। এগুলোতে ১ লাখ ৭১০০০-এর বেশি মানুষকে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত ১৪ জন মারা গেছে। দূরবর্তী এলাকায় যারা পানি-বন্দী তাদের সেনাবাহিনীর সহায়তায় উদ্ধার করা হচ্ছে”।

সবচেয়ে অনিরাপদ স্থায় রয়েছে শিশু নারী ও বয়স্করা।

কিন্তু জুলাই মাসে একদফা বন্যার পর আগস্ট মাসের শেষে যে আবার বন্যা হতে পারে সে ধরনের আশঙ্কা ছিল। জামালপুরের বন্যার্ত মানুষেরা ছুটছেন নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে।

তারপরও তা মোকাবেলায় প্রস্তুতি কতটা নিয়েছিল এসব এলাকার প্রশাসন? জানতে চাইলে কর্মকর্তারা বলছেন, সব ধরনের প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও এবারের বন্যার ভয়াবহতা এর আগের বন্যাগুলোকে ছাড়িয়ে গেছে।

লালমনিরহাট জেলার ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো: সুজাউদ্দৌলা বিবিসি বাংলাকে বলেন, “এবারের বন্যাটা ৮৮র বন্যাকে কিন্তু ছাপিয়ে গেছে।আগে যাদের বাসায় পানি ওঠেনি তাদের বাসাতেও এবার পানি উঠে মোটামুটি তারা পানি-বন্দী হয়ে গেছে। এবারের বন্যা মোটামুটি সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে”।

তিনি জানান, জেলায় ১০৮টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। সেখানে প্রায় ত্রিশ হাজার মানুষ রয়েছে। এছাড়া দুই আড়াই হাজার গবাদি পশুকে নিরাপদে নিয়ে আসা হয়েছে। কুড়িগ্রামে বন্যার কবল থেকে জিনিসপত্র রক্ষার শেষ চেষ্টা।

তবে এই কর্মকর্তা জানান, গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি ফেলে রেখে অনেকেই প্রাথমিকভাবে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে চায়না। একেবারে শেষমুহুর্তে পানির তীব্রতা দেখে ঘর ছাড়ছেন। ফলে অতিরিক্ত পানির স্রোতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে বিভিন্ন এলাকায়, জানান মি. সুজাউদ্দৌলা

“মানুষেরও একটা স্যা আছে। শুরু থেকেই আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে চায় না-এটা আমাদের অ্যাসেসমেন্ট। পানির প্রবাহটা দেখে যেতে চায়”।

আরকেটি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত জেলা কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক আবু সালেহ ফেরদৌস খান জানান, জেলার তিনশো আশ্রয়কেন্দ্রে ১৪ হাজারের ওপর মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।

কুড়িগ্রামের পানি উন্নয়ন বোর্ডর কর্মকর্তারা বলছেন, নদীর পানি এবার স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি ১৩৪ সে.মি. বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

ধরলা নদীর ওপর নির্মিত বাঁধে রাজারহাট উপজেলা ও সদর উপজেলায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। কুড়িগ্রামের পানি উন্নয়ন বোর্ডরে উপ সহকারি মো: আসাদুজ্জামান বিবিসিকে বলেন,পুরো বাঁধেই ইঁদুরের গর্ত তৈরি হয়েছে, ফলে বাঁধ এমনিতেই দুর্বল হয়ে পড়েছে। তার ওপর দীর্ঘদিন বাধের বা সংস্কার করা হয়নি।

তিনি জানান, ১৯৯৮-২০০০ এর পর বাঁধের কোনও কাজ করা হয় না।জামালপুরে বন্যায় ডুবে গেছে স্কুলঘর।

এদিকে দেশের বিভিন্ন পয়েন্টে নদীর পানি বিপদসীমার অনেক ওপরে বইছে। নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে ।

বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, যমুনা নদী ঘেঁষা এলাকাগুলোতে নদীর পানি বাড়বে ফলে উত্তরাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যেতে পারে।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সোমবার ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনে করে ত্রাণ মন্ত্রী জানান, মধ্যাঞ্চল দিয়ে যখন বন্যার পানি নেমে যাবে তখন প্লাবিত হতে পারে ঢাকার বিভিন্ন এলাকাও। মন্ত্রী বলেন, দেশের ৩৩টি এলাকায় ত্রাণ সামগ্রী পাঠানো হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের করা হয়েছে। এছাড়া এই দুর্যোগ একমাস চলতে পারে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

তবে মন্ত্রী ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের যে খতিয়ান দিয়েছেন তার তুলনায় প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তের সংখ্যা অনেক বেশি বলে স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে জানা গেছে।

গত জুলাই মাসে বন্যার পর বরাদ্দ পাওয়া ত্রাণ সামগ্রী থাকায় ত্রাণ নিয়ে সঙ্কটের আশঙ্কা নেই বলে উল্লেখ করছেন অনেক এলাকার কর্মকর্তারা। তবে স্থানীয়ভাবে দুর্গত মানুষদেরকে উদ্ধার এবং এত মানুষকে জায়গা দিয়ে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার বিষয়টিই এখন প্রধান সংকট হয়ে দেখা দিয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Related articles

চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠতায় শঙ্কিত ভারত!

চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান ঘনিষ্ঠতা শঙ্কিত করে তুলছে ভারতকে। এমনই আভাস মিলেছে ভারতের প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান...

আওয়ামী লীগকে ফেলে দেওয়ার জন্য যা দরকার ছিল, সব করেছি: সিবগাতুল্লাহ

ছাত্ররাজনীতির ভেতর থেকে উঠে আসা এক সক্রিয় সংগঠকের কণ্ঠস্বর সিবগাতুল্লাহ সিবগা। তিনি বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার...

রাতের অন্ধকারে ভারতে ঢুকে গ্রেপ্তার সাবেক স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা

গোপনে রাতের অন্ধকারে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ঢুকে গ্রেপ্তার হয়েছেন পাবনা জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক...

আরবিতে ইসরায়েলের জাতীয় সংগীত গেয়ে বরখাস্ত মসজিদের ইমাম

ইউরোপের বিভিন্ন মসজিদ থেকে সম্প্রতি ১৫ জন ইমাম ইসরায়েলে গিয়ে দেখা করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট আইজাক হারজগের সঙ্গে। সেখানে...