বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় নীরব থাকায় দুঃখপ্রকাশ করলেন সাকিব আল হাসান। রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়া ও সংসদ সদস্য হতে আগ্রহী হওয়ার কারণও ব্যাখ্যা করলেন বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার। বিদায়ী টেস্ট খেলতে বাংলাদেশে আসার কথা জানিয়ে অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডার শেষ ম্যাচে পাশে চাইলেন ভক্ত-সমর্থকদের।
বুধবার রাতে ফেইসবুকে দীর্ঘ বার্তায় নিজের অবস্থান তুলে ধরেন ৩৭ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার।
যে ছাত্র আন্দোলন দেশব্যাপী ছড়িয়ে গণআন্দোলনের রূপ নিয়ে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটায়, সেই সময়টায় সাকিব আল হাসান ও মাশরাফি বিন মুর্তজার নীরব ভূমিকা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ও দেশজুড়ে প্রবল সমালোচনা হয়। দুজনই আওয়ামী রীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। মাশরাফি পরে সাক্ষাৎকারে সরাসরিই বলেন, মানুষের প্রত্যাশা পূরণে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন।
দেশে রাজনৈতিক পালাবদলের দুই মাসের বেশি সময় পর অবশেষে নিজের ভূমিকার জন্য দুঃখপ্রকাশ করলেন সাকিব।
“শুরুতেই আমি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি সে সকল আত্মত্যাগকারী ছাত্রদের, যারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শহীদ হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন। তাদের প্রতি এবং তাদের পরিবারের প্রতি আমার অন্তরের অন্তস্থল থেকে শ্রদ্ধা এবং সমবেদনা। যদিও স্বজনহারা পরিবারের ত্যাগকে কোন কিছুর বিনিময়ে পূরণ করা সম্ভব না। সন্তান হারানো কিংবা ভাই হারানোর বেদনা কোন কিছুতেই পূরণযোগ্য নয়।
“এই সংকটকালীন সময়টাতে আমার সরব উপস্থিতি না থাকায় আপনারা যারা ব্যথিত হয়েছেন বা কষ্ট পেয়েছেন তাদের অনুভূতির জায়গাটার প্রতি আমার শ্রদ্ধা এবং এজন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। আপনাদের জায়গায় আমি থাকলে হয়তো এভাবে মনঃক্ষুণ্ন হতাম।”
সাকিবকে নিয়ে গত কিছুদিনে মূল আলোচনা ছিল তার বিদায় টেস্ট ঘিরে। সম্প্রতি ভারত সফরে দ্বিতীয় টেস্টের আগে কানপুরে তিনি ঘোষণা দেন, দেশের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট দিয়ে এই সংস্করণকে বিদায় জানাতে চান তিনি।
কিন্তু তার দেশে ফেরা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েই যায় তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হওয়ায়। আদাবরে গার্মেন্টসকর্মী রুবেল হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ১৫৬ জন আসামির মধ্যে ২৮ নম্বরে আছে তার নাম।
বিদায়ী টেস্ট খেলতে সাকিবের দেশে ফেরা প্রসঙ্গে কড়া মন্তব্য করে বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ জানান, সাকিবের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা বোর্ড দিতে পারবে না। পরে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, সাকিবকে দেশের একজন খেলোয়াড় হিসেবে নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব হলেও জনগণের ক্ষোভ থাকলে সেই নিশ্চয়তা দেওয়া ‘সম্ভব নয়।’ রাজনৈতিকভাবে সাকিবকে অবস্থান স্পষ্ট করার আহবানও জানান তিনি।
এবার ফেইসবুক বার্তায় রাজনীতিতে আসার কারণ ব্যাখা করলেন সাকিব।
“আমি খুবই স্বল্প সময়ের জন্য মাগুরা-১ আসনের সংসদ সদস্য ছিলাম। আমার রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হওয়াটা ছিল মূলত আমার জন্মস্থান অর্থাৎ আমার মাগুরার মানুষের উন্নয়নের জন্য সুযোগ পাওয়া। আপনারা জানেন যে, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নির্দিষ্ট কোন দায়িত্ব ছাড়া নিজের এলাকার উন্নয়নে সরাসরি ভূমিকা রাখাটা একটু কঠিন। আর আমার এই এলাকার উন্নয়ন করতে চাওয়া আমাকে সংসদ সদস্য হতে আগ্রহী করে।”
সরকার পতনের পর সংসদ সদস্য হিসেবে সাকিবের অধ্যায়ও শেষ। এখন নিজের ক্রিকেটার পরিচয়কেই বড় করে দেখছেন চান তিনি।
“যাইহোক দিনশেষে আমার পরিচয় আমি একজন বাংলাদেশের ক্রিকেটার। আমি যখন যেখানে যে অবস্থাতেই থেকেছি অন্তর থেকে ক্রিকেটাকেই ধারণ করেছি। এই ক্রিকেটকে ধারণ করে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের সম্মান অর্জন করার পথে এগিয়ে নিয়ে গেছেন আপনারা।”