বংশগত রোগ দূর করতে জিন এডিটিং, মানুষের হাতই যখন চাবি

Date:

Share post:

বিজ্ঞানীরা এই মবারের মতো মানব ূণ থেকে একটি ত্রুটি্ণ ডিএনএ সরিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছেন। এই ডিএনএটির কারণে প্রাণঘাতী একটি হৃদরোগ পরিবারের সদস্যদের মধ্যে একজনের কাছ থেকে আরেকজনের শরীরে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে প্রবাহিত হচ্ছে।

বিজ্ঞানীরা বছেন, চিকিৎসা বিজ্ঞানের এই অগ্রগতির ফলে এরকম বংশ পরম্পরায় চলে আসা ১০ হাজারেরও বেশি ত্রুটি বা ্থ্য সমস্যা সংশোধন করার দরজা খুলে গেলো।

বলা হচ্ছে, এর মধ্য দিয়ে ওষুধের ভবিষ্যৎ যেমন বদলে যেতে পারে, তেমনি প্রশ্ন উঠতে পারে এর নৈতিকতা নিয়েও।

যুক্ত ও দক্ষিণ কোরিয়ার বিজ্ঞানীদের একটি দল মানব ভ্রূণের ওপর এই গবেষণাটি চালিয়েছেন।

যে প্রক্রিয়ায় ভ্রূণ থেকে ত্রুটিপূর্ণ ডিএনএটি দূর করা হয়েছে এই এডিটিং এর প্রযুক্তিকে বলা হয় ক্রিসপার।

চিকিৎসা বিজ্ঞানে এর ব্যবহার অত্যন্ত ব্যাপক এবং এর মাধ্যমে জেনেটিক ত্রুটি সংশোধনের মাধ্যমে সিসটিক ফিব্রোসিস থেকে শুরু করে স্তন ক্যান্সারের মতো রোগও করা সম্ভব। জিন এডিটিং এর এই প্রযুক্তিকে বলা হয় ক্রিসপার

এই গবেষণায় বিজ্ঞানীরা হাইপারট্রফিক কার্ডিওমাইওপ্যাথি নিয়ে কাজ করেছেন। এই হৃদরোগটি খুবই কমন, অনেকের শরীরেই এটি দেখা যায়।

এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, প্রত্যেক পাঁচশো জনের মধ্যে একজন এই হৃদরোগে আক্রান্ত হন। এই রোগে হৃদযন্ত্র হঠাৎ করেই অচল হয়ে যেতে পারে।

ডিএনএতে থাকা একক একটি জিনের ত্রুটির কারণে এই রোগ হতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তির শরীর থেকে তার সন্তানের শরীরে এই রোগটি যাওয়ার সম্ভাাও ৫০ শতাংশ।

হাইপারট্রফিক কার্ডিওমাইওপ্যাথি রোগে আক্রান্ত একজন পুরুষের শুক্রাণু প্রথমে একজন নারীর সুস্থ ডিম্বাণুর ভেতরে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। তারপর যখন ভ্রূণে পরিণত হতে থাকে তখনই ক্রিসপার প্রযুক্তির সাহায্যে সেখানকার জেনেটিক ত্রুটি সংশোধন করা হয়।

দেখা গেছে, প্রতিটি ক্ষেত্রে এটি সফল না হলেও ৭২ শতাংশ ভ্রূণকে এই ত্রুটি থেকে মুক্ত করা সম্ভব হয়েছে।

এই গবেষণায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন বিজ্ঞানী সুখরাত মিতালিপভ। তিনি বলেছেন, জিনের এই ত্রুটি একবার সংশোধন করার পর ত্রুটিমুক্ত সেই জিনটি পরবর্তী প্রজন্মের পর প্রজন্মের শরীরেও প্রবাহিত হবে।

এই কৌশল ব্যবহার করে এখন পরিবারের এবং মানবদেহের বংশগত বহু রোগের চিকিৎসা করা সম্ভব।জিন এডিটিং নিয়ে আছে নীতি ও নৈতিকতার প্রশ্ন

এখন বিজ্ঞানের এই অগ্রগতিকে সবচেয়ে বড়ো যে সমস্যার মুখে পড়তে হবে সেটা হলো নীতি ও নৈতিকতার প্রশ্ন। কথা হলো- ল্যাবরেটরিতে তৈরি একটি ভ্রূণের এরকম পরিবর্তন মানুষের করা উচিত কীনা।

কিন্তু এই প্রশ্নের উত্তর খুব একটা সোজাসাপ্টা নয়। কারণ শেষ পর্যন্ত যদি জীবন বাঁচানো সম্ভব হয়, তাহলে জিনের এই পরিবর্তন নীতিগতভাবে গ্রহণযোগ্য হবে না কেনো?

ইতোমধ্যে অনেকেই এই গবেষণার সমালোচনা করেছেন। তারা বলছেন, এর ফলে জিনগত পরিবর্তন ঘটিয়ে শিশু জন্ম দেওয়ার প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যেতে পারে। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে যে ধনী ব্যক্তিরাই এই চিকিৎসা নিতে পারবেন। ফলে তারাই বংশগতভাবে একের পর এক নিরোগ ও সুস্থ প্রজন্ম জন্ম দিতে পারবে।

অন্যদিকে, শুধু দরিদ্র মানুষেরাই বংশগত এসব অসুখ বিসুখে ভুগতে থাকবে।

এই বিষয়টি নিয়ে শুনুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের শিক্ষক ড. শরীফ আখতারুজ্জামানের ৎকার। শুনতে হলে উপরের অডিও লিঙ্কে ক্লিক করুন।

হাতই যখন চাবি

কখনো কি ভেবে দেখেছেন যে বন্ধ দরজার সামনে হাত মেলে ধরে ওই দরজা খুলে আপনি ঘরের ভেতরে ঢুকে পড়ছেন? কিম্বা স্টিয়ারিং-এ হাত ছুঁইয়ে দিয়ে স্টার্ট দিচ্ছেন গাড়ি?

এসবের জন্যে আপনার আর কোন চাবির দরকার হচ্ছে না। শুনতে সায়েন্স ফিকশনের মতো শোনালেও এটাকেই বাস্তব করেছেন বিজ্ঞানীরা।

চাবি নিয়ে আমরা প্রায়শই ঝামেলায় পড়ি। কখনো হারিয়ে ফেলি। কিম্বা কোথায় রেখেছি হয়তো খুঁজেই পাই না। সেটা খুঁজতে গিয়ে সারা ঘর তছনছ করে ফেলি। এই চাবি নিয়ে আমাদের মানসিক চাপের মধ্যেও থাকতে হয়।

কিন্তু এখন আর এই চাবি নিয়ে খুব বেশি ভাবতে হবে না। একজন মানুষ নিজেই হয়ে উঠতে পারবেন নিজের ঘরের, অফিসের কিম্বা গাড়ির চাবি।

আর এটা সম্ভব হতে হাতের তালুতে ছোট্ট একটি মাইক্রোচিপ বসিয়ে দিলেই। বলা হচ্ছে, চাবি হারিয়ে ফেলার দিন শেষ হয়ে যাচ্ছে

ব্রিটিশ একজন বিজ্ঞানী স্টিফেন নরথ্যাম এই প্রযুক্তিটি উদ্ভাবন করেছেন। তিনি এখন অপেক্ষা করছেন মানুষের শরীরে অপারেশনের মাধ্যমে এই চিপ ঢুকিয়ে দেওয়ার অনুমতির জন্যে।

তিনি বলেন, “কুকুর বিড়ালের শরীরে এই মাইক্রোচিপ্সের ব্যবহার বহু বছর ধরেই চলছে। এখন আমরা এমন এক প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যাচ্ছি যে ধারণা করছি এই প্রযুক্তি এখন মানুষের শরীরেও ব্যবহার করতে পারবো।”

“এই অনুমতিটা পেয়ে গেলেই মানবদেহে চিপ বসানোর দরজাটা খুলে যাবে। তখন দরজা খোলা, গাড়ি স্টার্ট দেওয়া এসব নিয়ে চাবি সাথে রাখার ঝামেলাই আর থাকবে না।”

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এটা করা হবে কিভাবে?

“এই প্রক্রিয়াটি খুব সহজ। সময়ও লাগবে খুব কম। মাইক্রোচিপ বসানোর কাজটা করা হবে একজন ডাক্তারের মাধ্যমে। চেতনা-নাশক ওষুধের সাহায্যে প্রথমে হাতটাকে অবশ করা হবে। ফলে কোন ধরনের ব্যথা থাকবে না। এটা অনেকটা নাক ও কান ফুটানোর মতো।” হাত ছুঁয়ে দিলেই স্টার্ট নেবে গাড়ি, ফাইল ফটো

তিনি বলেন, “চিপটা হাতের চামড়ার নিচে ঢুকাতে সময় লাগবে মাত্র ৩০ সেকেন্ডের মতো।”

এখানে একটা ভয়ের ব্যাপার হয়তো থাকতে পারে। এই চিপ দিয়ে কি তাহলে মানুষটাকে অনুসরণ করা সম্ভব? বিজ্ঞানী স্টিফেন নর্থহ্যাম বলছেন, এটা সম্ভব নয়।

“কারণ চিপটি সম্পূর্ণ অচেতন বা জড় একটি পদার্থ। ফলে এর সাহায্যে কাউকে ট্র্যাক করা যাবে না।”

“অনেকেই আশঙ্কা করছেন, তাহলে কি এই হাত সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলে যেতে পারে। তারা চাইলে কি আমার হাত নাড়াতেও পারবে? না, সেরকম কিছু হবে না।”

“ওই চিপের মধ্যে থাকবে মৌলিক কিছু তথ্য। থাকবে চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যগত কিছু তথ্য, ওই ব্যক্তির ব্যক্তিগত তথ্য, ব্যাঙ্কের তথ্য ইত্যাদি। চাইলে আপনি আপনার হাতকে একটি ব্যাঙ্ক কার্ড হিসেবেও ব্যবহার করতে পারেন।”

বিজ্ঞানীরা বলছেন, ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ডে যে ধরনের প্রযুক্তি থাকে মানুষের হাতে বসানো মাইক্রোচিপটিতেও থাকবে ওই একই প্রযুক্তি। ফলে ানে গিয়ে মেশিনে শুধু হাত ছুঁইয়ে দিয়েই আপনি মূল্য পরিশোধ করতে পারবেন।

বিজ্ঞানের আসর পরিবেশন করেছেন মিজানুর রহমান খান:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Related articles

যাত্রাবাড়ীতে ১৫১ বোতল বিদেশি মদ ও ট্রাকসহ এক মাদক কারবারিকে গ্রেফতার করেছে ডিবি-রমনা

স্থানীয় প্রতিনিধি রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে ১৫১ বোতল বিদেশি মদ ও মদ পরিবহনে ব্যবহৃত ট্রাকসহ এক মাদক কারবারিকে গ্রেফতার...

ডিসি হিলে ঐতিহ্যবাহী নববর্ষের অনুষ্ঠানের প্রস্তুতিকালে হামলা এবং ভাঙচুর,নববর্ষের অনুষ্ঠান বাতিল

স্থানীয় প্রতিনিধি চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালী থানার ডিসি হিলে ঐতিহ্যবাহী নববর্ষের অনুষ্ঠানের প্রস্তুতিকালে হামলা এবং ভাঙচুরের ঘটনায় আগামীকালকের নববর্ষের অনুষ্ঠান...

অভিনেত্রী মেঘনা আলমকে ডিটেনশন আইনে ৩০ দিনের জন্য কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত

সময় ডেস্ক  মিস আর্থ বাংলাদেশ ২০২০-এর বিজয়ী অভিনেত্রী মেঘনা আলমকে ডিটেনশন আইনে ৩০ দিনের জন্য কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার...

কে এই আশিক চৌধুরী

সময় ডেস্ক  পাইলট পরিবারের সন্তান আশিক চৌধুরী। পেশায় ব্যাংকার হলেও রপ্ত করেছেন বিমান চালানো। অন্তত অর্ধশত বার ঝাঁপ দেন...