সোভিয়েত যুগে লাইভ টিভিতে যৌনতা শব্দটি ব্যবহার করে বিপাকে এক নারী

Date:

Share post:

আশির দশকের শেষার্ধে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন তাদের পেরেস্ত্রোইকা অর্থাৎ উদারীকরণ বা খোলামেলা নীতি শুরু করেছিলো। শুরু হয়েছিল সোভিয়েত এবং মার্কিনী জনগণের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ ঘটানোর প্রয়াস।

১৯৮৬ সালের জুন মাসে দুই দেশের কজন নারীর মধ্যে সরাসরি ভিডিও লিঙ্কের মাধ্যমে এক সংলাপের আয়োজন করা হয়েছিল যা দুই দেশেই সম্প্রচার করা হয়। লেনিনগ্রাদ এবং বস্টনের দুই টিভি স্টুডিওতে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপন করে ঐ সংলাপ হয়েছিল। সেই অনুষ্ঠানের সাথে জড়িত দুজন তাদের অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন বিবিসিকে

পরীক্ষামুলক ঐ অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য ছিল – একেবারে ভিন্ন দুটি রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সামাজিক পরিবেশে বসবাসকারী নারীদের মধ্যে একটা যোগাযোগ স্থাপন। লেনিনগ্রাদের টিভি স্টুডিওতে ছিলেন দুশর মত নারী, যাদের অধিকাংশই কোনদিনই বিদেশে যাননি, এমনকি কোনো বিদেশীর সাথে কোনোদিন তাদের দেখা হয়নি। তাদের আনা হয়েছিলো অনুবাদকের মাধ্যমে বস্টনের স্টুডিওতে জমায়েত আমেরিকান নারীদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য এবং প্রশ্ন করার জন্য। চার ঘণ্টা ধরে রেকর্ডিং হয়েছিলো সেদিন।

অনুষ্ঠান শুরুর পর থেকেই দুই স্টুডিওতে হাজির মহিলাদের মধ্যে সাংস্কৃতিক ব্যবধান ক্রমশ স্পষ্ট হতে শুরু করে। সেই সাথে বাড়তে থাকে অস্বস্তি, উত্তেজনা। অনুষ্ঠান চলাকালে হঠাৎ করে আমেরিকান এক মহিলার এক প্রশ্নে সোভিয়েত দর্শকরা হতচকিত হয়ে পড়ে।

আমেরিকান ঐ নারী প্রশ্ন ছুড়ে দেন -তাদের দেশে বিভিন্ন টিভি বিজ্ঞাপনে যৌনতা ব্যবহার করা হয়। সোভিয়েত টিভিতেও কি সেই সমস্যা রয়েছে?

এই প্রশ্নে লুদমিলা ইভানোভা নমে এক সোভিয়েত নারী যে উত্তর দিয়েছিলেন সেদিন — তা নিয়ে গত কয়েক দশক ধরে চর্চা হয়েছে রাশিয়ায়।

উত্তরে লুদমিলা বলেছিলেন, “আমাদের এখানে কোনো যৌনতা নেই, আমরা যৌনতার ঘোর বিরোধী।” আসলে তিনি বলতে চেয়েছিলেন টিভি বিজ্ঞাপনে যৌনতা নেই । কিন্তু তার মুখ দিয়ে যা উচ্চারিত হয়েছিল সেদিন তা নিয়ে তুমুল পড়ে যান ঐ নারী।

লুদমিলার সেই উত্তর যে – আমাদের দেশে কোনো যৌনতা নেই এবং আমরা যৌনতার বিরোধী – এই কথা মানুষের মুখে মুখে ঘুরতে শুরু করে। সোভিয়েত প্রোপাগান্ডা বা প্রচারণা যে কতটা গভীরে প্রোথিত ছিলো তখন, লুদমিলার ঐ এক বাক্যের উত্তরের ভেতর তার প্রতিফলন দেখতে শুরু করেন লোকজন।

“আমি ভয়ে জড়সড় হয়ে পড়েছিলাম। আমি বুঝতে পারছিলাম যে আমি ভুল কিছু বলে ফেলছি, এবং তার ঝাল সহ্য করতে হবে আমাকে। এবং পরিণতি আমাকে সত্যিই ভোগ করতে হয়েছিলো।”

উপস্থাপক ভ্লাদিমির পোসনার ভয় পেয়েছিলেন যৌনতা শব্দটি এভাবে প্রকাশ্যে উচ্চারণ কারার জন্য লুদমিলা হয়তো চাকির হারাবেন। “আমরা কথা বলছি ৮০র দশকের মাঝামাঝি সময় নিয়ে। তখনও দেশটি ছিল ইউএসএসআর। তখনও দেশ চালাতো কমিউনিস্ট পার্টি। মানুষ জানতো আপত্তিকর কিছু বললে তার পরিণতি হতে পারে ভয়াবহ। এমনকী রাজনীতি নিয়ে ঠাট্টা তামাশা করলেও, পরিণতিতে কারাগারে যেতে হতে পারে।”

চাপে পড়ে যান লুদমিলা। “তারা আমাকে বলতে শুরু করে – একজন সম্মানী, বিবাহিতা নারী হয়ে কি করে তুমি এমন নির্লজ্জ শব্দ ব্যবহার করতে পারলে? কি করে তুমি আমেরিকানদের পাতা ফাঁদে পা দিলে? কিন্তু আমি বুঝতেই পারছিলাম না কোথায় কিভাবে আমি ফাঁদে পা দিলাম। আমি তো আমার দেশের পক্ষেই কথা বলছিলাম।”

একটি শব্দ ব্যবহার করে এতটাই চাপে পড়ে গিয়েছিলেন লুদমিলা যে পরের দশ বছর তিনি বিষয়টি নিয়ে মুখই খোলেননি। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙ্গার পর তিনি নারীদের জন্য একটি ক্লাব চালু করেন। , এবং তার ক্লাবের প্রচারণায় তিনি তার সেই বিতর্কিত বক্তব্য যে ইউএসএসআর-এ কোনো যৌনতা নেই তা ব্যবহার করেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Related articles

আবারো এস আলমে আগুন 

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী এলাকায় এস আলম গ্রুপের চিনির গুদামের পর এবার তেলের মিলে আগুন লেগেছে। ফায়ার সার্ভিসের ৮টি ইউনিটের...

জিম্মি নাবিকদের উদ্ধার চেষ্টার সময় গুলি বিনিময়

সময় ডেস্ক সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর নাবিকদের উদ্ধারে অভিযান চালিয়েছে অন্য একটি জাহাজ। দুই...

শেষ ম্যাচে ভুটানকে উড়িয়ে দিলো বাংলাদেশ

সময় স্পোর্টস ডেস্ক সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল আগেই নিশ্চিত করেছিলো বাংলাদেশের মেয়েরা। ১০ মার্চ ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে মাঠে...

নারী দিবসে নারী কর্মীদের সম্মান জানিয়ে এবারই প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করছেন নারী কর্মীরা

সময় ডেস্ক আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আজ শুক্রবার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট পরিচালনা করেছেন নারীরা। রাজধানীর শাহজালাল...