হালদা নদীতে ৬৫০০ কেজি ডিম সংগ্রহ

Date:

Share post:

নিস্ব প্রতিবেদক: দক্ষিণ এশিয়ার মাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে ডিম ছেড়েছে মা মাছ। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে হালদায় অতিরিক্ত লবণাক্ত পানির প্রবেশ ও বেশি পরিমাণে বজ্রসহ বৃষ্টি না হায় মা মাছ ডিম ছেড়েছে কম।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরি কর্তৃপক্ষ তাদের জরিপের ভিত্তিতে জােছে, এ বছর ৬ হাজার ৫০০ কেজি ডিম সংগ্রহ হয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে অন্তত চারগুণ কম। তবে কি পরিমাণ ডিম সংগ্রহ হয়েছে তা সরকারীভাবে ঘোষণা করা হয়নি।

চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারহানা লাভলী বলেন, এ বছর অনেক কম ডিম ছেড়েছে মা মাছ। আবহাওয়া অনুকূলে ছিল না। বিষ করে বৃষ্টি নেই, ঢল নেই। তারপর ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের কারণে হালদার নদীতে লবণাক্ত পানি প্রবেশ করেছে। এটা নদীর জন্য ক্ষতিকর। তবে আমরা আশাবাদী বৃষ্টি ও পাি ঢল নেমে আসলে আবারও এ বছর হালদায় ডিম ছাড়বে মা মাছ।

মঙ্গলবার (২৫ মে) রাত ১২টার পর নমুনা ডিম ছাড়ে কিছু মাছ। আর বুধবার (২৬ মে) রাত ১টার পরে কার্প জাতীয় মা মাছ হালদায় ডিম ছাড়া শুরু করে। ওই সময় থেকে নদীর ও রাউজান অংশে প্রায় ৩৫০টি নৌকা নিয়ে সংগ্রহকারীরা হালদায় মাছের ডিম সংগ্রহ শুরু করেন। ডিম সংগ্রহ শেষে এখন চলছে ডিম থেকে রেণু করার প্রক্রিয়া।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালে হালদা নদীতে রেকর্ড পরিমাণ ২৫ হাজার ৫৩৬ কেজি ডিম পাওয়া গিয়েছিল। আর ২০১৯ সালে প্রায় ১০ হাজার কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়েছিল। ২০১৮ সালে স্থানীয়রা ডিম সংগ্রহ করেছিলেন ২২ হাজার ৬৮০ কেজি। এর আগে ২০১৭ সালে মাত্র ১ হাজার ৬৮০ কেজি, ২০১৬ সালে ৭৩৫ (নমুনা ডিম) কেজি, ২০১৫ সালে ২ হাজার ৮০০ কেজি ও ২০১৪ সালে ১৬ হাজার ৫০০ কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়।

হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরি কো-অর্ডিনেটর অধ্যাপক মো. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, বিগত ২১ বছরের মধ্যে হালদার পরিবেশ, প্রতিবেশ ও মা মাছ রক্ষায় সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো হয়েছে। এত সফলতা সত্ত্বেও পরিবেশগত দুটো প্যারামিটার সব হিসাব-নিকাশ উলটপালট করে দেয়। হালদায় রুই জাতীয় মাছের ডিমের প্রত্যাশিত ফলাফল আি।.

তিনি বলেন, এর অন্যতম কারণ দুটির প্রথমটি হলো- থেকে জুন মাস হালদার রুই জাতীয় মাছের প্রজনন সময়। এই তিন মাসের মধ্যে প্রতি মাসের আমাবস্যা অথবা পূর্ণিমা তিথিতে ভারী বৃষ্টিপাত হলে মাছ নদীতে ডিম ছাড়ে। কিন্তু এবার এপ্রিল-মে দুই মাস অতিবাহিত হলেও হালদার নদীর উজান অঞ্চলে প্রত্যাশিত বৃষ্টি হয়নি। ফলে পাহাড়ি ঢল না আসায় নদীতে মাছের ডিম ছাড়ার অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়নি।

দ্বিতীয়টি হলো- মে মাসের চতুর্থ জো অর্থাৎ পূর্ণিমা তিথি ছিল ২৩ থেকে ২৯ তারিখ। এ সময় অল্প পরিমাণ বৃষ্টি হলে মাছের গোনাড পরিপক্বতার কারণে মাছ ডিম ছাড়ার জন্য তৈরি হয়। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের কারণে সাগর উত্তাল হয়ে ওঠে। পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পায়। একই সঙ্গে হালদা নদীর জোয়ার-ভাটার নদী হওয়ায় জোয়ারের সময় পানির উচ্চতা অনেক বৃদ্ধি পায়। জোয়ারের পানির সঙ্গে সমুদ্রের লবণাক্ত পানির অনুপ্রবেশ ঘটে। যা স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে অনেক গুণ বেশি ছিল।
তিনি আরও বলেন,পরিবেশগত এই দুটো বাধার কারণে হালদা নদীতে মাছের প্রজননের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি ব্যাহত হয়। কিন্তু মাছের গোনাডের পরিপক্বতার কারণে সামান্য অনুকূল পরিবেশ ডিম ছাড়তে বাধ্য হয়। ফলে হালদা নদীতে প্রচুর মাছের অবস্থান এবং ষণ মুক্ত থাকা সত্ত্বেও রুই জাতীয় মাছ স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রত্যাশিত ডিম ছাড়েনি।

সূত্র: চট্টলার খবর।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Related articles

আইনজীবী আলিফ হত্যায় নিয়োজিত তদন্ত কমিটির সব সদস্যের পদত্যাগ

নিজস্ব প্রতিবেদক  চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে জেলা বারের তদন্ত কমিটির সবাই পদত্যাগ করেছেন। গত বুধবার...

উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ ইন্তেকাল করেছেন

রাজনৈতিক- অন্তর্বর্তী সরকারের বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া...

যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞাকে বৈষম্যমূলক বলে দাবি ইসলামাবাদের

পাকিস্তানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির উপর যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিষেধাজ্ঞাকে “বৈষম্যমূলক” বলে বৃহস্পতিবার নিন্দা করেছে ইসলামাবাদ; কর্মসূচির উপর এই নিষেধাজ্ঞা...

সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম ও তার কন্যা মুমতারিন ফেরদৌস ডরিনের ডিএনএ মিল পাওয়া গেছে

বাংলাদেশের সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যার পর পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) উদ্ধার করা মাংস...