চমেক হাসপাতাল প্রশিক্ষণের সাধারণ চিকিৎসাসেবার নয়

Date:

Share post:

প্রথমেই চট্টগ্রামে একটি ক্যা্সার হাসপাাল স্থাপনের ারি সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই। ক্যান্সার রোগের চিকিৎসার জন্য দেশে মাত্র একটি বিশেষায়িত কারি প্রতিষ্ঠান ‘জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিউট ও হাসপাতাল’ রাজধানীর মহাখালীতে অবস্থিত যা কিনা প্রয়োজনের নিরিখে নিতান্তই অপ্রতুল। সে হিসাবে দ্বিতীয় একটি ক্যান্সার চিকিৎসা হাসপাতাল স্থাপিত হবে এটি খুবই আশাব্যঞ্জক, বিশেষ করে স্থান হিসেবে চট্টগ্রামকে নির্বাচিত করা খুবই উপযুক্ত ও সঠিক সিদ্ধান্ত। কিন্তু সংবাদ মাধ্যমে দেখতে পেলাম ঐতিহ্যবাহী চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অভ্যন্তরে প্রতিষ্ঠানটি নির্মিত হবে। বিষয়টি হরিষে বিষাদের মত মনে হলো। এরূপ সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার পূর্বে আরও সুচিন্তিত ভাবনার প্রয়োজন মনে করি। তার কারণ-

ক. চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সাধারণ কোনো চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠান নয়। এটি মূলত শিক্ষা ও িক্ষণের হাসপাতাল। এখানে নির্ধারিত সংখ্যার ছাত্র অনুপাতে রোগীর শয্যাসংখ্যা থাকবে এবং তাতে শিক্ষার গুণগত মান ও সামগ্রিক পরিবেশ বজায় থাকবে।
খ. মেডিকেল কলেজের আয়তন, অবকাঠামো ও সক্ষমতা বিবেচনায় নিয়ে একটি মাস্টারপ্ল্যান প্রণীত আছে। সেটির ব্যত্যয় হলে পরিকল্পনাটির মূল উদ্দেশ্যই ব্যাহত হবে।
গ. ইতোমধ্যে এখানে বেশকিছু পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কোর্স চালু হয়েছে এবং একটি আলাদা ডেন্টাল কলেজ/ইউনিট, কার্ডিয়াক ইউনিট নির্মিত হয়েছে যা বিদ্যমান অবকাঠামোর উপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করছে।
ঘ. তথ্যমতে বাংলাদেশে প্রায় ২৫ লাখ ক্যান্সারের রোগী রয়েছে এবং সংখ্যাটি ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভবিষ্যতে সেবার আকার বৃদ্ধি এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানের উত্তরোত্তর উৎকর্ষের কারণে সম্প্রসারণের প্রয়োজন দেখা দিলে স্থান সংকুলান সমস্যা দেখা দিবে।
ঙ. ক্যান্সার চিকিৎসায় ব্যবহৃত প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি হতে অতিমাত্রায় ক্ষতিকর রশ্মি নির্গত হয় যেটা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। এমনিতেই এখানে একটি নিউক্লিয়ার সেন্টার রয়েছে সেখানেও আছে ক্ষতিকর রশ্মি উৎপাদনকারী যন্ত্র। নতুন করে আরও এ জাতীয় যন্ত্রপাতি স্থাপন এরূপ একটি জনবহুল স্থানে মারাত্মক জনস্বাস্থ্য বিপর্যয়ের ঝুঁকি তৈরি করবে।
চ. ক্যান্সার একটি দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা প্রক্রিয়া। বাংলাদেশের সামাজিক বাস্তবতায় রোগীর সাথে সঙ্গত কারণেই আত্মীয়-স্বজনের উপস্থিতি অপরিহার্য। শহরের কেন্দ্রস্থলে তাদের দীর্ঘ অবস্থান অসহনীয় আর্থিক এবং সামাজিক চাপ সৃষ্টি করবে।
উল্লিখিত বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে ক্যান্সার হাসপাতালটি নির্মাণের স্থান নির্ধারণ পুনর্বিবেচনা করা যায়।

পরামর্শ:

১। উত্তম যোগাযোগ সম্বলিত কোনো সমভূমি অঞ্চল নির্বাচিত করা যেতে পারে।
২। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন কোনো প্রতিষ্ঠানের অব্যবহৃত বা কম ব্যবহৃত স্থান বিকল্প হিসাবে নির্ধারিত করা যেতে পারে।
৩। খাসজমি বরাদ্দের জন্য জেলা প্রশাসকের দপ্তরে আবেদন করা যেতে পারে।
৪। জনসচেতনতা ও সমর্থন সৃষ্টির জন্য মিডিয়ার া ও সামাজিক যোগাযোগ বৃদ্ধি করতে হবে। এক্ষেত্রে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ এলামনাই, বিএমএ ও চিকিৎসকদের অন্যান্য সংগঠনকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।
৫। নীতি নির্ধারকরা যেহেতু চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিবেন সুতরাং তাঁদের সাথে না অব্যাহত রাখতে হবে।
একথা সত্য, জনবহুল এদেশে পর্যাপ্ত ভূমির সংকট রয়েছে এবং প্রকল্প বাস্তবায়নের অন্যতম অন্তরায় হচ্ছে প্রাপ্যতা। তারপরও আলোচ্য বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে বিশেষজ্ঞ মত এবং সকলপক্ষের সম্মতির মাধ্যমে চট্টগ্রামে একটি আধুনিক পূর্ণাঙ্গ ক্যান্সার হাসপাতাল স্থাপন করা হলে সকলের জন্যই মঙ্গল হবে।

লেখক: ডা. মো. সাজেদুল হাসান,
অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব
প্রাক্তন ী,চমেক

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Related articles

ওবায়দুল কাদেরের ভাতিজাকে কাজ দিতে বড়পুকুরিয়ার গোপন টেন্ডার!

ওবায়দুল কাদের পলাতক থাকলেও তার ভাতিজা পরিচয়দানকারি আলমগীর হোসেনের দাপট এখন কমেনি। অনেক আপত্তি এমনকি কোর্টের নিষেধাজ্ঞা থাকার...

গ্রেপ্তার আতঙ্কে চঞ্চল চৌধুরীর ভারত সফর বাতিল!

দুই বাংলার জনপ্রিয় অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী ক্যারিয়ারের দর্শকদের উপহার দিয়েছেন একগুচ্ছ সিনেমা। অভিনয় করেছেন ছোটপর্দা এবং টেলিভিশন নাটকেও।...

দুপুরের মধ্যে ৫ জেলায় ঝড়ের শঙ্কা

দেশের পাঁচ জেলার ওপর দিয়ে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়াসহ বজ্রবৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া...

দেশে স্টারলিংকের যাত্রা শুরু হওয়ায় প্রধান উপদেষ্টার অভিনন্দন

বাংলাদেশে স্টারলিংকের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হওয়ায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে অভিনন্দন জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। মঙ্গলবার...