দিল্লিতে বাংলা নিয়ে শঙ্কা, বিপাকে গৃহকর্মীরা

Date:

Share post:

নয়ডায় গৃহকর্মীদের বিক্ষোভছবির কপিরাইট বিবিসি
Image caption নয়ডায় গৃহকর্মীদের বিক্ষোভ

ভারতের রাজধানী দিল্লির কাছে নয়ডা এলাকায় একটি চুরির অভিযোগকে কেন্দ্র করে সেখানকার বাসিন্দাদের কাছে আবেদন জানানো শুরু হয়েছে যে কেউ যেন কথিত বাংলাদেশিদের গৃহকর্মের জন্য নিযুক্ত না করেন।

একটি ফ্ল্যাট-মালিকের বাড়ি থেকে টাকা চুরির অভিযোগ ওঠে এক বাংলাভাষী নারীর বিরুদ্ধে, পরে তা নিয়ে ব্যাপক অশান্তি ছড়ায়।

নয়ডার আবাসিকদের একটি সংগঠন বলছে, গৃহকর্মী রাখার আগে যেন ভাল করে তার পরিচয় যাচাই করে নেওয়া হয় – তাহলেই বোঝা যাবে কারা বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী, আর কে নয়।

পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে বুধবারের ঘটনায় যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা – বাংলাদেশী নয়।

নয়ডার একটি আবাসিক সোসাইটির ফ্ল্যাটে ১০,০০০ টাকা চুরির অভিযোগ উঠেছিল বাংলাভাষী এক গৃহকর্মীর বিরুদ্ধে।

ফ্ল্যাট মালিকরা দাবী করেছেন চুরির প্রমাণও রয়েছে তাদের কাছে।

সোসাইটির কাছে অভিযোগ জানানোর পরের দিন, বুধবার সকালে ওই নারীর পরিবার – প্রতিবেশীসহ কয়েকশো মানুষ ওই আবাসিক সোসাইটিতে হামলা চালায় বলে অভিযোগ।

পুলিশ ব্যাপক লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

তারপরেই হোয়াটসঅ্যাপে একটি মেসেজ ছড়াতে শুরু করে যে ভবিষ্যতে কেউ যেন আর বাংলাদেশিদের কাজে রেখে নিজের বিপদ না বাড়ান।

ছবির কপিরাইট বিবিসি
Image caption বিক্ষোভের দিকে পুলিশের কড়া নজর

আরো দেখুন:

‘সরকারকে বিব্রত করার জন্য ফরহাদ মজহারের ঘটনা’

ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ভারতীয় যে কৃষকেরা বিদ্রোহ করেছিল

নয়ডার আবাসিক সোসাইটিগুলির সম্মিলিত সংগঠন নয়ডা এক্সটেনশন ফ্ল্যাট ওনার্স এন্ড মেম্বার্স এসোসিয়েশন বলছে, তারা জোর দিচ্ছে গৃহকর্মীদের নিয়োগ করার আগে পরিচয় যাচাই করে নেয়ার ওপর।

সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ভিজয় ত্রিবেদি বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, “বৈধ না অবৈধ আমরা সেই প্রসঙ্গে যাচ্ছি না। শুধু শুধু বলছি যে কাউকে কাজে রাখার আগে যেন তার পরিচয় ভাল করে যাচাই করা হয়। আসলে এর আগেও এরকম ঘটনা হয়েছে, তাই স্বাভাবিকভাবেই ওই গোষ্ঠীর মানুষদের বিরুদ্ধে একটা ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।”

“সবাই যে খারাপ বা দোষী তা নয় – কিন্তু বাসিন্দাদের মনে একটা ভয় ঢুকে গেছে যে একজন দুজনের বাড়িতে যদি এরকম ঘটনা হয়, তাহলে অন্যদের সঙ্গেও হতে পারে। যদিও বাংলা বললেই যে বাংলাদেশি হয়ে যাবে তা নয়। সেজন্যই জোর দেওয়া হচ্ছে পরিচয় যাচাইয়ের ওপরে – বোঝা যাবে যে কে পশ্চিমবঙ্গের লোক, কে বাংলাদেশি,” বলছিলেন ভিজয় ত্রিবেদী।

পুলিশ অবশ্য বলছে ওই সোসাইটির ঘটনায় যারা জড়িত বলে অভিযোগ, তারা কেউ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী নয় – পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহারের বাসিন্দা।

নয়ডা শহর এলাকার পুলিশ সুপারিন্টেনডেন্ট অরুণ কুমার সিং বলেন, “ওই সোসাইটির ঘটনায় যাদের বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ, তাদের পরিচয়পত্র যাচাই করা হয়েছে। সকলের কাছেই ভারতের নাগরিকত্বের প্রমাণ রয়েছে। এরা কেউই বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী নয়।”

“যেসব হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ ছড়ানো হচ্ছে এদের বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী, জঙ্গি – এসব বলে, এর কোনও ভিত্তি নেই। যারা এইসব মেসেজ দিচ্ছে বা বিবৃতি জারি করছে, উল্টে তাদের কাছেই প্রশ্ন তোলা যায়, তারা যদি জেনেই থাকবেন যে গৃহকর্মীরা বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী, তাহলে নিয়োগ করেছিলেন কেন? সস্তায় গৃহকর্মী পাচ্ছেন বলে? তাহলে তো এঁদেরই দোষ যে কম টাকায় কাজের লোক পাচ্ছেন বলে দেশের স্বার্থকে বিপন্ন করে তুলছেন জঙ্গিদের কাজে রেখে! আর আগের দিন পর্যন্ত যে রান্নাঘরে, শোয়ার ঘরে কাজ করে গেল, বাচ্চার দেখাশোনা করল, সে আজ বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী, জঙ্গি হয়ে গেল?” প্রশ্ন পুলিশ সুপার মি. সিংয়ের।

দিল্লির মানবাধিকার সংগঠন এশিয়ান সেন্টার ফর হিউমান রাইটস-এর প্রধান সুহাস চাকমা বলছিলেন, ভারতের বহু মানুষের মনে একটা ধারণা রয়েছে যে বাংলায় কথা বলেন, নিম্ন আয়ের মানুষ – তারা সকলেই বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী।

“উত্তর ভারতের বহু মানুষের মধ্যে একটা ফোবিয়া তৈরি করা হয়েছে যে নিম্ন আয়ের মানুষ, বাংলায় কথা বলেন, বস্তিতে থাকেন মানেই বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী। তিনি যদি পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা বা আসামের কোনও এলাকা থেকেও আসেন, তাহলেও বহু মানুষ মনে করেন যে তারা বাংলাদেশী। এই ফোবিয়া তৈরি হওয়ার পেছনে সংবাদমাধ্যমের একাংশও রয়েছে, যারা কোনও ছোট ঘটনাতেও বাংলাদেশিরা সম্পৃক্ত বলে প্রচার করতে থাকে,” বলছিলেন মি. চাকমা।

পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত অঞ্চলের বহু মানুষ দিল্লি-মুম্বাইতে কাজ করতে যান, যেগুলোর বেশীরভাগই কায়িক শ্রমের কাজ। নারীরা গৃহকর্মে যুক্ত হন।

দিল্লি আর মুম্বাইতে এর আগেও এমন ঘটনা হয়েছে, যেখানে সন্দেহের বশে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত অঞ্চলের মানুষদের বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।

এমন কি পুলিশ দিয়ে তাদের পশ্চিমবঙ্গে পাঠিয়েও দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশে পুশব্যাকের জন্য।

এছাড়াও পরিচয়পত্র পরীক্ষার নামে পশ্চিমবঙ্গের মানুষদের বাংলাদেশী বলে হয়রানি করারও অভিযোগ ওঠে মাঝে মধ্যেই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Related articles

আবারো এস আলমে আগুন 

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী এলাকায় এস আলম গ্রুপের চিনির গুদামের পর এবার তেলের মিলে আগুন লেগেছে। ফায়ার সার্ভিসের ৮টি ইউনিটের...

জিম্মি নাবিকদের উদ্ধার চেষ্টার সময় গুলি বিনিময়

সময় ডেস্ক সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর নাবিকদের উদ্ধারে অভিযান চালিয়েছে অন্য একটি জাহাজ। দুই...

শেষ ম্যাচে ভুটানকে উড়িয়ে দিলো বাংলাদেশ

সময় স্পোর্টস ডেস্ক সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল আগেই নিশ্চিত করেছিলো বাংলাদেশের মেয়েরা। ১০ মার্চ ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে মাঠে...

নারী দিবসে নারী কর্মীদের সম্মান জানিয়ে এবারই প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করছেন নারী কর্মীরা

সময় ডেস্ক আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আজ শুক্রবার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট পরিচালনা করেছেন নারীরা। রাজধানীর শাহজালাল...