
“আমরা এসি-তে কতটা ঠাণ্ডা করব, সেটাও না কি সরকার বলে দেবে! তাহলে কি এরপর কতটা ভাত খাব, সেটাও সরকারই ঠিক করবে?”
এই জাতীয় নানা ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ আর কটাক্ষ ভারতের টুইটার আর সোশ্যাল মিডিয়ার দুনিয়াতে ভেসে বেড়াচ্ছে গত বেশ কয়েকদিন ধরেই।
আসলে যখন থেকে সরকার প্রস্তাব দিয়েছে, এয়ার কন্ডিশনারের তাপমাত্রা ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ‘ডিফল্ট সেটিং’ করা বাধ্যতামূলক হোক, তখন থেকেই এই জাতীয় নানা মন্তব্যের ঝড় বইছে।
বিশেষত যখন দিল্লিসহ গোটা উত্তর ও মধ্য ভারতে তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে আর তাপমাত্রা মধ্য-চল্লিশ ছাড়িয়ে গেছে, তখন এসি চালিয়েও যথেষ্ট ঠাণ্ডা না-ও মিলতে পারে – এই আশঙ্কাটাই চেপে বসেছে অনেক ভারতবাসীর মধ্যে।
তারা অনেকেই ধারণা করছেন, সরকার হয়তো এয়ার কন্ডিশনারের তাপমাত্রা পাকাপাকিভাবে চব্বিশ ডিগ্রিতেই বেঁধে রাখতে চাইছে। যদিও এই ধারণাটা একেবারেই ভুল।
সেই ভুল ভাঙানোর জন্য আসরে নামতে হয়েছে স্বয়ং বিদ্যুৎমন্ত্রী আর কে সিংকে।
তিনি টুইটারে ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন, “ডিফল্ট সেটিং মানে হল আপনি যখন এসি-টা অন করবেন তখন সেটা ওই তাপমাত্রার জন্য চালু হবে। কিন্তু তারপর ইচ্ছে মতো সেই তাপমাত্রা কমানো বা বাড়ানো যেতেই পারে।”
কিন্তু তাহলে এভাবে ডিফল্ট সেটিং-টা চব্বিশে বাধ্যতামূলক করার পেছনে যুক্তিটা কী?
আরো পড়তে পারেন:
মিয়ানমারের অন্যতম শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা বরখাস্ত
গাজীপুর সিটি নির্বাচন: অনিয়মের নানা অভিযোগ
উত্তর কোরিয়ার রহস্যময় এক হোটেলের কাহিনী
অবৈধ অভিবাসীদের আশ্রয় হবে সামরিক ঘাঁটিতে
সরকার মনে করছে, এটা করা গেলে বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা সম্ভব হবে। তা ছাড়া স্বাস্থ্যের দিক থেকেও এটা নাকি ভাল।
আর কে সিং জানাচ্ছেন, এসি-র তাপমাত্রা সেটিং যদি মাত্র এক ডিগ্রিও বাড়ানো হয় তাহলে শতকরা ছয় ভাগ বিদ্যুৎ বাঁচানো সম্ভব।
ফলে আজকালকার বেশির ভাগ এসি যেখানে ২১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ‘ডিফল্ট সেট’ করা থাকে – সেটাকেই বাড়িয়ে চব্বিশ করা হলে অন্তত ১৮% বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা যাবে বলে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় যুক্তি দিচ্ছে।
ভারতে অনেক অফিস-কর্মীরই অভিজ্ঞতা বলে, বাইরে যখন গরমে বা রোদে গা ঝলসে যাচ্ছে – তখনও কিন্তু অফিসে এসির ভেতরে ঢুকলে ঠাণ্ডার চোটে অনেককেই হাল্কা গরম চাদর বা জ্যাকেট গায়ে চাপাতে হয়।
ঠিক এই কারণেই গুরগাঁওয়ের একটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্মী প্রদ্যোত সরকার বলছিলেন, “আমি তো গরমের দিনেও একটা পাতলা জ্যাকেট বা শাল অফিসে রেখেই যাই। ওরকম কিছু হাতের কাছে না পেলে ঠাণ্ডায় কাজ করাই দায় হয়ে পড়ে!”
দেশের এরকম লক্ষ লক্ষ অফিসে এসি-র তাপমাত্রার সেটিং বাড়ানো হলে ভারত প্রতি বছরে অন্তত ২০০০ কোটি ইউনিট বিদ্যুৎ বাঁচাতে পারবে বলে মন্ত্রী হিসেব দিয়েছেন – যেটা আবার ১৭ লক্ষ টন জ্বালানি তেলের সমপরিমাণ!
কাজেই এই পদক্ষেপ কার্যকর করা গেলে শুধু বিদ্যুৎই বাঁচবে না – বিপুল পরিমাণ গ্রিনহাউজ গ্যাসের নির্গমনও ঠেকানো যাবে।
কিন্তু এয়ার-কন্ডিশনার চালানোতে আসলে ঠিক কতটা বিদ্যুৎ লাগে?
একটা সাধারণ হিসেব বলে, রাজধানী দিল্লিতে গ্রীষ্মকালে মোট যতো বিদ্যুৎ খরচ হয় তার অন্তত ৬০ শতাংশই লাগে শুধু এসি চালাতে।
ভারতে এসি-র চাহিদা যেভাবে বাড়ছে তাতে সে দেশে ২০৩০ সালের মধ্যে শুধু এসি-র জন্যই ২০০ গিগাওয়াট বাড়তি বিদ্যুৎ লাগবে বলে ধারণা করা হয়। এটা পুরো কানাডার মোট বিদ্যুৎ চাহিদার চাইতেও বেশি।
কাজেই বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য ভারত সরকার কেন এসিকে নিশানা করছে, তা বোঝা শক্ত নয়।
তবে সরকারের এই প্রস্তাব বাস্তবায়নের আগে আগামী চার থেকে ছয় মাস এই বিষয়ে সচেতনতা অভিযান চালানো হবে। তারপর নির্দিষ্ট ফর্মে মানুষের মতামত নিয়ে তার পরেই এটা বাধ্যতামূলক করার কথা ভাবা হবে বলে সরকার জানিয়েছে।
যদি শেষ পর্যন্ত এই ব্যবস্থা চালু হয়, তাহলে আগামী দিনে ভারতের সব হোটেল-এয়ারপোর্ট-শপিং মল-রেস্তোরাঁ বা সরকারি অফিসে প্রচণ্ড গরমের দিনেও আপনি চব্বিশ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাই পাবেন ধরে নিতে পারেন।
তবে আপনার নিজের বেডরুম বা লিভিং রুমকে কনকনে ঠাণ্ডা বানানোর অধিকার অবশ্য এখনও সরকার কেড়ে নিচ্ছে না!
Source from: http://www.bbc.com/bengali/news-44619936