
বিশ্বকাপের মোট ৬৪ টি ম্যাচের ৩২টির খেলা হয়ে গেছে। এ সপ্তাহেই শেষ হয়ে যাবে এবারের বিশ্বকাপের গ্রুপ স্টেজের খেলা। সপ্তাহ শেষে পরিস্কার হয়ে যাবে কারা যাচ্ছে নকআউট পর্বে।
কিন্তু যে ক’টি ম্যাচ এ পর্যন্ত হয়েছে তার ভিত্তিতে এবারের বিশ্বকাপ সম্পর্কে কী ধারণা আমরা পাচ্ছি?
যথেষ্ট অবাক করা ঘটনা এরই মধ্যে ঘটেছে বিশ্বকাপে। দেখা গেছে অনেক চমক। তারই কয়েকটি এখানে:
ইংল্যান্ড এবং বেলজিয়াম: গোলের বন্যা
গেল শনিবারের আগে পর্যন্ত এবারের বিশ্বকাপে গোলের সংখ্যা ছিল খুবই কম, সাম্প্রতিক কোন বিশ্বকাপের সঙ্গে তুলনা করলে। শুক্রবার পর্যন্ত যতগুলো ম্যাচ হয়েছিল, তাতে ম্যাচ প্রতি গোলসংখ্যা ছিল দুই দশমিক ৩৩।
কিন্তু তারপর গ্রুপ জি-র দুই প্রধান দল যেন গোলের বন্যা বইয়ে দিল। বেলজিয়াম ৫-২ গোলে হারালো তিউনিসিয়াকে। আর ইংল্যান্ড ৬-১ গোলে পানামাকে।
সেনেগাল আর জাপানের খেলা ২-২ গোলে ড্র হলো। সব মিলিয়ে ৩২টি ম্যাচে গোলের সংখ্যা দাঁড়ালো ৭৮টিতে। অর্থাৎ প্রতি ম্যাচে গোলের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো দুই দশমিক ৬৫-তে।
গত চার বিশ্বকাপের সঙ্গে তুলনা করলে মোটেই খারাপ নয়। গত চারটির মধ্যে কেবল ব্রাজিল বিশ্বকাপেই গড়ে এর চেয়ে বেশি গোল হয়েছে।
গোলশূন্য ড্র নেই:
ফুটবল ভক্তরা এবং সাংবাদিকরা অভিযোগ করছেন যে এবারের বিশ্বকাপে নেতিবাচক কৌশলের খেলা দেখাচ্ছে কিছু টিম।
কিন্তু তা সত্ত্বেও এবার কিন্তু এখন পর্যন্ত একটিও গোলশূন্য ড্র নেই এবারের টুর্ণামেন্টে।
সত্যি কথা বলতে কি, ৩১টি ম্যাচের মধ্যে মাত্র ৫টি খেলা এবার ড্র হয়েছে।
গোল্ডেন বুট পাওয়ার প্রতিযোগিতায় যারা:
গোলের বন্যায় এবার যার কপাল খুলে যেতে পারে, তিনি ইংল্যান্ডের হ্যারি কেইন। তার গোল্ডেন বুট পাওয়ার উজ্জ্বল সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এর আগে ইংল্যান্ডের গ্যারি লিনেকার ১৯৮৬ সালে গোল্ডেন বুট পেয়েছিলেন।
হ্যারি কেইন এ পর্যন্ত ৫টি গোল করেছেন। কিন্তু তাকে তাড়া করছেন বেলজিয়ামের রোমেলু লুকাকু এবং বেলজিয়ামের ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো। তাদের দুজনেই করেছেন চারটি করে গোল।
খেলার মাঠে রাজনীতি
সুইটজারল্যান্ডের দুই খেলোয়াড় সার্বিয়ার বিরুদ্ধে গোল করার পর যে ভঙ্গিতে উল্লাস করেছেন, সেটি রাজনৈতিক বিতর্ক সৃষ্টি করে।
যাকা এবং শাকিরি, এরা দুজনেই সুইটজারল্যান্ড জাতীয় দলের খেলোয়াড় হলেও কসোভোর সঙ্গে তাদের সম্পর্ক আছে এবং দুজনেই আলবেনিয়ান বংশোদ্ভূত। সার্বিয়ার বিরুদ্ধে গোল দেয়ার পর দুজনেই দুই হাতে ঈগলের ভঙ্গিমায় উল্লাস করেন, যা আসলে আলবেনিয়ার জাতীয় পতাকার প্রতীক।
উল্লেখ্য কসোভো ২০০৮ সালে সার্বিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিল। তাদের এই উল্লাসের ভঙ্গিমা স্বাভাবিকভাবেই সার্বিয়ার কাছে অপমানজনক লেগেছে।
ফিফা ইতোমধ্যে তাদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে প্রক্রিয়া শুরু করেছে। তাদের দুজনেই দুটি করে ম্যাচে নিষিদ্ধ হতে পারেন।
লাল কার্ড, হলুদ কার্ড…
রাশিয়া বিশ্বকাপের প্রথম তিরিশটি ম্যাচে ৯৫টি হলুদ কার্ড দেখানো হয়েছে। এর মানে প্রতি ম্যাচে তিনটির বেশি করে হলুদ কার্ড।
১৯৯৪ সালের পর যত বিশ্বকাপ হয়েছে, সেগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে, হলুদ কার্ডের সংখ্যা সেরকম বেশি নয়।
তবে গেলবারের বিশ্বকাপের তুলনায় এই সংখ্যা একটু বেশি। সেবার ম্যাচ প্রতি হলুদ কার্ডের সংখ্যা ছিল তিনের নীচে।
দর্শকে পরিপূর্ণ স্টেডিয়াম:
এ সপ্তাহান্ত পর্যন্ত প্রায় ১৪ লাখ দর্শক মাঠে গিয়ে খেলা দেখেছেন। স্টেডিয়ামগুলোর প্রায় ৯৭ শতাংশ আসন ছিল পূর্ণ।
সবচেয়ে বেশি দর্শক খেলা দেখেছেন মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে।
সেখানে রাশিয়া বনাম সৌদি আরব, পর্তুগাল বনাম মরোক্কো এবং জার্মানি বনাম মেক্সিকোর খেলায় সবচেয়ে বেশি দর্শক হয়েছিল।
গণশত্রু নেইমার
সোশ্যাল মিডিয়ায় নেইমারের লাখ লাখ ফলোয়ার। কিন্তু রাশিয়ায় গিয়ে তার কিছু কিছু আচরণে অনেকে ক্ষিপ্ত। বিশেষ করে ব্রাজিল কোস্টারিকার বিরুদ্ধে যে ম্যাচে ২-০ গোলে নাটকীয়ভাবে জিতলো, সেই ম্যাচে তিনি যেভাবে রেফারির কাছে অভিযোগ করছিলেন। একই ম্যাচে যেভাবে তিনি পড়ে গিয়ে পেনাল্টি পাওয়ার চেষ্টা করেন, সেটিও সমালোচিত হয়।
গুগল ট্রেন্ডের ডাটা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এবার ব্রাজিল দলের ব্যাপারেই গুগলে সবচেয়ে বেশি সার্চ করা হয়েছে।
গুগলে নয় শতাংশ সার্চ ছিল ব্রাজিলের জন্য। এর পর রয়েছে আর্জেন্টিনা এবং জার্মানি (৭ শতাংশ)। তৃতীয় স্থানে ফ্রান্স (৬ শতাংশ)। স্পেন, ইংল্যান্ড এবং পর্তুগাল আছে চতুর্থ স্থানে (৫ শতাংশ)।
খাদের কিনারে মেসি:
দুটি ম্যাচে আর্জেন্টিনার সংগ্রহ মাত্র এক পয়েন্ট। যদি নাইজেরিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচে জিততে না পারে, তাহলে টুর্ণামেন্ট থেকেই তাদের বাদ পড়তে হবে।
কিন্তু মেসি এ পর্যন্ত যেভাবে খেলেছে, তাতে আর্জেন্টিনার সমর্থকরা খুবই হতাশ। ফুটবলে সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ টুর্ণামেন্ট হচ্ছে বিশ্বকাপ।
কিন্তু সেটি যদি এবারও আর্জেন্টিনার জন্য জিততে না পারেন মেসি, যদি গ্রুপ পর্ব থেকেই তাদের বিদায় নিতে হয়, তার সমর্থকরা তাকে ক্ষমা করবেন না।
পানামার উল্লাস
কেউ যদি হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে পানামার গোল এবং তারপর পানামার খেলোয়াড়দের উল্লাস দেখেন, ভাবতে পারেন, ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে বুঝি তারা বড় অঘটন ঘটিয়ে দিয়েছে।
কিন্তু ব্যাপারটা তা নয়। পানামা ইংল্যান্ডের কাছ থেকে ছয় গোল খেলেও বিশ্বকাপে এই প্রথম তারা গোল করেছে। সেজন্যেই এত উল্লাস!
বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো খেলতে এসে তারা এরই মধ্যে নয় গোল খেয়েছে, তাতে কী!
Source from: http://www.bbc.com/bengali/news-44600288