মিলেছে গাড়ি চালানোর অনুমতি, কিন্তু সৌদি নারীর এখনো যে পাঁচটি অধিকার নেই

Date:

Share post:

সৌদি নারীদের জীবন এখনো বিধি-নিষেধের বেড়াজালে বন্দী ছবির কপিরাইট Getty Images
Image caption সৌদি নারীদের জীবন খনো বিধি-নিষেধের বেড়াজালে বন্দী

সৌদি আরবে সম্প্রতি মেয়েদের যেসব নতুন স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে, তা বিশ্বজুড়েই সংবাদ শিণাম হয়েছে। এই প্রম সৌদি নারীরা স্টেডিয়ামে গিয়ে ফুটবল খেলা দেখার সুযোগ পাচ্ছেন।

মেয়েদের এখন সামরিক বাহিনীতে নেয়া হচ্ছে। তবে তাদেরকে সরাসরি যুদ্ধক্ষেত্রে সৈনিক হিসেবে পাঠানো হবে না।

সেদেশে মেয়েরা এই প্রথম একটা সাইকেল রেসেও অংশ নিয়েছেন।

আর ২৪শে জুন সেদেশে মেয়েদের ড্রাইভিং এর ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাচ্ছে।

সৌদি আরব যদিও ইতোমধ্যে কিছু নারীকে ড্রাইভিং লাইসেন্স দিয়েছে- যারা মেয়েদের এই অধিকারের জন্য আন্দোলন করেছেন, গত মাসে তাদের বেশ কয়েকজন গ্রেফতার করা হয়। তারা দেশটির নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলছিলেন বলে অভিযোগ করা হয়।

ছবির কপিরাইট Getty Images
Image caption যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। আধুনিকায়নের কথা বললেও নারী অধিকার কর্মীদের বিরুদ্ধে চলছে দমন-নিপীড়ন।

৩২ বছর বয়সী মোহাম্মদ বিন সালমান বলছেন, তিনি সৌদি সমাজের আধুনিকায়ন করতে চান এবং দেশকে মধ্যপন্থী ইসলামে ফিরিয়ে নিতে চান।

তার ভি ২০৩০ কর্মসূচীর অধিনে তিনি বেশ কিছু সংস্কার শুরু করেছেন। মেয়েদের ব্যাপারে নেয়া পদক্ষেপগুলো তারই অংশ।

কিন্তু তা সত্ত্বেও সৌদি সমাজ মেয়েদের জন্য বিশ্বের সবয়ে রক্ষণশীল দেশগুলোর একটি।

বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের সূচকে ১৪৪টি দেশের মধ্যে তাদের অবস্থান হচ্ছে ১৩৮।

এই দেশে এখনো মেয়েরা অনেক কিছুই করতে পারে না। সেরকম পাঁচটি নিষিদ্ধ জিনিস:

১. ব্যাংক একা্ট খোলা

ছবির কপিরাইট Getty Images
Image caption ভোট দিচ্ছেন এক সৌদি নারী

ষ অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া সৌদি নারীরা কোন ব্যাংক একাউন্ট খুলতে পারেন না। সৌদি আরবে যে ‘্ডিয়ানশীপ প্রথা’ চালু রয়েছে, তার কারণেই এই বিধিনিষেধ।

সৌদি আরব প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে এটি ওয়াহাবীদের দ্বারা পরিচালিত। ইসলামের সবচেয়ে রক্ষণশীল মতাদর্শ হিসেবে পরিচিত ওয়াহাবীবাদ।

গার্ডিয়ানশীপ প্রথার কড়া সমালোচনা করেছে অনেক াধিকার সংস্থা। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ভাষায়, “এটি সৌদি নারীদের আইনগতভাবে সারাজীবন নাবালিকা করে রাখছে, তারা নিজের জীবনের কোন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তই নিজে নিতে পারছেন না।”

২. পাসপোর্ট পাওয়া

ছবির কপিরাইট Getty Images
Image caption বিদেশ ভ্রমণের পাসপোর্ট পেতেও লাগে পুরুষ অভিভাবকের সম্মতি

গার্ডিয়ানশীপ প্রথার আরেকটি উদাহারণ। বিদেশ ভ্রমণের পাসপোর্ট পেতে হলে একজন সৌদি নারীর অবশ্যই একজন পুরুষ অভিভাবকের অনুমতি লাগবে।

শুধু পাসপোর্ট নয়। চাকুরি, পড়াশোনা এমনকি বিশেষ ধরণের স্বাস্থ্য সেবার ক্ষেত্রেও তাদের দরকার হয় এরকম অনুমতির।

এই পুরুষ অভিভাবক হতে পারেন বাবা, ভাই বা অন্য কোন পুরুষ আত্মীয়। বিধবাদের ক্ষেত্রে পুত্র সন্তানও হতে পারেন অভিভাবক।

৩. বিয়ে কিংবা বিয়ে বিচ্ছেদ

ছবির কপিরাইট Getty Images
Image caption দোকানে কেনা-কাটা করতে গেলেও সাথে নিতে হয় পুরুষ অভিভাবক

বিয়ে কিংবা বিয়ে বিচ্ছেদের ক্ষেত্রেও পুরুষ অভিভাবকের অনুমতি দরকার হয়।

কোন নারীর বিয়ে বিচ্ছেদের পর সন্তানকে নিজের কাছে রাখা খুব কঠিন। বিশেষ করে ছেলে সন্তানের বয়স যদি সাত বছরের বেশি এবং মেয়ে সন্তানের বয়স নয় বছরের বেশি হয়।

মেয়েদের নির্ভর করতে হয় তাদের পুরুষ আত্মীয়দের সদিচ্ছার ওপর।

পুরুষ অভিভাবকরা চাইলে বিয়ে বা বিয়ে বিচ্ছেদের অনুমতি নাও দিতে পারেন।

সৌদি নারীরা অভিযোগ করেন, তাদের অনেক সময় নির্যাতনের শিকার হতে হয় পুরুষ অভিভাবকদের হাতে, বেতনের অর্থ তুলে দিতে হয়। জোর করে বিয়ে দেয়া হয় বা বিয়েতে বাধা দেয়া হয়।

. পুরুষ সঙ্গীকে সাথে নিয়ে কফি খেতে যাওয়া

ছবির কপিরাইট Getty Images
Image caption রেস্টুরেন্টে নারী-পুরুষকে বসতে হয় আলাদা স্থানে

সৌদি আরবে সব রেস্টুরেন্টেই পুরুষ আর মহিলাদের বসার জায়গা আলাদা।

যারা পরিবার পরিজন নিয়ে রেস্টুরেন্টে যাচ্ছেন তাদের বসতে হয় পরিবার এবং মহিলাদের জন্য নির্ধারিত স্থানে।

আর একা পুরুষদের বসতে হয় পুরুষদের জন্য নির্ধারিত আলাদা জায়গায়।

কাজেই অনাত্মীয় নারী-পুরুষ এক সঙ্গে এক জায়গায় বসে কফি খাবেন, সেটি হবে না।

. ইচ্ছেমত পোশাক পরার স্বাধীনতা

ছবির কপিরাইট Getty Images
Image caption বাইরে যেতে গেলে সৌদি নারীদের গায়ে চাপাতে হয় আবায়া

সৌদি নারীদের প্রকাশ্যে চলাফেরার সময় মুখ ঢাকতেই হবে এমন বাধ্যবাধকতা নেই। কিন্তু মাথা থেকে পা পর্যন্ত কাপড়ে আবৃত থাকতে হবে। এরকম পোশাককে বলে আবায়া। পুরো শরীর ঢেকে রাখা, ঢিলে-ঢালা একটি পোশাক।

যেসব নারী এই আবায়া না পরে বাইরে যান, তাদেরকে রীতিমত ভর্ৎসনা করে সৌদি আরবের ধর্মীয় পুলিশ।

কিছু কিছু জায়গায় বা শপিং মলে কেবলমাত্র মহিলাদের জন্য নির্ধারিত কিছু জায়গা থাকে। সেখানে তারা চাইলে আবায়া খুলে চলাফেরা করতে পারেন।

এ বছরের শুরুতে সৌদি আরবের একজন নেতৃস্থানীয় ধর্মীয় নেতা বলেছিলেন, মেয়েদের আবায়া পড়তেই হবে এমন কোন ব্যাপার নেই। ভবিষ্যতে সৌদি আরবের আইনে হয়তো এই বিষয়টিকে অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে।

তবে বিদেশি নাগরিকদের বেলায় এই নিয়মটি কিছুটা শিথিল।

আইনত পোশাক-আশাকের বেলায় তারা আরেকটু উদারতার সুযোগ পান। আর তারা যদি অমুসলিম হন, তাহলে তাদের মাথাও ঢাকতে হবে না।

Source from: http://www.bbc.com/bengali/news-44574576

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Related articles

যাত্রাবাড়ীতে ১৫১ বোতল বিদেশি মদ ও ট্রাকসহ এক মাদক কারবারিকে গ্রেফতার করেছে ডিবি-রমনা

স্থানীয় প্রতিনিধি রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে ১৫১ বোতল বিদেশি মদ ও মদ পরিবহনে ব্যবহৃত ট্রাকসহ এক মাদক কারবারিকে গ্রেফতার...

ডিসি হিলে ঐতিহ্যবাহী নববর্ষের অনুষ্ঠানের প্রস্তুতিকালে হামলা এবং ভাঙচুর,নববর্ষের অনুষ্ঠান বাতিল

স্থানীয় প্রতিনিধি চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালী থানার ডিসি হিলে ঐতিহ্যবাহী নববর্ষের অনুষ্ঠানের প্রস্তুতিকালে হামলা এবং ভাঙচুরের ঘটনায় আগামীকালকের নববর্ষের অনুষ্ঠান...

অভিনেত্রী মেঘনা আলমকে ডিটেনশন আইনে ৩০ দিনের জন্য কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত

সময় ডেস্ক  মিস আর্থ বাংলাদেশ ২০২০-এর বিজয়ী অভিনেত্রী মেঘনা আলমকে ডিটেনশন আইনে ৩০ দিনের জন্য কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার...

কে এই আশিক চৌধুরী

সময় ডেস্ক  পাইলট পরিবারের সন্তান আশিক চৌধুরী। পেশায় ব্যাংকার হলেও রপ্ত করেছেন বিমান চালানো। অন্তত অর্ধশত বার ঝাঁপ দেন...