প্রধানমন্ত্রী ওলির চীন সফর: নেপাল কি ভারতীয় প্রভাবের বাইরে চলে যাচ্ছে?

Date:

Share post:

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি ছবির কপিরাইট Getty Images
Image caption চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে নেলের ী কেপি শর্মা ওলি

নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি এখন পাঁচ দিনের চীন সফরে রয়েছেন।

চীনের গণমাধ্যমগুলো তাঁর এই সফরকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করছে। সরকারি পত্রিকা গ্লোবাল টাইমস লিখেছে যে নেপাল সেদেশে আর্থিক বিনিয়োগ আর অবকাঠামো ্নয়ন প্রকল্পগুলোকে চূড়ান্ত রূপ দিতে চাইছে।

তবে পত্রিকাটি এও লিখেছে যে এই সফরের কারণে ভারতের আশাত হওয়ার কোনও কারণ নেই, কারণ নেপালে তাদের প্রভাব কম হয়ে যাবে না।

কিন্তু গ্লোবাল টাইমসের প্রতিবেদনে পদেশ দেওয়া হয়েছে যে নেপাল-ভারত-চীনের মধ্যে ত্রিপাক্ষিক সম্পর্ক গড়ে তোলা উচিত।

মি. ওলি মঙ্গলবার চীনে পৌঁছেছেন, আর রবিবার পর্যন্ত সেখানে থাকবেন। এই সফরে তাঁর সঙ্গে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাতের কথা থাকলেও তাঁর মূলতঃ আলাপ আলোচনা হবে চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কাচিয়াংয়ের সঙ্গেই।

সাংহাই ইনস্টিটিউট ফর ইন্টান্যাশানাল স্টাডিজ সেন্টারের পরিচালক চাও গেনচেংকে উদ্ধৃত করে গ্লোবাল টাইমস লিখেছে, “চীনের জন্য সবসময়েই নেপাল খুব গুরুত্বপূর্ণ টি দেশ। দুই দেশের মধ্যে বিস্তীর্ণ সীমান্ত রয়েছে। চীন আর স্বায়ত্বশাসিত তিব্বতের স্থিরতার জন্যও দুই দেশের সুসম্পর্ক প্রয়োজনীয়।”

মি. চাও আরও বলেছেন যে চীনের ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ প্রকল্পে নেপাল একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ আর নেপালও চায় যে চীন তাদের দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সাহায্য করুক।

নেপালের সিনিয়র সাংবাদিক ও বিশ্লেষক বরাজ ঘিমিরে অবশ্য বলছেন, “এই সফরের জন্য ভারতের চিন্তিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। চীন আর নেপালের সম্পর্কে উন্নতি তো ঘটেইছে। ২০০৬ সাল পর্যন্ত দেশের নানা অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারত নির্নায়ক ভূমিকা পালন করত। কিন্তু এখন তো আর সেই নেই।”

তিনি বলেন, “নেপালে চীনের উপস্থিতি বেড়েছে। চীনও ক্রমশ নেপাল নিয়ে উৎসাহ দেখাচ্ছে। এগুলো জানা কথা। তাই আলোচনা করার বিষয় এটা হতে পারে যে, নেপাল আর ভারতের মধ্যে দূরত্ব কতটা বেড়েছে, সেই প্রসঙ্গটা।”

ছবির কপিরাইট Getty Images
Image caption নেপালে দ্বিতীয়বারের মত প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন কেপি শর্মা ওলি

আরও পড়ুন:

খালেদা জিয়ার জীবন সঙ্কটে: চিকিৎসক

‘পাসপোর্ট পেতে হলে হিন্দু হয়ে যান’

ব্যাংক ঋণ ও আমানতের সুদ কমালে কার কতটা লাভ

নেপালের প্রধানমন্ত্রীর এই সফর নিয়ে চীনের েশ মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গেং শুং বলছেন, “চীন আশা করে যে মি. ওলির এই সফরের ফলে ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড প্রকল্পের মাধ্যমের দুই দেশের রাজনৈতিক সহযোগিতা বাড়বে। একই সঙ্গে সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান আর দু্ই দেশের নাগরিকদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক আরও গভীর হবে।”

কেপি শর্মা ওলি দ্বিতীয়বারের জন্য নেপালের শাভার পেয়েছেন। এটা বলা হয়ে থাকে যে নেপালকে চীনের কাছাকাছি নিয়ে যাওয়ার পেছনে তাঁর উৎসাহ রয়েছে।

দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে এ বছরের মার্চ মাসে মি. ওলি তৎকালীন পাকিস্তানী প্রধানমন্ত্রী শাহীদ খাকান আব্বাসীকে কাঠমান্ডুতে স্বাগত জানিয়েছিলেন।

ঘটনাচক্রে সেই সময়ে ভারত আর পাকিস্তানের মধ্যকার সম্পর্ক বেশ নাড়া খেয়েছিল।

চীনের এক বিশ্লেষক বলছেন, ভারত তার সঙ্গে নেপালের সম্পর্কটাকে পুরো অঞ্চলে কতটা লাভ লোকসান হবে, সেই হিসাবে বিচার করে। এই ধ্যানধারণা থেকে ভারতের বেরিয়ে আসা উচিত।

গ্লোবাল টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সাংহাই একাডেমী অব সোশ্যাল সায়েন্সের এক গবেষক বলেছেন, “চীনের সঙ্গে নেপালের সম্পর্ক নিয়ে যেটা বলা হচ্ছে যে ভারতের প্রভাব নেপালের ওপরে কমে যাবে, সেটা একটু বাড়িয়ে বলা হচ্ছে। লাভ লোকসানের হিসাব কষা থেকে বেরিয়ে এসে ভাবতে হবে ভারতকে। নেপালের অর্থনীতি তো পুরোপুরিই ভারতের ওপরে নির্ভরশীল।”

চীনের ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড পরিকল্পনা নিয়ে বরাবরই ভারতের বিরোধ রয়েছে। অন্যদিকে নেপাল এই পরিকল্পনা সহযোগী। ভারতের কাছে এটা নিসন্দেহে অস্বস্তিকর বিষয়।

মি. ওলি তাঁর প্রথমবারের প্রধানমন্ত্রীত্বের সময়েও চীন সফরে গিয়েছিলেন। সেই সময়ে ট্র্যানজিট ট্রেড চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন তিনি। চীন যাতে তিব্বতে সড়ক নেটওয়ার্ক তৈরী করে আর সেই নেটওয়ার্কে নেপালকে যুক্ত করে, এটাই চান মি. ওলি। তাঁর মতে, এই ভাবেই ভারতের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে পারবে নেপাল।

হিমালয়ের মধ্যে দিয়ে চীনের রেলপথ বিস্তৃত হওয়ার যে পরিকল্পনা হচ্ছে, তার সঙ্গে নেপালকেও যুক্ত করার ব্যাপারেও আলোচনা চলছে।

অন্যদিকে, ২০১৫-১৬ সালে নেপালের ওপরে ভারত যে ‘অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা’ জারি করেছিল সেদেশে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যবাহী ট্রাক যেতে না দিয়ে, সেই সময়ে মি. ওলিই নেপালের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।

ছবির কপিরাইট Getty Images
Image caption নেপালের প্রধানমন্ত্রী তাঁর সাম্প্রতিক ভারত সফরের সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন

নেপালের মানুষকে খাদ্যদ্রব্য থেকে শুরু করে পেট্রোলের ভয়ানক অভাবের মধ্যে দিয়ে দিন কাটাতে হয়েছে সেই সময়ে।

ওই সময়েই মি. ওলির জনপ্রিয়তা বাড়তে শুরু করে আর নেপাল চীনের আরও কাছাকাছি পৌঁছানোর একটা সুযোগ পায়। এটা বলা হয়ে থাকে যে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে গেলে ভারত তাকে কী চোখে দেখবে, তা নিয়ে মি. ওলি মোটেই চিন্তিত নন।

ভারতের অঘোষিত সেই ‘ঘেরাওয়ের সময়’ থেকেই নেপালের জন্য এটা জরুরী হয়ে পড়েছিল যে তারা ভারত-নির্ভরতা কমাক। নেপালও বহু দশক ধরে চাইছিল যে চীনের সঙ্গে তাদের রেল-সংযোগ স্থাপিত হোক।

যদিও চীনের বিশ্লেষকদের মতে, দু্টি দেশকে রেলের মাধ্যমে সংযুক্ত করা সোজা কাজ নয়। কারণ এর জন্য বিপুল পরিমান অর্থ খরচ হবে।

নেপালের আশঙ্কা আছে যে এই রেল সংযোগ স্থাপন করতে গিয়ে তাজিকিস্তান, লাওস, মালদ্বীপ, জিবুতি, কিরগিজস্তান, পাকিস্তান, মঙ্গোলিয়া, শ্রীলঙ্কা আর মন্টেনেগ্রোর মতো তারাও ঋণের ভারে জর্জরিত না হয়ে পড়ে।

কেপি শর্মা ওলির ব্যাপারে আরও একটা কথা বলা হয়ে থাকে যে তিনি নির্বাচনে জয়লাভ করেছেন ভারত-বিরোধী মনোভাবের কারণেই।

কিন্তু বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ একটা ব্যাপারে একমত যে খোলাখুলিভাবে ভারতের সঙ্গে শত্রুতার সম্পর্ক তৈরী করা নেপালের পক্ষে অসম্ভব।

তবে মি. ওলি সম্ভবত এটাই প্রমাণ করতে চাইছেন যে নেপাল একটি সার্বভৌম দেশ আর নিজেদের বিদেশ নীতির প্রসঙ্গে তারা অন্য কোনও দেশের পরামর্শ মেনে চলবে না।

এই পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক ভাবেই নেপালে চীনের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি নিয়ে ভারত চিন্তিত হবে।

চীনের কাছে নেপাল একটি রণকৌশলের অঙ্গ। নেপালে হাজার হাজার তিব্বতী মানুষ বাস করেন। চীনের একটা আশঙ্কা আছে যে নেপালে তিব্বতীদের কোনও আন্দোলন যে শুরু না হয়ে যায় – যার প্রভাব আবার তিব্বতেও গিয়ে পড়তে পারে।

এজন্যই নেপালে নিজেদের উপস্থিতি আরও জোরালো করতে উদ্যোগী হয়েছে তারা।

বিবিসি বাংলায় আরও পড়তে পারেন:

‘পাসপোর্ট পেতে হলে হিন্দু হয়ে যান’

‘মদ্যপান কিংবা সিগারেটের চেয়ে গাঁজা ভালো’

বিশ্বকাপ ২০১৮: রুশ নারীরা এত আলোচনায় কেন?

Source from: http://www.bbc.com/bengali/news-44562929

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Related articles

মিয়ানমারে সংঘর্ষের মুখে পালিয়ে ভারতে ঢুকেছে কয়েক হাজার মানুষ

মিয়ানমারে দুটি জান্তা-বিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠীর লড়াই-সংঘর্ষের মাঝে পড়ে কয়েক হাজার মানুষ পালিয়ে ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মিজোরামে ঢুকে পড়েছে।...

‘চব্বিশের জুলাই-অগাস্টে কোন যুদ্ধ হয়নি বরং হয়েছিল রাজনৈতিক বিরোধ’

গত বছরের জুলাই - অগাস্টে এই দেশে কোনো যুদ্ধ সংঘটিত হয় নাই, যা হয়েছে সেটা ছিল রাজনৈতিক বিরোধ-...

অপারেশন সিঁদুরে আড়াই শতাধিক ভারতীয় সেনা নিহত, গোপনে জানাচ্ছে সম্মান

কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসী হামলার ধারাবাহিকতায় গত ৭ মে যুদ্ধে জড়ায় দুই চিরবৈরি দেশ ভারত-পাকিস্তান। এ যুদ্ধে ভারত পাকিস্তানের...

দুই বছর ধরে প্রতিদিন ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার সক্ষমতা আছে ইরানের

ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) এর একজন উপদেষ্টা বলেছেন, ইরানের এখনো দুই বছর ধরে প্রতিদিন ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা...