খালেদা জিয়ার জীবন নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে বলে বলছেন তার চিকিৎসক

Date:

Share post:

র অভাবে বিএনপির কারা প্রধান খালেদা জিয়ার জীবন শঙ্কা তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক।

দিনের পর দিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা সেবা না পাওয়ায় মিসেস জিয়ার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ বা পূর্ণাঙ্গ স্ট্রোকের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে বলে বলছেন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এফএম সিদ্দিকী।

বিবিসির সাথে এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, ট্র্যানজিয়েন্ট ইস্‌কেমিক অ্যাটাক (টিআইএ) হয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন গত ৫ই জুন পাঁচ মিনিট সময় অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলেন।

মস্তিষ্কে রক্তচলাচলের সাময়িক বাধার কারণেই এটা হয়ে থাকতে পারে, অধ্যাপক সিদ্দিকী বলেন, কিন্তু টিআইএ-র শিকার ীকে যদি দ্রুত বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে পরীক্ষানিরীক্ষা এবং চিকিৎসা না করা হয় তাহলে তার স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি থাকে সর্বোচ্চ ৭০%। এবং সেটা যে কোন সময়ে ঘটতে পরে বলে তিনি জানান।

“তার চিকিৎসক হিসেবে আমি খুবই উদ্বিগ্ন। এবং যতক্ষণ পর্যন্ত তার শারীরিক পরীক্ষাগুলো না হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের উদ্বেগ বা শঙ্কা কাটছে না,” বলছেন অধ্যাপক সিদ্দিকী।

এব্যাপারে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের কারি সার্জন ডা. মাহমুদুল হা বিবিসিকে জানান, খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যগলেত বিষয়টিকে কারা কর্তৃপক্ষ গুরুত্ব সহকারেই দেখছে। তার জন্য একজন মহিলা ফার্মাসিস্টসহ সার্বক্ষণিকভাবে তিনি নিক্ত রয়েছেন।যে কোন সময়ে ডাকলে তাকে আমি গিয়ে দেখি। পাশাপাশি অনুমতি সাপেক্ষে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের সাথেও শলাপরামর্শ করা হয়,” বললেন ডা. হাসান।

দুর্নীতির মামলায় চারমাস আগে সাজা দিয়ে খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠানোর পর থেকেই বিএনপির পক্ষ থেকে দল-নেত্রীর সুচিকিৎসার দাবি করা হচ্ছে।

এর মধ্যেই জানা যায় যে কারাগারের মধ্যে গত ৫ই জুন দুপর ১টার দিকে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়ে গিয়েছিলেন।

“আমরা তাকে দেখতে গিয়েছিলাম ৯ই জুন। সে সময় বিস্তারিতভাবে তার চেক-আপ করি,” বলছিলেন অধ্যাপক সিদ্দিকী, “সে সময় পেশেন্টের অন্য সব শারীরিক লক্ষণ স্বাভাবিক দেখা গেলেও তার কথা সামান্য জড়িয়ে যাচ্ছিল বলে আমাদের কাছে মনে হয়েছে।”

এছাড়া দাঁড়িয়ে থাকার সময় তার তিনি বলেন, তিনি যে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গিয়েছিলেন সেই ঘটনার কথাও খালেদা জিয়া মনে করতে পারছিলেন না।

অধ্যাপক সিদ্দিকী জানান, স্ট্রোকের ঝুঁকির বাইরে, খালেদা জিয়া ডায়াবেটিস এবং হাইপারটনেশনের শিকার। তার রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসও রয়েছে।

কারাগারে তার রক্তচাপের ওপর নিয়মিতভাবে নজর রাখা সম্ভব হচ্ছে না। ে সেটাও ঝুঁকির মাত্রা বাড়াচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।বিশ্বকাপ ২০১৮: রুশ নারীরা এত আলোচনায় কেন?

“ওনার একটা কন্স্ট্যান্ট পেইন আছে। ঘাড় থেকে বাঁ হাত বেয়ে ব্যথাটা পায়ের দিকে নেমে যায়। এটা একটা নিউরোলজিকাল পেইন। এই ব্যথাটা এতই অসহ্য যে উনি অনেকক্ষণ এক জায়গায় বসে থাকতে পারেন না।”

“এই কিন্তু আগে ছিল না। এই সমস্যা অতিসম্প্রতি তৈরি হয়েছে,” বলছেন তিনি।

খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা তাকে বেসরকারি ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার পরামর্শ দিলেও জেল কোড বিধির কথা উল্লেখ করে সরকার প্রথমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল ইউনিভার্সিটি (এমএমইউ) এবং পরে সম্মিলিত হাসপাতাল (সিএমএইচ)-এ তার চিকিৎসার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু দুটি প্রস্তাবই বিএনপির তরফ থেকে নাকচ হয়ে যায়।

খালেদা জিয়া বেসরকারি ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে চাইলেও সরকার তাতে অনুমতি দেয়নি।

ফলে এনিয়ে দু’পক্ষের অনড় অবস্থানের মধ্যে খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার প্রশ্নটি আটকা পড়ে আছে।

কিন্তু সিএমএইচ-এর মতো প্রথম শ্রেণির হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে কেন আপত্তি, বিবিসির এই প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক সিদ্দিকী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার কারণে এখানে একটি আস্থার সম্পর্ক তৈরি হয়েছে।

এটা শুধু খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রেই না, এই আস্থার প্রশ্নটি অন্য যে কোন রোগীর ক্ষেত্রেই খাটে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

খালেদা জিয়ার অবনতিশীল স্বাস্থ্যের কথা উল্লেখ করে ডা. এফএম সিদ্দিকী জানান, এই মুহূর্তে খালেদা জিয়ার সবচেয়ে যেটা প্রয়োজন তা হলো ডপলার টেস্ট এবং বিশেষ ধরনের এমআরআই – যে মেশিনটি শুধু ইউনাইটেড হাসপাতালে রয়েছে।

কিন্তু কারা কর্মকর্তারা বলছেন, খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য সম্পর্কে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের চার পাতার রিপোর্টটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল ইউনিভার্সিটিতে পাঠানোর পর সেখান থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে যে প্রস্থেটিক্স-সহনীয় এমআরআই মেশিন ঐ হাসপাতালেই আছে।

খালেদা জিয়াকে তার পছন্দসই হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নেয়ার দাবি জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মুখপাত্র ব্যরিস্টার আবু সায়েম এক বিবৃতিতে বলেন,”সরকার বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার জন্য উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা না করে নিকৃষ্টতম বর্বরতার পরিচয় দিচ্ছে। আইনে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও এধরনের আচরণ সভ্য সমাজে অগ্রহণযোগ্য।”

শেষ পর্যন্ত কোন্ হাসপাতালে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা হতে পারে, এই প্রশ্নটি এখন দু’পক্ষের চিকিৎসকদের আওতার বাইরে চলে গিয়ে রাজনৈতিক আঙ্গিনায় বল চালাচালিতে পরিণত হয়েছে। এই জটিলতার মীমাংসা না হওয়া পর্যন্ত খালেদা জিয়াকে তার নি:সঙ্গ কারাগারেই অপেক্ষা করতে হবে বলে দৃশ্যত মনে হচ্ছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Related articles

পুঁতে রাখা বোমা বিস্ফোরণে ৫ ইসরায়েলি সেনা নিহত

উত্তর গাজার বেইত হানুনে রাস্তার ধারে পুঁতে রাখা বোমা বিস্ফোরণে ৫ ইসরায়েলি সৈন্য নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় আরও...

বিহারের পূর্ণিয়ায় ‘ডাইনি চর্চার’ অভিযোগে এক পরিবারের পাঁচজনকে হত্যা

ডাইনিবিদ‍্যার অনুশীলনের অভিযোগ তুলে ভারতের বিহারের পূর্ণিয়ার একটি গ্রামে একই পরিবারের পাঁচজন সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে বলে পুলিশ...

‘তুই আওয়ামী লীগ করিস, বাঁচতে হলে ২০ লাখ টাকা দে’

রাজধানীর মিরপুরের পশ্চিম মণিপুরে এক ব্যক্তির বাসায় ঢুকে জোর করে টাকা আদায়ের অভিযোগে ছাত্রদল ও যুবদলের ৪ নেতা-কর্মীকে...

মিয়ানমারে সংঘর্ষের মুখে পালিয়ে ভারতে ঢুকেছে কয়েক হাজার মানুষ

মিয়ানমারে দুটি জান্তা-বিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠীর লড়াই-সংঘর্ষের মাঝে পড়ে কয়েক হাজার মানুষ পালিয়ে ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মিজোরামে ঢুকে পড়েছে।...