
পুরো বিশ্বজুড়ে এখন শুধু বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে আলোচনা, আর এক্ষেত্রে কোন অংশে পিছিয়ে নেই ভারতের কলকাতা শহর।
তবে এই শহরের পাগলামিটা অবাক করার মতো।
তাদের উন্মাদনা প্রধানত দুটি দলকে ঘিরে – আর্জেন্টিনা এবং ব্রাজিল।
একে তো পুরো শহর ছেয়ে গেছে এই দুই দেশের পতাকায়, সেইসঙ্গে বিয়ের আসরেও পাত্র-পাত্রী পছন্দের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে কে কোন দল সমর্থন করে সেটা।
কলকাতা শহর থেকে এমনকি প্রায় ৩০ মাইল দূরের একটি গ্রামেও এই উন্মাদনার প্রমাণ পাওয়া যায়। এখানকার চা ব্যবসায়ী শিব শঙ্কর পত্রের চায়ের দোকানটি দেখলেই বোঝা যায় বিশ্বকাপ নিয়ে তিনি কতোটা মেতে আছেন – আর মাতিয়ে রেখেছেন দোকান ঘিরে ভিড় করা এলাকাবাসীকে।
কারণ তার দোকান থেকে শুরু করে পাশের নিজের তিনতলা বাড়িটি সাদা ও আকাশী রঙে পেইন্ট করা । বিশ্বকাপ ফুটবল উপলক্ষে প্রিয় দল আর্জেন্টিনার পতাকার রঙে কিছুদিন আগেই সব রঙ করিয়েছেন তিনি।
মি. পত্র বলেন, “আমি মেসিকে ভালবাসি। সে আমার ভাইয়ের মতো। তাই তার প্রতি নিজের ভালবাসা প্রকাশ করতেই আমি আমার ঘর , দোকান সব আর্জেন্টিনার পতাকার রঙে সাজিয়েছি। আমি সব সময় তার সৌভাগ্য কামনা করি”।
চা ব্যবসার পাশাপাশি কৃষিকাজও করেন শিব শঙ্কর। তার হালচাষের গরুটি যে গোয়াল ঘরে রাখা হয়, সেটির ভেতরের পুরোটা একইভাবে সাদা ও নীল রঙে পেইন্ট করা।
একই সঙ্গে চারিদিকে রয়েছে ডিয়েগো ম্যারাডোনা আর লিওনেল মেসির পোস্টার। এরমধ্যে মেসির ছবিই বেশি।
এছাড়া পাশের পুজাস্থলটির চিত্রও একইরকম। এ নিয়ে কথা হয় শিব শঙ্করের মেয়ে নয়া পত্রের সঙ্গে।
তিনি জানান, “এটা আমাদের জন্য স্বাভাবিক, কারণ আমরা ফুটবল ভালবাসি। মেসিকে ভালবাসি। আমরা মেসির ছবি নিয়ে প্রার্থনা করি যেন সে আরও ভালো খেলতে পারে। তার প্রতি ভালবাসার কারণেই এতো ছবি টাঙিয়েছি।”
শুধু এই গ্রাম নয় বরং কলকাতা শহরের প্রতিটি কোনায় কোনায় এখন বিশ্বকাপের ডামাডোল বাজছে।
শহরের যেদিকেই চোখ যায় চারিদিকে শুধু আর্জেন্টিনা আর ব্রাজিলের পতাকা।
বিশ্বকাপ চলাকালীন এই পুরো শহরের মানুষই দুইভাগে ভাগ হয়ে থাকবে – যার একপাশে থাকবে আর্জেন্টিনার সমর্থক, অন্যপাশে ব্রাজিলের ভক্তরা।
ব্রাজিল সমর্থক তথাগত ব্যানার্জি জানালেন নিজ দলের প্রতি তার ভালবাসার কথা: “আমি জন্মের পর থেকেই ব্রাজিলকে সমর্থন করে আসছি। আমার গোটা পরিবার মানে দাদা-বাবা-মামা-কাকা সবাই ব্রাজিলের সমর্থক।”
“যদি আমি কখনো তাদেরকে বলি আমি ব্রাজিলের বদলে অন্য কোন দল যেমন ইংল্যান্ডকে সমর্থন করবো, তাহলে তারা নির্ঘাত ভীষণ অবাক হবে, রেগে যাবে, কষ্ট পাবে। কারণ ব্রাজিল আমাদের জন্য কেবল দল নয়, এক ধরণের আবেগ বলতে পারেন”।
পরে মি. ব্যানার্জির কাছে জানতে চাওয়া হয় যে একদিন যদি ভারতের ফুটবল দল ব্রাজিলের বিরুদ্ধে খেলতে নামেন, তখন তিনি কাকে সমর্থন করবেন? এমন প্রশ্নে যেন ভীষণ ভড়কে যান তিনি।
শেষে মিনমিন কণ্ঠে বলে ওঠেন, মনে হয় ব্রাজিলকেই সাপোর্ট করবো।
তখন ভারতের ক্রিকেট দল টেস্ট খেলছে। অথচ নিজ দেশের এই খেলা নিয়ে কারো যেন কোন আগ্রহই ছিল না।
বিশ্বের এতো প্রাণচঞ্চল এই শহরটি কিভাবে শুধুমাত্র এই দুটি ফুটবল দলের প্রতি তাদের সমর্থন জানাচ্ছে? তাও আবার এতো তীব্রভাবে?
প্রশ্নটি রাখা হয় খেলা বিশ্লেষক মুদা পোদেরিয়ার কাছে – “আমার ধারণা পেলে আর ম্যারাডোনার খেলার পর থেকে এই উন্মাদনাটা ছড়িয়ে পড়েছে। জয়টা এখানে মুখ্য নয়, কারণ ইংল্যান্ডও ১৯৬৬ সালে বিশ্বকাপ জিতেছে। কিন্তু ওই দল এতোটা জনপ্রিয়তা পায়নি।”
“আমার মনে হয় মানুষ আর্জেন্টিনা আর ব্রাজিলের খেলায় একটা শিল্প, একটা ছন্দ খুঁজে পেয়েছে। অনেকটা কবিতার মতো। তবে এই দুই দলের সমর্থকদের পাগলামী মাঝে-মাঝে মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। আমি এমনও দেখেছি যে ব্রাজিল সমর্থন করায় এক আর্জেন্টিনা সমর্থক বাবা ওই পরিবারে মেয়ের বিয়ে দেননি। এমন পাগলামী কলকাতায় অহরহ ঘটছে।”
আর্জেন্টিনা আর ব্রাজিল যদি এবারের বিশ্বকাপ জয় করতে না পারে, তাহলে বুয়েন্স আয়ার্স এবং রিও ডি জেনিরোর মানুষ ভীষণ কষ্ট পাবে।
তবে সেই সঙ্গে লাখ লাখ কলকাতাবাসীও ভেসে যাবে অশ্রুজলে।
আরো পড়তে পারেন:
বিশ্বকাপ ২০১৮: ইতিহাসের বিচারে কে চ্যাম্পিয়ন হতে পারে
বিশ্বকাপ ২০১৮: প্রধান ৮ দাবিদারের শক্তি ও দুর্বলতা
বিশ্বকাপে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেন যারা
বিশ্বকাপের সময় বিদেশি পুরুষদের সাথে সেক্স না করার আহবান
Source from: http://www.bbc.com/bengali/news-44514315