১৮ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ বৈধ

Date:

Share post:

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী ভিসি গের প্রস্তাব পেশ করা থাকলে, সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ অবৈধ বলার এখতিয়ার বা ক্ষমতা নেই বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি)।বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়া সনদ অবৈধ ঘোষণা করতে পারেন রাষ্পতি এবং আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আদালত ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান। তাই র ১৮ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সন বৈধ।

তবে কোনও বিশ্ববিদ্যালয় যদি ভিসি নিয়োগের প্রস্তাব না দিয়ে থাকে, সে ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের নিয়োগ করা ভিসিকে অপসারণ করবেন রাষ্ট্রপতি, ইউজিসি নয়। এ ক্ষেত্রে সনদ নিয়ে শিক্ষার্থীদের িত হওয়ার কোনও কারণ নেই।

গত ১৭ নভেম্বর ভারপ্রাপ্ত ভিসি পরিচালিত দেশের ১৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যলয়ের সনদ অবৈধ ঘোষণার বিজ্ঞপ্তি দেয় ইউজিসি। এ ঘট পর সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যলয়গুলোর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা উপরোক্ত যুক্তি তুলে ধরে।

তাদের দাবি, ২০১০ সালের আইনি ব্যাখ্যা অনুযায়ী প্যানেল প্রস্তাব দেওয়ার পর, ভিসি নিয়োগ করতে না পারার দায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের। বর্তমানে দেশের ১৮টি বিশ্ববিদ্যালয় ভিসি নিয়োগের প্যানেল প্রস্তাব দেওয়ার পর দীর্ঘ দিনেও ভিসি নিয়োগ না দেওয়ায় কর্তৃপক্ষ আইনি প্রক্রিয়ায় ভারপ্রাপ্ত ভিসি নিয়োগ দিয়েছে ।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উদ্যোক্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানায়, সনদ অবৈধ ঘোষণার এখতিয়ার বা ক্ষমতা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের নেই। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভিসি নিয়োগের জন্য প্যানেল প্রস্তাব দিয়েছে। আর এ বিষয়টি প্রক্রিয়াধীনও রয়েছে। এমতাবস্থায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ অবৈধ বলতে পারে না ইউজিসি। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় ভিসিহীন বলারও সুযোগ নেই।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দাবি, রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে ভিসি নিয়োগের প্যানেল প্রস্তাব রাষ্ট্রপতির হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষামন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর অনেক আগেই পাঠানো হয়েছে। কিন্তু ভিসি নিয়োগের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অথচ সনদ অবৈধ বলে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে তারা।

প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তপক্ষ সোমবার (২১ নভেম্বর) প্রকাশ করা বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ‘২০১০ সালের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ৩১(১) ধারা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভাইস চ্যান্সেলরকে নিয়োগ দানের জন্য প্রস্তাব পেশ করবেন এবং তাকে নিয়োগ দেবেন ামান্য রাষ্ট্রপতি।’

‘প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় দৃঢ়ভাবে জানাতে চায়, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়রের ভাইস চ্যান্সেলর নিয়মিত উপাচার্য হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত। এই উপাচার্য শিক্ষায় অবদানের জন্য রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সম্মানসূচক পদকপ্রাপ্ত। তার নিয়োগ রাষ্ট্রপতি বা চ্যান্সেলরের ‘সচিব’ হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চ্যান্সেলরের অনুমোদনের জন্য প্রক্রিয়াধীন আছে। রাষ্ট্রের অনুমোদন দেওয়া একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট অবৈধ ঘোষণা করার কোনও আইনগত ভিত্তি বা এখতিয়ার নেই ইউজিসির। কোনও কিছু অবৈধ বা বাতিল ঘোষণা করার এখতিয়ার আইনি প্রক্রিয়ায় আদালতের, অথবা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের। ইউজিসির বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষার্থীদের আতঙ্কিত হওয়াও কোনও কারণ নেই বলে জানায় প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।’

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘ইউজিসি কেবলমাত্র সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে মনিটর করতে পারে। কোনও কিছু অবৈধ বা বাতিল ঘোষণা করার এখতিয়ার তাদের নেই।’

এশিয়ান ইউনিভিার্সিটির রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মোশারফ হোসাইন  বলেন, ‘২০১৩ সালের ২২ অক্টোবর ভিসি নিয়োগের জন্য তিন সদস্য বিশিষ্ট প্যানেল দেওয়া আছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিব হিসেবে শিক্ষা সচিবের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির কাছে প্যানেল পাঠানো হয়েছে ভিসি নিয়োগের জন্য। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। কর্তৃপক্ষ ভারপ্রাপ্ত ভিসি নিয়োগ দিয়েছে। বিষয়টি সরাসরি ইউজিসিকে দুবার জানিয়েছি। তার পরেও ইউজিসি এমন বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে সেটি তাদের বিষয়।’

দি পিপলস ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেরশের সহকারি রেজিস্ট্রার শাহ নুরুন্নবি  বলেন, ‘আমার জানা মতে আইনগতভাবে ইউজিসি বিশবিদ্যালয়ের সনদ অবৈধ বলার কোনও এখতিয়ার রাখে না। এটি বাড়াবাড়ি। আমরা এর জানিয়েছি।’

তিনি ক্ষোভের সঙ্গে আরও বলেন, ‘আমি ইউজিসির সচিব ছিলাম, ৩২ বছর ইউজিসিতে চাকরি করেছি। কেন ইউজিসি এমন বিজ্ঞপ্তি দিলো,এতে আমার কিছু বলার নেই।’

প্রসঙ্গত, গত ২১ নভেম্বর ২০১০ সালের ৩১(১) ধারার উল্লেখ করে ১৮টি বিশ্বদ্যিালয়ের সনদ অবৈধ ঘোষণা করে বিজ্ঞপ্তি দেয় ইউজিসি। আইনের ৩১ (১) ধারায় বলা হয়েছে,‘চ্যান্সেলর কোনও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজ কর্তৃক প্রস্তাবিত কোনও ব্যক্তিকে ৪ (চার) বছর মেয়াদের জন্য উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর নিযুক্ত করবেন।’

সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দাবি, আইনের এই ধারা মেনেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভিসি নিয়োগের প্যানেল প্রস্তাব পাঠিয়েছে । কিন্তু দীর্ঘ দিনেও রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে ভিসি নিয়োগে শিক্ষা মন্ত্রণায় ব্যর্থ হয়েছে। তাই সরকার অনুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার আইন মেনেই ভারপ্রাপ্ত ভিসি নিয়োগ করা হয়েছে।

আইনের (৯) ধারায় বলা হয়েছে, ‘চ্যান্সেলর, সুস্পষ্ট ও গ্রহণযোগ্য কোনও কারণে, বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সুপারিশক্রমে, ভাইস-চ্যান্সেলরকে অপসারণ করিতে পারিবেন। তবে শর্ত থাকে যে, অপসারণের সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে সংশ্লিষ্ট ভাইস-চ্যান্সেলরকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ প্রদান করিতে হইবে।’

আইনের এই ধারার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো জানায়,কর্তৃপক্ষের নিয়োগ দেওয়া ভিসিকে চ্যান্সেলর অপসারণ করেননি। তাছাড়া, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়ার কথা থাকলেও, যেহেতু ভিসি নিয়োগে দীর্ঘ প্রক্রিয়ার জন্য দায়ী শিক্ষা সচিব। তাই আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ চাওয়ার সুযোগও রয়েছে। যদিও তার প্রয়োজন পড়েনি।

গত ২১ নভেম্বর বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি, দি পিপলস ইউনিভার্সিটি, ইবাইস ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া, রয়েল ইউনিভার্সিটি, ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটি, জার্মান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ঈশাখাঁ ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, জেডএইচ শিকদার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়,রাজশাহী সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইউনিভার্সিটি-আরএসটিইউ, রণদা প্রসাদ সাহা বিশ্ববিদ্যালয়, সিসিএন বিজ্ঞান ও প্রযক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, আর্মি ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি, কারিদাবাদ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি, সৈয়দপুর ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি এবং কুমিল্লা ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজির সনদ অবৈধ ঘোষণার উল্লেখ করে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Related articles

দুপুরের মধ্যে ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের পূর্বাভাস

দেশের চারটি অঞ্চলের ওপর দিয়ে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ...

চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ নেত্রী ফারমিন গ্রুপের চেয়ারম্যান জিনাত সোহানা গ্রেফতার

বায়েজিদ থানার ওসি মো. আরিফুর রহমান জানিয়েছেন, জিনাত সোহানা গত বছরের ৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম আদালত চত্বরে পুলিশের সঙ্গে...

জানা গেল এতদিন কোথায় লুকিয়ে ছিলেন মমতাজ

মানিকগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগমকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। সোমবার (১২...

জামায়াতে ইসলামীর বাতিল হওয়া নিবন্ধন ফিরে পেতে করা আপিলের শুনানি শুরু হয়েছে

রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বাতিল হওয়া নিবন্ধন ফিরে পেতে করা আপিলের শুনানি শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার (১৩ মে) সকাল...