জাতীয় চার নেতার পরিবার কে কেমন আছেন।

Date:

Share post:

জাতীয় চারনেতাকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস অপূর্ণ থেকে যাবে। জীবন দিয়ে যারা প্রমাণ করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও দেশপ্রেম। রক্তাত্ব এক স্মৃতি বাংলাদেশ বয়ে বেড়াচ্ছে এখনও। পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো দেশের স্বাধীনতার পথিকৃৎদের জেলখানায় হত্যার নজির আর কোথাও নেই। বিভীষিকাময় জেলহত্যা দিবসে জাতীয় চার নেতার পরিবারে রাজনীতি সংশ্লিষ্টদের নিয়ে আমাদের এই আয়োজন।
সৈয়দ নজরুল ইসলামের পরিবার
বাংলাদেশের প্রথম উপ-রাষ্ট্রপতি এবং মুক্তিযুদ্ধকালে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলামের পাঁচ সন্তানের মধ্যে একমাত্র সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত আছেন।
তার অন্য চার সন্তানের মধ্যে মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ সাফায়েতুল ইসলাম ও সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম ব্যবসা করছেন, এ ছাড়া দুই মেয়ের কেউ-ই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হননি।
সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দলের দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা ও সরকারের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
ছাত্রলীগের রাজনীতির মাধ্যমে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়া সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এর পর দীর্ঘদিন দলের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও দলীয় কার্যক্রমে দৃশ্যমান সক্রিয় ছিলেন না তিনি। ২০০৭ সালে দেশের রাজনৈতিক সঙ্কটের সময়ে দলের হাল ধরেন। যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক থেকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন পর পর দুই কাউন্সিল অধিবেশনে। এ সময়ে রাজনীতিবিদদের নিয়ে জনমনে নানা নেতিবাচক মনোভাব থাকলেও আওয়ামী লীগের মতো দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে রাজনৈতিক অঙ্গনে বিশেষ সম্মানের জায়গা তৈরি করতে পেরেছেন তিনি। বর্তমানে তিনি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম মেম্বার হিসেবে রয়েছেন। এছাড়াও লন্ডনে তিনি লেবার পার্টির রাজনিতী করেছেন সক্রিয়ভাবে।

তাজউদ্দীন আহমদের পরিবার
বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ আগাগোড়াই একজন তুখোড় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তার পরিবারের সদস্যদের মধ্যে স্ত্রী জোহরা তাজউদ্দীন, মেয়ে সিমিন হোসেন রিমি ও ছেলে তানজীব আহমদ সোহেল তাজ সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছেন। তাজউদ্দীনের অন্য দুই মেয়ে নিজেদের রাজনীতিতে জড়াননি।
জোহরা তাজউদ্দীন মারা গেছেন ২০১৪ সালে। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু এবং জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হলে ছত্রভঙ্গ আওয়ামী লীগকে সাংগঠনিক কাঠামের ওপর দাঁড় করানোর জন্য আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। সেনাশাসনের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে তিনিই প্রথম বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার দাবি করেন এবং প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে ১৫ আগস্ট ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে মিলাদের আয়োজন করেন।
একমাত্র ছেলে তানজীম আহমদ সোহেল তাজ গাজীপুর থেকে ২০০৮ সালের নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে সংসদ সদস্যপদ এবং মন্ত্রিত্ব ত্যাগ করে রাজনীতি থেকে বিদায় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র চলে যান।পরবর্তী সময়ে ওই আসনে তার বড় বোন সিমিন হোসেন রিমি উপ-নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। দশম জাতীয় সংসদেও রিমি নির্বাচিত হয়েছেন।
বাংলাদেশের সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দুটি পদে দায়িত্ব পালন করেছেন এই পরিবারের দুই সদস্য। তাজউদ্দীন আহম্মদ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। জোহরা তাজউদ্দীন আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ছিলেন।
তাজউদ্দীন আহমদের অপর দুই মেয়ে শারমিন আহমদ এবং মাহজাবিন আহমদ রাজনীতিতে যুক্ত হননি।
এম মনসুর আলীর পারিবার
বঙ্গবন্ধুর অন্যতম সহচর এম মনসুর আলীর পরিবারের সদস্যদের মধ্যে তার দুই ছেলে ও এক নাতি রাজনীতিতে নাম লিখিয়েছেন। এম মনসুর আলীর তিন ছেলের মধ্যে মোহাম্মদ নাসিম এবং ড. মোহাম্মদ সেলিম এবং নাতি তানভীর শাকিল জয় সংসদ সদস্য হয়েছেন। ড. মোহাম্মদ সেলিম গত বছর মারা গেছেন।এদের মধ্যে মোহাম্মদ নাসিম আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণ ফোরাম সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য। তৃতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

বায়তুল মোকাররম প্রাঙ্গনে চার নেতার জানাজা
১৯৮৬ সালে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৯৬ সালে সিরাজগঞ্জ সদর ও কাজীপুর আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে কাজীপুরের আসন ছেড়ে দিলে সেখানে তার ভাই ড. মোহাম্মদ সেলিম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।
২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আইনগত কারণে মোহাম্মদ নাসিম নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেননি। সেবার তার ছেলে তানভীর শাকিল জয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। দশম সংসদ নির্বাচনে আবারও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মোহাম্মদ নাসিম।
এ এইচ এম কামরুজ্জামানের পারিবার
বাংলাদেশের প্রথম সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ এম কামরুজ্জামানের ৬ সন্তানের মধ্যে রাজনীতিতে যোগ দিয়েছেন শুধু খায়রুজ্জামান লিটন। দুই ভাই এবং চার বোনের মধ্যে লিটন চতুর্থ। এই পরিবারের তৃতীয় প্রজন্মও এরই মধ্যে রাজনীতিতে নাম লিখিয়েছেন। তিনি হলেন খায়রুজ্জামান লিটনের মেয়ে আনিকা সাদিয়া অর্ণা।
খায়রুজ্জামান লিটন গত এক যুগের বেশি ধরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি আওয়ামী রাজনীতিতে পা রাখেন ১৯৮১ সালে। তখন রাজশাহী যুবলীগের একটি ওয়ার্ডের সহ-সভাপতি পদে আসীন ছিলেন। ১৯৮৬ সালে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পান। ১৯৮৮ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত টানা ২৬ বছর রাজশাহী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
২০১৪ সালের অক্টোবর মাসে অনুষ্ঠিত কাউন্সিলে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন।
এই পরিবারের তৃতীয় প্রজন্মের রাজনীতিক আনিকা সাদিয়া অর্ণা বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গত কমিটির (২০১১-১৫) বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়ক উপ-সম্পাদক ও বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি পদে রয়েছেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Related articles

আবারো এস আলমে আগুন 

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী এলাকায় এস আলম গ্রুপের চিনির গুদামের পর এবার তেলের মিলে আগুন লেগেছে। ফায়ার সার্ভিসের ৮টি ইউনিটের...

জিম্মি নাবিকদের উদ্ধার চেষ্টার সময় গুলি বিনিময়

সময় ডেস্ক সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর নাবিকদের উদ্ধারে অভিযান চালিয়েছে অন্য একটি জাহাজ। দুই...

শেষ ম্যাচে ভুটানকে উড়িয়ে দিলো বাংলাদেশ

সময় স্পোর্টস ডেস্ক সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল আগেই নিশ্চিত করেছিলো বাংলাদেশের মেয়েরা। ১০ মার্চ ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে মাঠে...

নারী দিবসে নারী কর্মীদের সম্মান জানিয়ে এবারই প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করছেন নারী কর্মীরা

সময় ডেস্ক আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আজ শুক্রবার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট পরিচালনা করেছেন নারীরা। রাজধানীর শাহজালাল...