কক্সবাজারে মুনাফাখোরের পাল্লায় রোহিঙ্গা শরণার্থীরা

Date:

Share post:

বাংলাদেশে কক্সবাজার অঞ্চলে রোহিঙ্গাদের দুর্দশাকে পুঁজি করে এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী ও লোকজন মোটা অঙ্কের মুনাফা লুটছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশ পর্যন্ত নৌকায় পৌঁছাতে দুপাশেই অনেকে বড় অংকের অর্থ দিয়েছেন বলে অভিযোগ করছেন। থাকার খুপরি বানাতে বাঁশ আর পলিথিনের দাম বেড়েছে বহুগুণ।

যাতায়াতেও তাদের কাছ থেকে অনেক বেশি অর্থ নেয়া হচ্ছে। তবে বিজিবি ও স্থানীয় পুলিশ বলছে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে এধরনের লোকদের সাজা দেয়া হচ্ছে।

মংণ্ডূর শিগদাপাড়ার আজিজুর রহমান গত রাতে নৌকায় করে এসে পৌঁছেছেন শাহপরীর দ্বীপ। সেখান থেকে আবারো নৌকায় করে টেকনাফের নয়াপাড়া।

আজিজুর রহমান বলছেন পরিবারের ১৮ জন সদস্যকে নিয়ে নৌকায় করে আসতে ওপারেই তাকে বার্মিজ মুদ্রায় ১৮ লাখ দিতে হয়েছে।

তিনি বলছেন তার পাড়ার প্রায় সব বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। তাই জীবনের ভয়ে বাঁচতে এই অর্থ তাকে খরচ করতে হয়েছে।

বাংলাদেশ অংশে পৌঁছানোর পর তার মতো বিপদগ্রস্ত রোহিঙ্গাদের সহায়তা করছে বহু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। কিন্তু একই সাথে কক্সবাজার অঞ্চলে রোহিঙ্গাদের দুর্দশাকে কেন্দ্র করে নানা ধরনের ব্যবসা গড়ে উঠেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। রোহিঙ্গাদের অসহায়তার সুযোগ নিয়ে মুনাফা লুটছেন এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী

কীভাবে সেটি হচ্ছে তার খানিকটা ধারণা দিয়ে টেকনাফের স্থানীয় সাংবাদিক এম আমানুল্লাহ আমান বলছেন, “ওরা বৃষ্টি থেকে বাঁচতে অনেকেই ছোট খুপরি বানাচ্ছে। বাঁশ ব্যবসায়ীরা একটা বাঁশ যেখানে বিশ টাকা করে বিক্রি করতো সেটা ধরেন চল্লিশ পঞ্চাশ টাকায় বিক্রি করেছে।”

“পলিথিনের দাম তাও দ্বিগুণ হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীরা রোহিঙ্গাদের নিয়ে ভালোই নানা রকম ব্যবসা শুরু করেছেন। আমাদের এলাকায় চালের দামও বস্তায় পাঁচ থেকে সাতশো টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে।”

মিয়ানমারের রাখাইনে নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে আগস্টের ২৫ তারিখ থেকে এ পর্যন্ত চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।

বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিজিবির টেকনাফ ব্যাটালিয়নের কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফুল ইসলাম বলছেন নৌকায় করে তাদের আনা-নেয়ার একটি ব্যবসা তারা দেখেছেন এবং সেটি তারা বন্ধ করারও চেষ্টা করছেন।

তিনি জানিয়েছেন, “সাগরপথে যারা এসেছেন তাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যাদের বাংলাদেশ থেকে নৌকায় গিয়ে তাদের নিয়ে আসা হয়েছে। নৌকার মাঝিরা তাদের কাছ থেকে তিন হাজার থেকে শুরু বিশ হাজার টাকা পর্যন্তও নিয়েছে।”

“রোহিঙ্গারা এখন খুব দামি প্যাসেঞ্জার। তারা এত বিপদগ্রস্ত তারপরও তাদের কাছ থেকে এভাবে টাকা পয়সা নেয়া হচ্ছে।”সুযোগ বুঝে মাঝিরাও কেউ কেউ রোহিঙ্গাদের পারাপার করাতে হাজার হাজার টাকা হাঁকছেন

তিনি আরো বলছেন, “তারা মাছ ধরার নাম করে সাগরে যাচ্ছে এবং এ ধরনের কাজ করছে। তো এখন আমরা জেলা প্রশাসনের সাথে কথা বলে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারী করেছি।”

কিন্তু বাংলাদেশে একবার পৌঁছানোর পরও তাদের বেশ অর্থ খরচ করতে হচ্ছে মাথার উপর একটু খুপরি তৈরি করতে বা ক্যাম্প পর্যন্ত যাতায়াতে।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার একেএম ইকবাল হোসেন বলছেন এ ধরনের ঘটনা ঠেকাতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে।

তিনি বলছেন, “কেউ যেন অসহায় মানুষদের নিয়ে ব্যবসা না করতে পারে সেজন্য আমরা তৎপর আছি। যদি আমরা এরকম খোঁজ পাই তাহলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে নানা মেয়াদে সাজা দেয়া হচ্ছে।”

“এখনো পর্যন্ত আমরা আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালত দিয়ে এপর্যন্ত আমরা ২৭০ জনকে সাজা দিয়েছি।”

তিনি দাবি করছেন গত কয়েক সপ্তাহে যে ধরনের পরিস্থিতি ঐ অঞ্চলে তৈরি হয়েছিল তার অনেকটাই তারা নিয়ন্ত্রণে এনেছেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Related articles

আবারো এস আলমে আগুন 

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী এলাকায় এস আলম গ্রুপের চিনির গুদামের পর এবার তেলের মিলে আগুন লেগেছে। ফায়ার সার্ভিসের ৮টি ইউনিটের...

জিম্মি নাবিকদের উদ্ধার চেষ্টার সময় গুলি বিনিময়

সময় ডেস্ক সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর নাবিকদের উদ্ধারে অভিযান চালিয়েছে অন্য একটি জাহাজ। দুই...

শেষ ম্যাচে ভুটানকে উড়িয়ে দিলো বাংলাদেশ

সময় স্পোর্টস ডেস্ক সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল আগেই নিশ্চিত করেছিলো বাংলাদেশের মেয়েরা। ১০ মার্চ ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে মাঠে...

নারী দিবসে নারী কর্মীদের সম্মান জানিয়ে এবারই প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করছেন নারী কর্মীরা

সময় ডেস্ক আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আজ শুক্রবার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট পরিচালনা করেছেন নারীরা। রাজধানীর শাহজালাল...