বাংলাদেশের জাতীয় ক্রিকেট দল নির্বাচন নিয়ে আরও একবার বির্তক জমে উঠেছে মমিনুল হককে উপেক্ষা করার চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই আবার তাকে দলে ফিরিয়ে আনার ঘটনায়।
প্রশ্ন উঠেছে যে বাংলাদেশের ক্রিকেট টিম নির্বাচন করছে কে বা কারা?
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের যে ১৪ সদস্যের টেস্ট দল বিসিবি প্রথম ঘোষণা করেছিল তাতে বাদ পড়েন মমিনুল হক এবং মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। প্রথমবারের মতো টেস্ট দল থেকে মমিনুল হক বাদ পড়েন।
কিন্তু মমিনুলের মতো খেলোয়াড় – যার ব্যাটিং গড় টেস্টে ৪৭ এর কাছাকাছি – তাকে দল থেকে বাদ দেয়ার কারণে ব্যাপক সমালোচনা ও প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।
একদিন পরই তাকে আবার দলে ফেরানোর কথা সংবাদ সম্মেলনে জানান বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান। এর আগে চারজন সিনিয়র খেলোয়াড় বিসিবি সভাপতির সঙ্গে দেখা করেন বলে গণমাধ্যমের খবর।
তবে টেস্ট দলে মমিনুল হককে না নেয়ার বিষয়কে ঘিরে খেলোয়াড় নির্বাচনের বিষয়টি নিয়ে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, তা অবশ্য নতুন কিছু নয়।
এর আগেও বাংলাদেশ ওয়ানডে এবং টেস্ট দলে খেলোয়াড় অন্তর্ভুক্তির বিষয় নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক ও সমালোচনা লক্ষ্য করা গেছে।
বাংলাদেশের ওয়ানডে দলে শুভাগত হোমকে রাখা, নাসির হোসেনকে দলে না নেয়া, কেন রিয়াদকে রাখা হলো বা কেন বাদ দেয়া হলো – এসব বিষয় নিয়ে আগেও বিতর্ক তুঙ্গে উঠেছিল।
কিন্তু প্রশ্ন হলো বাংলাদেশের ক্রিকেটে সিলেকশন নিয়ে এত বিতর্ক কেন?
বাংলাদেশের সাবেক ক্রিকেটার ফারুক আহমেদ মনে করেন: “সিলেকশন কমিটি এখন নামমাত্র আছে”।
“কে যে সিলেক্ট করে বুঝা যাচ্ছে না। এখন অনেক নির্বাচক। এখন নাকি খেলোয়াড়েরাও সিলেকশনের কাজ করে – পত্রিকায় দেখলাম। দল নির্বাচনের কাজটা যাদের, তাদেরই ই কাজটি করতে হবে,” বলেন ফারুক আহমেদ।
আলাপকালে আগের সিলেকশন প্রক্রিয়ার বিষয়টিও উল্লেখ করেন তিনি।
দলে কোচের ভূমিকা
ফারুক আহমেদ বলেন, “আগে খেলোয়াড় নির্বাচনের সময় কমিটি ক্যাপ্টেন ও কোচকে ডেকে এনে তাদের মতামত নিতো। তারপর কমিটি তাদের সিদ্ধান্তের কথা জানাতো।”
“মমিনুল হকের মতো ছেলেকে একা কোচের সিদ্ধান্তে বাদ দেয়া হলো, আর নির্বাচকেরা কিছু বললেন না – এটা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন সাবেক এই ক্রিকেটার।
তাঁর মতে, “এখন সবাই সিলেকশনের সাথে মিশে গেছে। এজন্য ঝামেলা বাড়ছে। এছাড়া বাইরে থেকে কোচ এনে কাজ করালে তার ক্ষমতা কতটা, সেটা বুঝিয়ে দিতে হবে। কোচ যদি খেলোয়াড়ের পারফরম্যান্স বাড়ানোর বদলে তাদের বাদ দেয়াতে মেতে থাকে তাহলে কিন্তু ভালো কিছু হবে না”।
“সাময়িক ফল পাওয়ার জন্য দলে এত পরিবর্তনে কিন্তু ভবিষ্যতে ভালো কিছু আসবে না,” বলছিলেন মি: আহমেদ।
আরেক সাবেক ক্রিকেটার গাজী আশরাফ হোসেন লিপুও একই ধরনের মন্তব্য করেন।
“টিম সিলেকশনের প্রক্রিয়ায় কোচ, ম্যানেজার – এদের অন্তর্ভুক্ত করার পর থেকে বিতর্ক কমেনি। কোচ আর নির্বাচকদের মধ্যে যেন বিতর্কটা কমে যায়, সেই লক্ষ্যে তাদের রাখা হয়েছিল। কিন্তু তাদের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া কতটা হয়েছে, সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত নই। বাইরে থেকে সিলেকশন দেখে আমাদের অসন্তুষ্টি বাড়ছে”।
সাবেক এই দুজন খেলোয়াড়ের কথায় একটি বিষয় বারবার উঠে আসে – ‘টিম সিলেকশনের দায়িত্বটা শুধুমাত্র কমিটির কাছে থাকা উচিত’।
“মাঠে খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সের উন্নতি কিভাবে ঘটানো যায়, খেলার স্ট্র্যাটেজি – এসবের মধ্যেই কোচের কাজ সীমাবদ্ধ থাকা উচিত। কোচের মতামত নেয়া যেতে পারে। কিন্তু সিলেকশন প্যানেলে কোচ রাখার যে সিদ্ধান্ত বিসিবি নিয়েছিল, আমি মনে করি এমন সিদ্ধান্ত যথার্থ নয়,” বলেন গাজী আশরাফ হোসেন লিপু।
তবে তিনি এও মনে করেন যে ক্রিকেট ও বিতর্ক পাশাপাশি চলবে। “ক্রিকেটের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে বিশ্বজুড়ে এমনটা চলে। কোনও খারাপের মধ্যে ভালো কিছু বের হয়ে আসে”।
তিনি আরও বলেন, “আমরা যদি গঠনমূলকভাবে আলোচনা করি, তাহলে সেখান থেকে সঠিক সমাধানও বেরিয়ে আসবে। আমি মনে করি না সবকিছু তলানিতে ঠেকবে”।
টিম সিলেকশন নিয়ে বিতর্ক: বিসিবি কী বলছে?
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের টেস্ট দলে মমিনুলের মতো নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড়কে প্রথমে না নেয়ায় ব্যাপক তোপের মধ্যে পড়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড বা বিসিবি।
যদিও একদিন পরই মমিনুলকে দলে ফিরিয়ে আনা হয়।
কিন্তু টিম সিলেকশনের বিষয়ে যে বিতর্ক ঘুরেফিরে আসছে, তা নিয়ে কি বিসিবি ভাবছে?
বিসিবির মুখপাত্র জালাল ইউনুস বলছেন, “মমিনুলকে নিয়ে যে বিতর্ক চলছিল তার নিষ্পত্তি করেছেন বোর্ড সভাপতি নিজেই। আমিও বলবো মমিনুল অবশ্যই ১৪ দলের সদস্যের দলে থাকা উচিত ছিল। কারণ সে অটোমেটিক চয়েস।”
তিনি বলেন, “হেড কোচের হয়তো প্ল্যান ছিল, তাই সে বাদ দিয়েছিল। অন্যদিকে নির্বাচকেরা চাইছিল মমিনুলকে রাখতে”।
কিন্তু নির্বাচকেরা চাওয়া সত্ত্বেও কেন তাহলে মমিনুলকে বাদ দেয়া হলো?
“এই সিদ্ধান্তটা এমন হওয়া উচিত ছিল না। হেড কোচের যে সফলতা তা অনুযায়ী তাঁর সিদ্ধান্ত প্রাধান্য দেয়া হলেও নির্বাচকরাও অভিজ্ঞ। তাঁদের সবার সিদ্ধান্ত এক হওয়া উচিত। কোচ ও নির্বাচকদের মতামত অনুযায়ী বেস্ট টিম হওয়া উচিত” – বলছিলেন জালাল ইউনুস।
মি: ইউনুস জানান “টিম সিলেকশনের ক্ষেত্রে সবার কাছ থেকে একক সিদ্ধান্ত যেন আসে, বোর্ড থেকে তেমন ডিরেকশন গেছে ইতোমধ্যে”