সালে তৎকালীন ইংলিশ প্রথম ডিভিশন ফুটবল লীগ ভেঙ্গে শীর্ষ ২০টি ক্লাব নিয়ে শুরু হয়েছিল প্রিমিয়ার লীগ। তারপর কালে কালে এটি হয়ে উঠেছে বিশ্বের সবচেয়ে আকর্ষণীয়, জনপ্রিয়, ব্যবসা-সফল ফুটবল লীগ।
বিশ্বের দুশটিরও বেশি দেশ এবং অঞ্চলে টিভিতে এই লীগ কোটি কোটি মানুষ দেখে। শুধু টিভি সত্ত্ব থেকেই বছরে ৩০০ কোটি ডলারেরও বেশি আয় করে প্রিমিয়ার লীগ। বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ক্লাবগুলোর অধিকাংশই এই লীগে। বিশ্বের অন্য যে কোন ফুটবল লীগের চেয়ে প্রিমিয়ার লীগের প্রতি ফুটবলার এবং ম্যানেজারদের আকর্ষণ অনেক বেশি।
ক্রীড়া বিশ্লেষক এবং সাবেক সহকর্মী উদয় শঙ্কর দাস শুরু থেকে কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করছেন প্রিমিয়ার লীগ। তিনি বলছেন, গত ২৫ বছরে প্রিমিয়ার লীগ আমূল বদলে গেছে। বিদেশী খেলোয়াড়, বিদেশী ম্যানেজার, বিদেশী মালিকদের সংখ্যাধিক্য এখন এতটাই যে প্রিমিয়ার লীগ এখন কতটা ইংলিশ তা নিয়ে বিভ্রান্তিতে ভোগা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
১৯৯২ তে প্রিমিয়ার লীগে ২৪২ জন খেলোয়াড়ের মধ্যে বিদেশী ছিল মাত্র ১৩ জন। সেখানে গত মৌসুমে সেই সংখ্যা বেড়ে ১১২ জন। আর বড় ক্লাবগুলোতে ইংলিশ ফুটবলার খুঁজতে হয়। যারা আছেন, তাদের অনেকেই মাঠে নামার সুযোগ পাননা। প্রথমদিকে প্রিমিয়ার লীগের এক ম্যাচ
ক্রীড়া বিশ্লেষক মিহির বোস বলছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ‘ফ্রি মুভমেন্ট’ অর্থাৎ ভিসা ছাড়া ভ্রমণ, বসবাস এবং কাজ করার নীতির ফলে প্রিমিয়ার লীগ শুরুর বছর পাঁচেক পর থেকে ইউরোপ থেকে ক্রমবর্ধমান সংখ্যায় ফুটবলার আসতে শুরু করে। এছাড়া, টিভি স্বত্ব থেকে টাকা পেয়ে প্রিমিয়ারশিপ ক্লাবগুলোর অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি যত বেড়েছে, বিদেশ থেকে ফুটবলার তত বেশি এসেছে।
“আগে সিরি আ বা লা লীগার ক্লাবগুলোর সাথে টাকায় পারতোনা ইংলিশ ক্লাবগুলো। প্রিমিয়ার লীগের পর তা বদলে যেতে শুরু করে। একসময় সাউথ আমেরিকানরা ইংল্যান্ডে আসতো না। এখন টাকার জন্য সবাই আসছে।”
প্রিমিয়ার লীগের প্রথম কবছর যে কজন বিদেশী খেলতেন তাদের অধিকাংশই ছিলেন স্ক্যানডিনিভিয়ান – নরওয়ে, সুইডেন এবং ডেনমার্কের। কিন্তু নব্বই দশকের শেষ দিক থেকে শুরু হলো স্প্যানিশ এবং ফ্রেঞ্চ ফুটবলারদের একচেটিয়া আধিক্য। গত মৌসুমে প্রিমিয়ার লীগের ৬৫ জনই ছিলেন ফ্রেঞ্চ এবং স্প্যানিশ। তাদের বেশিরভাগই ফরাসী।
তবে মিহির বোস বলছেন ফরাসী ফুটবলারদের বিরাট একটি অংশ আফ্রিকায় ফ্রান্সের সাবেক কলোনি থেকে আসা। “তারা প্রথমে ফ্রান্সে খেলে, তারপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের ফ্রি মুভমেন্টের সুযোগে চলে আসছে প্রিমিয়ার লীগে।”আর্সেনালের সাবেক ফরাসী তারকা থিয়েরি অরি। দুহাজার সালের পর থেকে ফরাসী ফুটবলারদের প্রাধান্য বাড়তে থাকে প্রিমিয়ার লীগে
শুধু ফুটবলারই নয়, প্রিমিয়ার লীগের অধিকাংশ ক্লাবের ম্যানেজার বিদেশী। শীর্ষ ক্লাবগুলোর মালিকানাও এখন বিদেশীদের হাতে।
তবে উদয় শঙ্কর দাস বলছেন, বিদেশী ফুটবলার, ম্যানেজার এবং পূঁজির এই প্রাধান্য প্রিমিয়ার লীগের সাফল্যের প্রধান কারণ। বিদেশীদের ভিড় যেমন প্রিমিয়ার লীগকে অসামান্য বাণিজ্যিক সমৃদ্ধি এনে দিয়েছ, কিন্তু একইসাথে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে যে এর পরিণতিতে সুযোগের অভাবে ইংল্যান্ডে ভালো ফুটবলার তৈরি প্রায় বন্ধ হওয়ার জোগাড় হয়েছে। এ ব্যাপারে বিধিনিষেধ তৈরির কথা বার্তাও চলছে এখন।
তবে ব্রিটেন ইংল্যান্ড ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে গেলে প্রিমিয়ার লীগের বর্তমান যে বৈশ্বিক চেহারা সেটা কতটা থাকবে তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ইউরোপীয় ফুটবলাররা তখন অবাধে আসতে পারবে না। মিহির বোস মনে করেন, ব্রেক্সিট প্রিমিয়ার লীগের বর্তমান জৌলুস, খ্যাতি, সাফল্যকে ক্ষতি করতে পারে।