গাজায় মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে ১৪ হাজার শিশু, সময় মাত্র ৪৮ ঘণ্টা

Date:

Share post:

জাতিসংঘের মানবিকবিষয়ক ও জরুরি ত্রাণ ন্বয়কারী ম ফ্লেচার সতর্ক করেছেন, ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ জা উপত্যকায় আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রায় ১৪ হাজার শিশু মৃত্যুবরণ করতে রে, যা মানবিক বিপর্যয়ের একটি ভয়াবহ দৃষ্টান্ত।

তিনি এই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, গাজার দুরাবার চরম পর্যায়ে পৌঁছানোর ফলে, যেখানে খাদ্য, ওষুধ এবং অন্যান্য জরুরি ত্রাণের অপ্রতুলতা শিশুদের জন্য বিশেষভাবে প্রাণঘাতী হয়ে উঠেছে।

মঙ্গলবার (২০ মে) টম ফ্লেচার র রেডিও-৪-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গাজার পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, গাজায় মানবিক বিপর্যয় এখন এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছেছে যেখানে প্রায় ১৪ হাজার শিশু মৃত্যুর মুখে পড়বে। তার এই বক্তব্যে তিনি গাজার জনগণের জন্য ক্রমবর্ধমান ট এবং খাদ্য ও স্বাস্থ্যসেবার অপ্রতুলতা তুলে ধরেন।

ফ্লেচারের মতে, ইসরায়েল কর্তৃক গাজায় আরোপিত অবরোধ এবং ত্রাণ সরবরাহে বাধার কারণে পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে, যার ফলে শিশুদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে।

প্রসঙ্গত, গাজায় খাদ্য সংকট একটি বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, বিশেষত শিশুদের জন্য। ইসরায়েল গাজার সীমান্ত বন্ধ করে রাখার কারণে সেখানে জীবন রক্ষাকারী পণ্য ও ত্রাণের প্রবাহ অত্যন্ত সীমিত হয়ে গেছে। এই অবরোধের কারণে গাজার ২০ লাখের বেশি বাসিন্দার জন্য খাদ্য, পানি এবং চিকিৎসা সরবরাহ অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে।

টম ফ্লেচার এই পরিস্থিতি সম্পর্কে বলেন, বর্তমানে গাজার অভ্যন্তরে একটি মারাত্মক খাদ্য সংকট চলছে এবং এটি শিশুদের জন্য বিশেষভাবে ভয়াবহ হয়ে উঠেছে।

গত কয়েক সপ্তাহে সেখানে পানির সংকটও তীব্র হয়েছে এবং সঠিক সময় ও পুষ্টিকর খাবার না পাওয়ার কারণে অনেক শিশুর শরীরে শারীরিক দুর্বলতা দেখা দিয়েছে। খাদ্যের অভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ছে, ফলে শিশুদের মৃত্যুর ঝুঁকি অনেক বেড়ে গেছে।

গাজার চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, চিকিৎসাসেবা না পাওয়ার কারণে বহু শিশু জীবন রক্ষাকারী চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, যা তাদের মৃত্যুর কারণ হতে পারে।

এ বছর মার্চের শুরুতে ইসরায়েলি বাহিনী গাজার ওপর ারও হামলা ো শুরু করার পর থেকে, গাজার মানুষের জন্য ত্রাণ সরবরাহ কার্যত বন্ধ হয়ে যায়।

তবে, আন্তর্জাতিক চাপের মুখে, সোমবার (১৯ মে) প্রথমবারের মতো ইসরায়েল গাজায় ত্রাণের কিছু ট্রাক প্রবেশ করতে দেয়। এই ত্রাণটি ছিল অত্যন্ত সীমিত, মাত্র ৫টি ট্রাক, যেগুলোর মাধ্যমে ২০ লাখেরও বেশি মানুষের জন্য খাদ্য ও পণ্য সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি।

টম ফ্লেচার এই সীমিত ত্রাণপ্রবাহের জন্য গাজার পরিস্থিতিকে ‘সমুদ্রে পানির একটি ফোঁটা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তার মতে, গাজার মানুষের জন্য এই পরিমাণ ত্রাণ কখনোই যথেষ্ট নয়। যদিও ত্রাণের ট্রাকগুলোর মধ্যে শিশুদের জন্য খাবার ও পুষ্টিকর খাদ্য ছিল, তবে এসব পণ্য গাজায় পৌঁছানোর পরও সাধারণ জনগণের কাছে পৌঁছানোর পথে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। অনেক সময় গাজার শহর ও গ্রামগুলোর মধ্যে ত্রাণ সরবরাহ পৌঁছানোর জন্য আরও বেশি ত্রাণ এবং নিরাপত্তা প্রয়োজন।

গাজায় চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতি সম্পর্কে টম ফ্লেচার আরও বলেন, ১৯ জানুয়ারি, হামাস এবং ইসরায়েলের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়েছিল, কিন্তু ইসরায়েল সেই চুক্তি ভঙ্গ করে গাজায় আবারও আক্রমণ শুরু করে মার্চের শুরুতে।

ইসরায়েলি হামলার কারণে এখন পর্যন্ত গাজায় ৫৩ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং প্রায় দেড় লাখ মানুষ আহত হয়েছেন। এই দীর্ঘস্থায়ী সহিংসতা এবং মানবিক সংকটের ফলে গাজার জনগণ প্রতিদিন আরও বড় বিপর্যয়ের মুখে পড়ছে।

যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার পর, ইসরায়েলি বাহিনীর আক্রমণের কারণে গাজার সব ক্ষেত্রেই জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গাজার হাসপাতালগুলোতে তীব্র সংকট তৈরি হয়েছে এবং বেশিরভাগ স্বাস্থ্যকেন্দ্র তাদের সেবার পরিসর সীমিত করতে বাধ্য হয়েছে, যার ফলে অনেক রোগী জরুরি চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের ত্রাণপ্রবাহে বাধা দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমালোচনা বাড়ছে। বিশেষত, মানবিক অধিকার ঠন এবং জাতিসংঘ বারবার ইসরায়েলকে ত্রাণপ্রবাহ সহজতর করার জন্য চাপ প্রয়োগ করছে। এই পরিস্থিতি আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে কারণ গাজার স্বাস্থ্যব্যবস্থা ধ্বংসের মুখে এবং সেখানে খোলা আকাশের নিচে হাজার হাজার মানুষ অবরুদ্ধ অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে।

গাজায় মানবিক সংকট এখন এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছেছে, যদি ত্রাণ সরবরাহ ও চিকিৎসা ব্যবস্থা দ্রুত এবং যথাযথভাবে পুনরুদ্ধার না করা যায়, তবে আগামী দিনগুলোতে গাজার জনগণের জন্য পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে।

জাতিসংঘ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং অন্যান্য মানবিক সহায়তা সংস্থা গাজার জনগণের জন্য আরও ব্যাপক ত্রাণ প্রেরণের জন্য সক্রিয় চাপ দিচ্ছে, কিন্তু ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ এখনো ত্রাণপ্রবাহ সীমিত করে রেখেছে।

গাজার শিশুদের জন্য এই সংকটের প্রভাব বিশেষভাবে গুরুতর এবং যদি ত্রাণ ও চিকিৎসার ব্যবস্থা না বৃদ্ধি পায়, তবে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় ১৪ হাজার শিশুর মৃত্যুর সম্ভাবনা যে বাস্তব হয়ে উঠবে, তাতে আর সন্দেহ নেই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Related articles

ইরানে আজ রাতেই ইন্টারনেট সংযোগ ফেরার ঘোষণা

আজ শনিবার রাতে (স্থানীয় সময় রাত ৮টায়) আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত হবে ইরানের ইন্টারনেট। দেশটির যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের বরাত...

মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার পথে ইসরায়েলই সবচেয়ে বড় বাধা- এরদোয়ান

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইপ এরদোয়ান বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে নতুন পরমাণু আলোচনার ঠিক আগে ইরানের ওপর ইসরায়েলের হামলার লক্ষ্য...

ইসরায়েলের সিসি ক্যামেরা হ্যাক করেছে ইরান, শহরজুড়ে আতঙ্ক

ইসরায়েলের বাসাবাড়ি ও বিভিন্ন স্থাপনায় থাকা সিসিটিভি হ্যাক করে তাৎক্ষণিক গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করছে ইরান। এরপর করা হচ্ছে...

হজ পালন শেষে দেশে ফিরেছেন ৪০ হাজার ৫২০ হাজি, মৃত্যু ৩৮

সৌদি আরবে পবিত্র হজ পালন শেষে দেশে ফিরতে শুরু করেছেন হাজিরা। হজ পালন করতে গিয়ে শুক্রবার (২০ জুন)...