ইয়াবা আসক্তিই রিসিলার আত্মহননের মুল কারন।

Date:

Share post:

‘আই অলওয়েজ কিপ চেঞ্জিং মি! নট দি পারসনালিটি, বাট ইন ফ্রেম’ লিখে গত শুক্রবার সকাল ৭টা ৩৭ মিনিটে ফেসবুকে নিজের একটি ছবি পোস্ট করেছিলেন র‌্যাম্প মডেল রিসিলা বিনতে ওয়াজির। বাংলায় স্ট্যাটাসের অর্থ দাঁড়ায়, ‘আমি নিজে সর্বদাই পরিবর্তনের মধ্যে আছি- ব্যক্তিত্বের ক্ষেত্রে নয়, কাঠামোগতভাবে।’
সে কথাগুলোই সত্য করলেন তিনি। আত্মহননের পথ বেছে নিলেও শেষ পর্যন্ত ব্যক্তিত্বের সঙ্গে আপস করেননি।
রিসিলার ফেসবুক ঘেঁটে, বন্ধু-স্বজন ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাংসারিক জীবনে সুখী ছিলেন না এই মডেল। বাইরে সব সময় হাস্যোজ্জ্বল থাকলেও পারিবারিকভাবে বিষাদে ডুবে থাকতেন তিনি। রিসিলার পেশা এবং লাইফস্টাইল নিয়ে অসুখী ছিলেন তার স্বামী বায়িং হাউস কর্মকর্তা ইমরুল হাসানও। কিন্তু ক্যারিয়ারের বিষয়ে এক চুলও ছাড় দেওয়ার পাত্রী ছিলেন না রিসিলা। এ ছাড়া রিসিলা নিয়মিত ইয়াবা সেবন করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হতো। শেষ পর্যন্ত স্বামীর ওপর রাগ-অভিমান আর ধরে রাখতে পারেননি তিনি। সিদ্ধান্ত নেন স্বামীকে সামনে রেখেই পরপারে পাড়ি দেবেন। অবশেষে গত সোমবার দুপুরে স্বামীকে ভিডিওকলে রেখে গুলশানের সুবাস্তু টাওয়ারে নিজ ফ্ল্যাটে ফ্যানের সঙ্গে ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস নেন রিসিলা। আত্মহত্যার ঘটনা সোমবার ঘটলেও তিনি কঠিন এই সিদ্ধান্তটি নিয়েছিলেন গত শনিবার গভীর রাতে। সেদিন রাত ২টা ৪ মিনিটে রিসিলা ফেসবুকের নিজ প্রোফাইলে সম্পূর্ণ কালো রঙের ফ্রেমে একটি ছবি আপলোড করেন। এর ২ মিনিট পর তার ফেসবুক ফ্রেন্ড অলড্রিন বিনু বিনুস কমেন্ট বক্সে লিখেন ‘কালা হইল ক্যামনে???’ ২ মিনিট পর বন্ধু সরন রহমান লিখেন ‘হোয়াট হেপেন্ড ডিয়ার?’। কিন্তু কোনো উত্তর দেননি রিসিলা। নানা প্রশ্নবাণে জর্জরিত হয়ে পরে নিজের সুন্দর একটি ছবি ফেসবুকে আপলোড করেন তিনি। সেটাই ছিল তার শেষ ছবি। সোমবার সকালে স্বামী ইমরুল হাসান অফিসের কাজে নরসিংদী গেলে সাড়ে ৩ বছরের একমাত্র মেয়েকে বোনের বাসায় রেখে আসেন রিসিলা। এরপর সুবাস্তুর ফ্ল্যাটে এসে ঠাণ্ডা মাথায় মোবাইল ফোনে হোয়াটসঅ্যাপে ভিডিওকল দেন স্বামীকে। এ সময় চরম বাগ্বিতার একপর্যায়ে স্বামীকে ভিডিওকলে রেখেই বলেন, দেখ, আমি কী করি। এ সময় হাতে ওড়না নিয়ে চেয়ারে দাঁড়িয়ে ফ্যানের সঙ্গে ওড়না বাঁধেন। এরপর নিজের গলায় ফাঁস দিয়ে চেয়ার ধাক্কা দিয়ে ফেলে ঝুলে পড়েন। পুরো দৃশ্য তখনো অবলোকন করছিলেন স্বামী ইমরুল। তার মাধ্যমে খবর পেয়ে স্বজনরা ছুটে গেলেও শেষ রক্ষা হয়নি। এর আগেই না ফেরার দেশে চলে যান এই র‌্যাম্প মডেল।
এ বিষয়ে রিসিলার স্বামী ইমরুল হাসান জানান, সে মাদকাসক্ত ছিল। বাইরে গিয়ে নিয়মিত ইয়াবা সেবন করত। ঘরেও চেষ্টা করত। এ নিয়ে বাধা দিলে হেনস্থা করা হতো তাকে। এসব নিয়ে অশান্তি লেগেই থাকত। ঘটনার চার দিন আগে রাতে এক বন্ধু তাকে ইয়াবা সেবনের দাওয়াত দিয়ে বাইরে ডাকে। এতে বাধা দিলে ক্ষেপে যায় রিসিলা। আত্মহত্যার আগে হোয়াটসঅ্যাপে ভিডিওকলেও এসব নিয়ে ঝগড়া হয় তার সঙ্গে। একপর্যায়ে তাকে ভিডিওকলে রেখেই ঘটনার ইতি টানেন রিসিলা। কিংকর্তব্যবিমূঢ় ইমরুল তখন তার শাশুড়িকে ঘটনা খুলে বললে তারা রিসিলাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে রিসিলার লাশের ময়নাতদন্ত শেষ হয়েছে। তবে ময়নাতদন্ত শেষে হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ রিসিলার মৃত্যুর বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
গুলশান থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিক জানান, রিসিলার সঙ্গে তার স্বামীর সম্প্রতি বনিবনা হচ্ছিল না। এসব নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন তিনি। ধারণা করা হচ্ছে, পারিবারিক কলহের জেরে আত্মহত্যা করেছেন রিসিলা। এ ঘটনায় সোমবার রাতে রিসিলার মা বাদী হয়ে একটি অপমৃত্যু মামলা করেছেন। তবে তিনি কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেননি। রিসিলার স্বজনরাও বিষয়িটি অপমৃত্যু বা আত্মহত্যা হিসেবেই দেখছেন। রিসিলার স্বামীর ভাষ্য ছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ে আমলে নিয়ে ঘটনার তদন্ত চলছে বলেও ওসি জানান।
রিসিলা মূলত র‌্যাম্প মডেলিং করতেন। এ ছাড়া টিভিতে কয়েকটি নাটক ও বিজ্ঞাপনচিত্রে তাকে অভিনয় করতে দেখা গেছে। বিভিন্ন ফ্যাশন হাউসের পোশাকের মডেলও ছিলেন তিনি। ‘স্বপ্ন’-এর সাবেক ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডরও ছিলেন রিসিলা। একমাত্র মেয়ে ও স্বামীকে নিয়ে গুলশানের সুবাস্তু টাওয়ারের ১০ তলার একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন এই মডেল।
এদিকে রিসিলার অসময়ে এভাবে চলে যাওয়া কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না স্বজনরা। রিসিলার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ফেসবুকে চলছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। কেউ তার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সমস্যাগুলো সামনে এনে মন্তব্য করছেন, কেউ প্রতিবাদ করছেন সেগুলোর। কেউবা প্রার্থনা করছেন রিসিলার জন্য। নিজ ফেসবুকে প্রোফাইল পিকচারে সম্পূর্ণ কালো রঙের ফ্রেমের ছবি আপলোডের বিষয়ে গত সোমবার সন্ধ্যা ৭টা ২৪ মিনিটে তার ফেসবুক ফ্রেন্ড টনি মাহমুদুল হাসান টনি লেখেন, ‘কালো (প্রোফাইল পিকচার) কেমনে হইল আজ বুঝলাম, কেন এই কাজটা করলা। গড ব্লেস ইউ।’ প্রায় একই সময়ে বন্ধু রুবেল চৌধুরী ওই পোস্টের কমেন্ট বক্সে লিখেন, এখন বুঝতে পারছি যে, কালো কেন হইছিল (প্রোফাইল পিকচার)।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Related articles

আবারো এস আলমে আগুন 

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী এলাকায় এস আলম গ্রুপের চিনির গুদামের পর এবার তেলের মিলে আগুন লেগেছে। ফায়ার সার্ভিসের ৮টি ইউনিটের...

জিম্মি নাবিকদের উদ্ধার চেষ্টার সময় গুলি বিনিময়

সময় ডেস্ক সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর নাবিকদের উদ্ধারে অভিযান চালিয়েছে অন্য একটি জাহাজ। দুই...

শেষ ম্যাচে ভুটানকে উড়িয়ে দিলো বাংলাদেশ

সময় স্পোর্টস ডেস্ক সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল আগেই নিশ্চিত করেছিলো বাংলাদেশের মেয়েরা। ১০ মার্চ ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে মাঠে...

নারী দিবসে নারী কর্মীদের সম্মান জানিয়ে এবারই প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করছেন নারী কর্মীরা

সময় ডেস্ক আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আজ শুক্রবার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট পরিচালনা করেছেন নারীরা। রাজধানীর শাহজালাল...