যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং জার্মানি ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েলি আক্রমণকে উৎসাহিত করার ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করেছিল। তাই তাদের এই কর্মকাণ্ডে জড়িত বলে বিবেচনা করা যেতে পারে। লন্ডনে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আন্দ্রে কেলিন বার্তা সংস্থা তাসের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন।
কূটনীতিক বলেন, ‘এই স্পষ্ট আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন লন্ডন কোনো আপত্তি ছাড়াই মেনে নিয়েছে। তবে ব্রিটিশরাও মধ্যপ্রাচ্যে একটি বড় যুদ্ধে জড়াতে তাড়াহুড়ো করছে না। তাই (যুক্তরাষ্ট্রের) হামলার পরপরই প্রথম কয়েক ঘণ্টার মধ্যে লন্ডন সর্বস্তরে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে গোলাবর্ষণে নিজেদের অংশগ্রহণ না থাকার দাবি জানাতে তৎপর হয়েছে।’
তিনি জানান, তবে একটু গভীরে খোঁজ করলে বোঝা যায় যে, বিষয়টি এমন নয়। ‘বিশেষ করে লন্ডনের—বার্লিন এবং প্যারিসের সঙ্গে মিলে—দীর্ঘদিন ধরে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির বদনাম করার চেষ্টার মধ্যে। এটি কার্যত এই দেশগুলোকে এই আগ্রাসনের সহযোগী করে তোলে।’
তিনি ব্যাখ্যা করেন, মার্কিন হামলা এবং ইরানের ওপর ইসরায়েলের আক্রমণের আগে যুক্তরাজ্য, জার্মানি এবং ফ্রান্সের প্রতিনিধিদের ইরানি পক্ষের সঙ্গে ভিয়েনায় আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তাদের (ইউরোপীয়দের) রাজনৈতিক কর্মকর্তারা সেখানে অনেকবার ভ্রমণ করেছেন। তারা বিভিন্ন পরামিতি নিয়ে ইরানের ওপর চাপ সৃষ্টি করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন এবং আইএইএ-এর রিপোর্ট ও এর বোর্ড অফ গভর্নরদের সভায় অনুমোদিত প্রস্তাবগুলোতে এই বিধানটি অন্তর্ভুক্ত করেছেন যে, আইএইএ ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কর্মসূচির অনুপস্থিতি সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিত করতে পারছে না। এটি ইরানের ওপর আমেরিকান হামলাকে ন্যায্যতা দেওয়ার জন্য করা হয়েছিল।
রুশ রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, ‘এই পটভূমিতে, এখানে (ইউরোপে) ইরান-বিরোধী প্রচারণা চালানো অবাক করার মতো কিছু নয়। স্পষ্টতই, ব্রিটিশ নেতৃত্বের পরিকল্পনায় রাশিয়ার মতো ইরানের সঙ্গে একটি ন্যায্য ও ন্যায়সঙ্গত সংলাপ গড়ে তোলা অনেক আগেই বন্ধ হয়ে গেছে।’
১৩ জুন ভোরে ইসরায়েল ইরানের মাটিতে বিমান হামলা চালিয়ে আগ্রাসন শুরু করে। ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে ইরান প্রতিশোধ নেয়।
এরপর নয় দিন ধরে ইসরায়েলি হামলার জবাবে পাল্টা হামলা চালিয়ে যায় ইরান। ২২ জুন ভোরে মার্কিন ভারী বোমারু বিমানগুলো তিনটি ইরানি পারমাণবিক স্থাপনায় আক্রমণ করে এবং সংঘর্ষে প্রবেশ করে।
পরের দিন সন্ধ্যায় তেহরান কাতারে অবস্থিত মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের বৃহত্তম মার্কিন সামরিক বিমানঘাঁটি আল উদেইদে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। মার্কিন কর্তৃপক্ষের মতে, কোনো হতাহত বা উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়নি।
এরপর ২৪ জুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেন, ইসরায়েল এবং ইরান সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষও জানায়, তারা মার্কিন প্রস্তাব গ্রহণ করেছে এবং ইরানের বিরুদ্ধে তাদের অভিযানের সমস্ত উদ্দেশ্য সম্পন্ন করেছে। পরিবর্তে তেহরান বলেছে, তারা আগ্রাসন বন্ধ করতে বাধ্য করে তেল আবিবের ওপর বিজয় অর্জন করেছে।