বগুড়া প্রতিনিধি:বগুড়ার কাহালু উপজেলায় পুকুরের তলদেশে সুরঙ্গ সৃষ্টি হয়ে সব পানি ও মাছ উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সেই মাছ ও পানি কোথায় গেছে কেউ বলতে পারছে না। পুকুরের মালিক নূরুল ইসলাম (৮০)।
মঙ্গলবার (২০ জুলাই) বিকেলে কাহালু উপজেলার পাইকড় ইউনিয়নের বাগইল পশ্চিমপাড়া গ্রামে এই ঘটনা ঘটে।
সরেজমিন ওই গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, নারী-পুরুষ ও শিশুরা দল বেঁধে দেখতে এসেছেন পুকুরটি। অনেকে কাদা মাড়িয়ে নিচে নেমে উঁকি দিয়ে দেখছেন সুড়ঙ্গের গভীরতা। পুকুরের মালিক নূরুল ইসলাম পাশেই ছিলেন। তিনি জানান, দীর্ঘদিন ধরেই তিনি পুকুরে মাছ চাষ করছেন। এবারও ২০০ কেজি মাছ ছেড়েছিলেন।
১৪ জুলাই বিকেলে হঠাৎ পুকুরের মাঝ বরাবরের পানিতে বুদবুদ উঠতে দেখেন। প্রচণ্ড গরমের কারণে হয়তো এমনটি হচ্ছে ভেবেছিলেন তিনি। শুক্রবার থেকে সেই বুদবুদ বাড়তে শুরু করে। সোমবার বিকেলে হঠাৎ পুকুরের পানি ৪ থেকে ৫ ফুট উঁচু হয়ে লাফিয়ে উঠতে শুরু করে। এ নিয়ে এলাকায় আতঙ্কও দেখা দেয়। পানির এই লাফালাফি দেখতে এলাকার মানুষ ভিড়ও জমাতে শুরু করে। সন্ধ্যার পর সেই অবস্থা কিছুটা কমে যায়। এরপর পুকুরের পানি পরের দিন বিকেলে হঠাৎ করেই কমতে শুরু করে। পুকুরের মাঝখানে পাক খেতে খেতে পানি নামতে শুরু করে। নিমিষের মধ্যেই গলা সমান পানি নাই হয়ে যায়। পানি তো নেই-ই, এমনকি কোন মাছের ছিটে ফোটাও ছিলো না ওপরে। পানি নেমে যাওয়ার পর তারা দেখতে পান পুকুরের মাঝ বরাবরে একটি বিশাল গর্ত। পরে নেমে গিয়ে দেখেছেন প্রায় ৫ থেকে ৮ ফুট গভীর সেই গর্ত। এতে তার প্রায় ৩ লাখ টাকার মাছ শেষ হয়ে গেছে বলে জানান নূরুল।
ওই গ্রামের বাসিন্দা ও পাইকড় ইউপি সদস্য হারুনুর রশিদ জানান, প্রায় ২০ বছর আগে ওই পুকুর থেকে বালু তুলে বাড়ি করেছেন নূরুল ইসলাম। এ কারণে সেখানে ধ্বস দেখা দিয়ে এটি হয়েছে।
তবে নূরুল ইসলাম জানান, বালু উত্তোলনের পর কয়েক দফা পুকুরটি তারা খনন করেছেন। তখন সেখানে এমন কোন লক্ষণই ছিলো না।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হয় বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক আব্দুল হাইয়ের সঙ্গে। তিনি জানান, তুরস্কসহ পৃথিবীর অনেক জায়গায় এমনটির নজির আছে। পাহাড়ি অঞ্চল বা খনি এলাকায় ‘সিঙ্ক হোল’ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সমতল এলাকায় এটি খুবই বিরল।
অধ্যাপক আব্দুল হাই জানান, ভূগর্ভ থেকে প্রচুর পরিমাণ পানি, বালু বা খনিজ পদার্থ উত্তোলন করলে নিচের স্তরে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়, সেই শূন্যতা পূরণের জন্যই এমন সুড়ঙ্গ বা গর্ত তৈরি হয়। এটি যেহেতু সমতল এলাকায় হয়েছে, এ কারণে এটি ভূতত্ত্ব জরিপ বিভাগের খতিয়ে দেখা উচিৎ। হঠাৎ এমনটি কেন হলো।
কাহালু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পাপিয়া সুলতানা বলেন, “ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরেছি। ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের চেষ্টা চলেছে।”