রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাব চত্বরে নিজের গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যাকারী সাবেক ছাত্রলীগ নেতা গাজী আনিসের মৃত্যুর ঘটনায় আমিন ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নূরুল আমিন (৫৫) ও তার স্ত্রী পরিচালক ফাতেমা আমিনকে (৪৫) গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
মঙ্গলবার (৫ জুলাই) সন্ধ্যার পর র্যাব-৩ এর একটি দল রাজধানীর উত্তরা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে।
র্যাব জানায়, ভিকটিমকে হেনোলাক্স কোম্পানিতে বিনিয়োগের জন্য প্ররোচিত করে। ভিকটিম প্রথমে অসম্মতি জ্ঞাপন করলেও পরবর্তীতে রাজি হয় এবং প্রাথমিকভাবে এক কোটি টাকা বিনিয়োগ করেন। পরবর্তীতে তাদের প্ররোচণায় ভিকটিম আরও ২৬ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন। অধিকাংশ টাকাই ভিকটিম ঋণ হিসেবে আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে ধার নিয়েছিল।
আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে শাহবাগ থানায় দায়ের করা মামলায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
মামলা ও অন্যান্য সূত্রের বরাত দিয়ে র্যাব জানায়, ২০১৭ সালে আমিন গ্রুপের কর্ণধার মো. নুরুল আমিন এবং তার স্ত্রী ফাতেমা আমিনের সঙ্গে ভিকটিমের পরিচয় হয়। ধীরে ধীরে তাদের সঙ্গে ভিকটিমের সখ্যতা এবং আন্তরিকতা গড়ে ওঠে। গ্রেপ্তাররা ২০১৮ সালে চিকিৎসার জন্য পার্শ্ববর্তী একটি দেশে গেলে সেখানে স্থানীয় একটি আবাসিক হোটেলে একসঙ্গে অবস্থান করে।
বুধবার (৬ জুলাই) বেলা ১২টায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
খন্দকার আল মঈন বলেন, “বিনিয়োগ করার সময় পরস্পরের প্রতি সম্মান এবং বিশ্বাসের কারণে তাদের মধ্যে কোনো চুক্তিনামা করা হয়নি। বিনিয়োগ পরবর্তী চূড়ান্ত রেজিস্ট্রি চুক্তিপত্র সম্পাদন করার জন্য ভিকটিম বারবার আসামিদ্বয়কে অনুরোধ করেন। কিন্তু তারা গড়িমসি করতে থাকে। এক পর্যায়ে আসামীদ্বয় প্রতি মাসে যে লভ্যাংশ প্রদান করত সেটাও বন্ধ করে দেয় এবং কয়েকবার তাদের লোকজন দ্বারা ভিকটিমকে হেনস্তা ও ভয়ভীতি প্রদর্শন চেষ্টা করে। বর্তমানে লভ্যাংশসহ ভিকটিমের ন্যায্য পাওনা তিন কোটি টাকার অধিক বলে জানা যায়।”
খন্দকার আল মঈন জানান, টাকা উদ্ধারের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে ভিকটিম আসামিদ্বয়ের বিরুদ্ধে কুষ্টিয়ার বিজ্ঞ আদালতে দুটি মামলা দায়ের করেন। এছাড়াও ওই টাকা ফিরে পাওয়ার জন্য গত ২৯ মে জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন। এরপর গত ৩১ মে ভিকটিম তার ফেসবুক আইডি হতে পাওনা টাকা আদায় সংক্রান্তে মামলা দায়ের বিষয়টি পোষ্ট করেন এবং বন্ধু-বান্ধব ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছে সহায়তা চান।
এজাহার সূত্রে আরও জানা যায়, ঘটনার দিন আসামিদ্বয়ের ভিকটিমের পাওনা টাকা পরিশোধের দিন ধার্য ছিল। কিন্তু ভিকটিম ওইদিন বিকালে আসামিদ্বয়ের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করলে আসামিরা ভিকটিমকে টাকা প্রদান করেনি। ভিকটিম আসামিদের আচরণে হতাশ হয়ে রাগে ক্ষোভে অভিমান করে গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।
গণমাধ্যম শাখার পরিচালক আরও জানান, গ্রেপ্তার নুরুল আমিন ১৯৮১-১৯৯৬ সাল পর্যন্ত গোপীবাগ ঢাকা এলাকায় কাদের নামে এক হোমিও হলে ১৫ বছর চাকরি করেন। ওই সময়ে তার একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠার কথা মাথায় আসলে ১৯৯১ সালে হেনোল্যাক্স কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করে ব্যবসা শুরু করেন। পরবর্তীতে কোম্পানির নাম পরিবর্তন করে আমিন ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি নামে নামকরন করে। ওই কোম্পানীর অধীনে হেনোলাক্স কসমেটিকস্ যেমন হেনোলাক্স কমপ্লেকশান ক্রিম, হেনোলাক্স স্পট ক্রিম, হেনোলাক্স মেছতা আউট ক্রিম ও হেনোলান্স হেয়ার অয়েল ও পোল্ট্রি ফার্মের ব্যবসা করে।
পরবর্তীতে বাজারে হেনোলাক্সের চাহিদা কমে গেলে ২০০৯ সালে সে আমিন হারবাল নামে কোম্পানি নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করে ব্যবসা শুরু করেন এবং ২০১৬ সালে হেনোলাক্সের ব্যবসা বন্ধ করে দেন। তাদের কাকরাইলে একটি ফ্ল্যাট, পুরানো পল্টনে স্কাই ভিউ হেনোলাক্স সেন্টার নামে একটি ১০ তলা ভবন, পিংক সিটিতে একটি ডুপ্লেক্স বাড়ি, মেরাজনগর কদমতলীতে হেনোলাক্স নামে ৪ তলা ভবন, মোহাম্মদবাগ কদমতলী এলাকায় হেনোলাক্স ফ্যাক্টরি রয়েছে।
বর্তমানে ওই ফ্যাক্টরিতে খান ফুড প্রোডাক্টস্, বন্যা ফুড প্রোডাক্টস্ ও জে কে এগ্রো ফুড নামে তিনটি ভিন্ন প্রতিষ্ঠান ভাড়ায় তাদের উৎপাদন চালিয়ে যাচ্ছে।
খন্দকার আল মঈন আরও জানান, গ্রেপ্তার ফাতেমা আমিন একটি বেসরকারি হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ থেকে ডিএইচএমএস সম্পন্ন করে তার স্বামীর আমিন হোমিও হলে প্রথমে এক বছর হোমিও চিকিৎসা করেন। তিনি তার স্বামীর প্রতিষ্ঠিত আমিন ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি তার স্বামীর আমিন হারবাল কোম্পানির দেখাশুনা করেন।
গ্রেপ্তার আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন আছে বলে জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।