ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস আজ

Date:

Share post:

ডেস্ক নিউ: আজ ৭ জুন, ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত বাঙালি জাতির র সনদ ছয় দফা র পক্ষে দেশব্যাপী তীব্র গণআন্দোলনের সূচনার দিন। ১৯৬৬ সালের এ দিনে বাংলার স্বাধিকার আন্দোলনকে স্পষ্টত নতুন পর্যায়ে উন্নীত হয়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি তাসখন্দ চুক্তিকে কেন্দ্র করে লাহোরে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের সাবজেক্ট কমিটিতে ৬-দফা উত্থাপন করেন এবং পরের দিন সম্মেলনের আলোচ্য সূচিতে যাতে এটি স্থান পায় সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেন। কিন্তু এ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধুর এ দাবির প্রতি আয়োজক পক্ষ গুরুত্ব প্রদান করেনি। তারা এ দাবি প্রত্যাখ্যান করে। প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধু সম্মেলনে যোগ না দিয়ে লাহোরে অবস্থানকালেই ৬-দফা দাবি উত্থাপন করেন।

এ নিয়ে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের বিভিন্ন খবরের কাগজে বঙ্গবন্ধুকে বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা বলে চিহ্নিত করা হয়। পরে ঢাকায় ফিরে বঙ্গবন্ধু ১৩ মার্চ ৬-দফা এবং এ ব্যাপারে দলের অন্যান্য বিস্তারিত কর্মসূচি আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদে অনুমোদন করিয়ে নেন।

৬-দফার মূল বক্তব্য ছিল- প্রতিরক্ষা ও পর্র বিষয় ছাড়া সকল ক্ষমতা প্রাদেশিক সরকারের হাতে থাকবে। পূর্ববাংলা ও পশ্চিম পাকিস্তানে দু’টি পৃথক ও সহজ বিনিময়যোগ্য মুদ্রা থাকবে। সরকারের কর, শুল্ক ধার্য ও আদায় করার দায়িত্ব প্রাদেশিক সরকারের হাতে থাকাসহ দুই অঞ্চলের অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার আলাদা হিসাব থাকবে এবং পূর্ববাংলার প্রতিরক্ষা ঝুঁকি কমানোর জন্য এখানে আধা- বাহিনী গঠন ও নৌবাহিনীর সদর দফতর স্থাপন।

বঙ্গবন্ধু ঘোষিত ৬-দফা দাবির মুখে পাকিস্তানের তৎকালীন সামরিক শাসক আইয়ুব খান বিচলিত হয়ে পড়েন। তিনি হুমকি দিয়ে বলেন, ৬-দফা নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে অস্ত্রের ভাষায় জবাব দেয়া হবে।

এদিকে ৬-দফা কর্মসূচি জনগণের মাঝে পৌঁছে দেয়ার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ সমগ্র পূর্ববাংলা সফর করেন এবং ৬-দফাকে বাঙালির বাঁচার দাবি হিসেবে অভিহিত করেন। ফলে শাসকগোষ্ঠী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ অন্যান্য নেতাকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করে। যশোর, ময়মনসিংহ ও সিলেটসহ অন্যান্য কয়েকটি স্থানে ৬ দফার পক্ষে প্রচারকালে বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হন।

ছয় দফা দাবী আদায় প্রসঙ্গে ‘কারাগারের রোজনামচা’ গ্রন্থে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, ‘আওয়ামী লীগ কর্মীরা যথেষ্ট নির্যাতন ভোগ করেছে। ছয় দফা দাবি যখন তারা দেশের কাছে পেশ করেছে, তখনই বোঝা হয়ে গিয়াছে যে তাদের দুঃখ কষ্ট ভোগ করতে হবে। এটা ক্ষমতা দখলের সংগ্রাম নয়, জনগণকে শোষণের হাত থেকে বাঁচাবার জন্য সংগ্রাম।’

তিনি আরও লিখেছেন, ‘আমার বিশ্বাস আছে আওয়ামী লীগের ও ছাত্রলীগের নিঃস্বার্থ কর্মীরা, তাদের সাথে আছে। কিছু সংখ্যক শ্রমিক নেতা- যারা সত্যই শ্রমিকদের জন্য আন্দোলন করে- তারাও নিশ্চয়ই সক্রিয় সমর্থন দেবে। এতো গ্রেপ্তার করেও এদের দমাইয়া দিতে পারে নাই।’

পরবর্তী সময়ে ঐতিহাসিক ৬-দফাভিত্তিক নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনই ধাপে ধাপে বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামে পরিণত হয়। এ দাবির সপক্ষে বাঙালি জাতির সর্বাত্মক রায় ঘোষিত হয় ১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক সাধারণ নির্বাচনের মধ্যদিয়ে। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বাঙালিরা বিী করে।

অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধুর দলকে জনগণ বিজয়ী করলেও স্বৈরাচারী পাকিস্তানের শাসকরা বিজয়ী দলকে সরকার গঠন করতে না দিলে ও বঙ্গবন্ধু জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে স্বাধীনতার পক্ষে আন্দোলন শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের।

আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা এবং সেই সময়ের ছাত্রনেতা তোফায়েল আহমেদ একটি নিবন্ধে লিখেছেন, ‘ছয় দফা’কে প্রতিহত করার জন্য পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠী বহু ষড়যন্ত্র করেছে। বঙ্গবন্ধুকে কারাগারে নিক্ষেপ করেছে। তাঁর বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দিয়েছে। তারপরও যখন‘ছয় দফা’ আন্দোলন রোধ করা যাচ্ছিল না, তখন বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলিয়ে চিরতরে তাঁর কণ্ঠ স্তব্ধ করে দেওয়ার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে স্বৈরশাসক আইয়ুব খান ‘রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিব ও অন্যান্য’ তথা আগরতলা মামলা দেন। সেদিন‘ছয় দফা’ দাবি আদায় এবং বঙ্গবন্ধুকে কারামুক্ত করতে আমরা ছাত্ররা ‘৬৯-এর জানুয়ারির ৪ তারিখে ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনে ৪টি ছাত্র ের সমন্বয়ে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে ছয়-দফাকে এগারো দফায় অন্তর্ভূক্ত করে গ্রামে-গঞ্জে-শহরে-বন্দরে-কলে-কারখানায় ছড়িয়ে দিয়েছিলাম।’

ঢাকা িদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এবং বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা‘র (বাসস) পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আ. আ. ম. স আরেফীন সিদ্দিক বলেন, ৬ দফাই এনে দিয়েছে আমাদের তথা বাংলাদেশের স্বাধীনতা। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর দূর দৃষ্টি, অন্তঃদৃষ্টি ও রাজনৈতিক বিচক্ষণতা এতই প্রখর ছিল যে, তিনি ৬ দফাকে এক দফার দাবিতে পরিণত করে বাংলার স্বাধীনতার আন্দোলনের ডাক দেন।

অওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, ছয় দফার সময়ে এটা কেবল স্বায়ত্তশাসনের দাবি, অর্থনৈতিক মুক্তির দাবি না- এমন বিতর্ক ছিল। তিনি বলেন, ৭০-এর নির্বাচন ছিল ৬-দফার প্রশ্নে ম্যান্ডেট।

রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব ও লেখক নূহ-উল আলম লেনিন বলেন, পাকিস্তান সৃষ্টির আগেই স্বাধীন বাংলাদেশের বিষয়টি বঙ্গবন্ধুর মাথায় ছিল। তাই ছয় দফা হঠাৎ কোন ব্যাপার ছিল না। বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ রাজনীতির লক্ষ্যই ছিল স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা। ছয় দফার ভেতর দিয়েই প্রকৃত অর্থে স্বাধীনতা এসেছে।

সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ছয় দফা মুক্তির সনদ না হলেও এটা ছিল মুক্তিযুদ্ধের একটা মাইল ফলক, যা অতিক্রম করার মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ সফল হয়েছিল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Related articles

৫ দাবি না মানলে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের

রাজধানীর সরকারি সাত কলেজকে একত্রিত করে বিশ্ববিদ্যালয় করার ঘোষণা দেওয়া হলেও নাম প্রস্তাব ছাড়া আর কোনো অগ্রগতি নেই...

রোহিঙ্গা ধরে নিয়ে সাগরে ফেলার বিষয়ে যা বলছে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট

ভারতের রাজধানী দিল্লি থেকে আটক করে অন্তত ৪০ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে সাগরে ফেলে দেওয়ার চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠেছে দেশটির...

বোরকা পরে ভাড়া বাসায় ওঠেন মমতাজ, ঘর থেকে বের হননি ৩ মাস

মধ্যরাতে বোরকা পরে মাইক্রোবাসে চড়ে রাজধানীর ধানমন্ডির একটি ভাড়া বাসায় গোপনে ওঠেন মানিকগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও...

ইন্টারনেটের দাম জনগণের ব্যবহার উপযোগী করতে হবে: উপদেষ্টা আসিফ

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, ইন্টারনেটের...