সাইফুল ইসলাম,
শরীয়তপুর প্রতিনিধি:
শরীয়তপুর পৌরসভার ধানুকা এলাকার এক প্রতিবন্ধী অসহায় পরিবারকে মারধর করে বসতঘর থেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়ে সেই বসতঘর দখলে নেন প্রভাবশালী আব্দুল হাই সিকদার ও তার ছেলে-মেয়ে, আত্মীয়-স্বজনরা। প্রতিবন্ধী অসহায় পরিবাটিকে বাড়ির বাইরে বের করে দেওয়ার পর ভেতর থেকে বাড়ির গেট লাগিয়ে ঘরের মালামাল লুটপাট, ভাংচুর ও বাইরে ছুড়ে ফেলে দিয়ে ঘরটি পুরোপুরি দখলে নেন। গেটের বাইরে থেকে ঘর দখলের এ দৃশ্য দেখে ঘরের মালিক প্রতিবন্ধী কাদের বেপারী ও তার স্ত্রী কল্পণা বেগম আহাজারী করতে থাকেন। স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর প্রথমে স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিক ওই বাড়িতে গিয়ে বাড়ির গেটের বাইরে প্রতিবন্ধী কাদের বেপারী ও তার স্ত্রী কল্পণা বেগমকে আহাজারী করতে দেখতে পান এবং গেটের ফাঁকা দিয়ে ঘর দখলের দৃশ্য দেখতে পান। এসয় সাংবাদিকরা পরিচয় দিয়ে বাড়ির গেট খুলতে বললে বাড়ির ভিতর থেকে আব্দুল হাই সিকদারের ছেলে, মেয়ে ও মেয়ে জামাই বলেন, গেট খোলা যাবেনা। বাড়ির ভিতরে সাংবাদিকদের কি কাজ। জেলার বড় সাংবাদিক পারভেজ আমাদের আত্মীয়। আপনারা গিয়ে তার সাথে কথা বলেন।
এ সময় প্রতিবন্ধী আব্দুল কাদের বেপারী ও স্ত্রী কল্পনা বেগম আহাজারী করতে করতে বলেন, ভাই আমাদের অসহায় সহজ সরল পাইয়া আব্দুল হাই সিকদার ও তার ছেলে মেয়ে আত্মীয় স্বজন মিলে আমাদের মেরে ঘর ঘেকে বের করে দিয়ে গেট লাগিয়ে দিয়েছে। এখন তারা আমার ঘরের মালামাল লুটপাট, ভাংচুর ও ঘরের বাইরে ফেলে দিচ্ছে। আপনারা আমাদের রক্ষা করেন।
পরে খবর পেয়ে পালং মডেল থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আক্তার হোসেন সহ পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে অনেক চেষ্টার পর গেট খুলে বাড়ির ভিতরে ঢুকেন। পরে অসহায় পরিবারটিকে তাদের ঘরে তুলে দিয় অভিযুক্ত চার জনকে আটক করে থানায় নিয়ে যান।
পরে কল্পনা বেগম বাদী হয়ে আব্দুল হাই শিকদার, শাহ আলম শিকদার, তন্ময়, রিমা ও মেবিনকে আসামী করে পালং মডেল থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। মামলায় আসামীদের বিরুদ্ধে হত্যা চেষ্টা, মারপিট, চার লাখ টাকা, সাড়ে ৫ ভরি স্বর্ণালংকার লুটপাট ও ভাংচুরের অভিযোগ আনা হয়।
প্রতিবন্ধী কাদের বেপারী বলেন, আব্দুল হাই সিকদার ও তার মেয়ে মেবিন ও রিমা বেগম এবং রিমার স্বামী তন্ময় আমাদের মারপিট করে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। এবং বসত ঘর থেকে ৪’লক্ষ টাকা ও সাড়ে ৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার নিয়া যায়। এছাড়া প্রায় আনুমানিক ৭০’হাজার টাকার আসবাবপত্র ভেঙ্গে ক্ষতিসাধন করে। এ ঘটনা আমি পুলিশকে জানাই । পুলিশ এসে আমাদের বসতঘরে উঠিয়ে দিয়ে যায় ও বাহিরে পড়ে থাকা আসবাবপত্র ঘরে নিতে নির্দেশ প্রদান করে।
তিনি আরও বলেন, আব্দুল হাই সিকদার ও তার মেয়ে মেবিন জালিয়াতি করে আমার বসত বিল্ডিং ঘরের স্থান দিয়ে ৮ শতাংশ জমি দলিল করে নিয়ে গেছে। কিন্তু আমি আমার বসত বিল্ডিং ঘর বিক্রি করি নাই। এ বসত বিল্ডিং ঘর নির্মাণ করতে আমার ৭০-৮০ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। এত টাকা খরচ করেছি বিল্ডিং ঘর বিক্রি করার জন্য নয়।
স্থানীয়সূত্রে জানান, প্রতিবন্ধী আব্দুল কাদের বেপারী জমি বিক্রি করেছে কিন্তু বিল্ডিং ঘর বিক্রি করে নাই। একজন প্রতিবন্ধীর পরিবারকে এভাবে ঘর থেকে বের করা অমানবিক কাজ হয়েছে। এর সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিচার হওয়া উচিত।
আব্দুল হাই সিকদার বলেন, আব্দুল কাদের আমাদের কাছে ভবন সহ জমি বিক্রি করেছে। ওকে তিনমাসের জন্য থাকতে দিয়েছি। কিন্তু তারা এখন বাড়ি থেকে বের হচ্ছে না। এজন্য আমরা তাদের বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছি।
পালং মডেল থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আক্তার হোসেন বলেন, খবর পেয়ে তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থলে গিয়ে অসহায় পরিবারটিকে তাদের বসতঘরে তুলে দিয়েছি। এবং ঘটনার সাথে জড়িতদের আটক করে থানায় নিয়ে আসি। পরে তাদের ছেড়ে দেই। বিষয়টি মিমাংসার জন্য প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।