নিজস্ব প্রতিবেদক : সাতকানিয়া উপজেলার কেওচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হক মিয়া (৮৮) খুন হন গৃহকর্মীর হাতে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ইতোমধ্যে , গৃহকর্মী জমির উদ্দিন গৃহকর্তাকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন।
তাঁর অভিযোগ, বেতন বাড়িয়ে দেওয়ার কথা বললেই রাগারাগি, গালমন্দ করতেন আব্দুল হক মিয়া। আর এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ঘুমন্ত অবস্থায় লোহার রড দিয়ে সজোরে আঘাত করার পর, মুখে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যার চেষ্টা করেন জমির। তাতেও মৃত্যু নিশ্চিত না হওয়ায় ছুরি দিয়ে আঘাত করে খুন করা হয় আব্দুল হক মিয়াকে। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে এমন বিবরণ দিয়েছেন গৃহকর্মী জমির।
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাতকানিয়া সার্কেল) জাকারিয়া রহমান জিকু এ কথা জানান।
এদিকে, গতকাল মঙ্গলবার বিকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত পুকুরের পানি সেচ করে পুলিশ হেফাজতে থাকা জমিরের দেখানো মতে, তিনটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ জানায়, রবিবার রাতে আব্দুল হক মিয়া আত্মীয়দের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলে রাত দেড়টার দিকে ঘুমিয়ে পড়েন। ভোর আনুমানিক ৫টার দিকে খুন্তি দিয়ে মাথায় সজোরে আঘাত করলে আব্দুল হক মিয়া চিৎকার দিয়ে উঠেন। এরপর ধস্তাধস্তি করে মুখে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হলে পরক্ষণে ঘর থেকে বেরিয়ে নিজের ঘর থেকে ধারালো ছুরি এনে তা দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করে আব্দুল হক মিয়ার মৃত্যু নিশ্চিত করেন জমির। এরপর ঘটনা থেকে নিজেকে আড়াল করতে ডাকাতির ঘটনা সাজাতে বাড়ির মালামাল তছনছ করেন জমির। পরে আব্দুল হক মিয়ার ব্যবহৃত একটি এবং জমিরের দুটি মিলিয়ে মোট তিনটি মোবাইল ফোন বাড়ির পেছনের পুকুরে ফেলে দিয়ে ঘরে ফিরে এসে কাপড় দিয়ে নিজেই নিজের পা, চোখ বাঁধলেও হাত বাঁধার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে লাশের পাশেই শুয়ে থাকেন জমির।
সকালে কাজের বুয়া এসে সামনের দরজা খোলা না পেয়ে পেছনের খোলা দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকে খাটের ওপর আব্দুল হক মিয়ার লাশ ও পাশেই জমিরকে পড়ে থাকতে দেখে চিৎকার দিলে স্থানীয়রা ঘটনাস্থলে যান।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকারিয়া রহমান জিকু বলেন, গৃহকর্মী জমির পুলিশকে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য দিয়ে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছে। কিন্তু একপর্যায়ে সে খুনের ঘটনা বিস্তারিত বর্ণনা করে। তার দেওয়া তথ্য যাচাই বাচাই করে দেখা হচ্ছে। এ হত্যাকাণ্ড আরও কেউ জড়িত আছে কি না, তা দ্রুততম সময়ের মধ্যে জানা যাবে।
সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন বলেন, আব্দুল হক মিয়ার ঘরের কর্মচারী জমির এ ঘটনায় শতভাগ জড়িত। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী আব্দুল মিয়ার বাড়ির পুকুর সেচ করে তিনটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
তিনি বলেন, খুনের ঘটনায় মৃতের বড় ছেলে নেজাম উদ্দীন বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামাদের আসামী করা হয়েছে।
এর আগে গত সোমবার সকালে নিজ বাড়ির শয়নকক্ষ থেকে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার কেওচিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল হক মিয়ার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।