পটুয়াখালী সদর উপজেলার কৌরাখালি গ্রামের মেয়ে আদুরি তার বাবা-মায়ের সপ্তম সন্তান।
অভাব আর অনটনের সংসার, তাই শৈশবেই তাকে শুরু করতে হয় অন্যের বাড়িতে কাজ করা।
পাঠানো হয় ঢাকায় কিন্তু সেখানেই মাত্র ১১ বছর বয়সে ভয়াবহ নির্যাতনের অভিজ্ঞতা আর চিহ্ন নিয়ে শেষ পর্যন্ত তাকে ফিরে যেতে হয় কৌরাখালি গ্রামে।
২০১৩ সালের ২৩শে সেপ্টেম্বর ঢাকায় ক্যান্টনমেন্ট থানা এলাকার একটি ডাস্টবিন থেকে যখন তাকে উদ্ধার করেছিলো পুলিশ, তখন শিশু আদুরি প্রায় মৃত।
পরে তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে আদুরির ওপর গৃহকর্ত্রীর চরম নির্যাতনের বিবরণ।
মামলা হয় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে।
পুলিশের তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী পল্লবীর ১২ নম্বর সেকশনের যে বাসায় কাজ করতে দেয়া হয়েছিলো সে বাসার গৃহকর্ত্রী ধারালো চাকু দিয়ে কেটে আর গরম ইস্ত্রি দিয়ে ছ্যাঁকা দিয়ে ক্ষতবিক্ষত করে আদুরির শরীর।
পরে মারাত্মক জখম অবস্থায় মরে গেছে মনে করে তাকে ফেলে দেয়া হয় ডাস্টবিনে, আর সেখান থেকেই মৃতপ্রায় আদুরিকে উদ্ধার করেছিলো পুলিশ।
এর পর আদুরিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর গঠন করা হয় উচ্চ পর্যায়ের মেডিকেল বোর্ড।
তখন চিকিৎসকরা বিবিসিকে জানান, আগুনের কারণে চামড়া কুঁচকে যাওয়া এবং থেঁতল যাওয়া মাংস সহ আদুরির মাথা থেকে পা সহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় জখমের চিকিৎসা করা হচ্ছে।
পাশে বসে থাকা আদুরির মা সাফিয়া বেগম বিবিসিকে বলেছিলেন যে তার মেয়ে তাকে বলেছে তার শরীরে ব্লেড দিয়ে পোঁচ দেওয়া হয়। এমনকি গরম ইস্ত্রি দিয়ে তার শরীরে ছ্যাঁকা দেওয়া হয়েছে।
পরে আদালতে গিয়েও গৃহকর্ত্রীর বিরুদ্ধে নির্যাতনের বর্ণনা দেয় আদুরি।
আদুরি জানায় সারা দিন কাজ করিয়ে শুধু মুড়ি কিংবা কখনো কখনো শুধু ভাত আর লবণ মরিচ দেয়া হতো খাওয়ার জন্য আর তার থাকার জায়গা মিলতো ব্যালকনিতে।
সেই গৃহকর্ত্রী অবশ্য নিজেও আদালতে আদুরিকে নির্যাতনের কথা স্বীকার করেছেন।
আজ সেই মামলার রায়ে আদালত গৃহকর্ত্রী নওরীন জাহান নদীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড আর এক লাখ টাকা জরিমানার রায় দিয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতের পিপি আলী আসগর স্বপন।
রায় ঘোষণার পর সন্তোষ প্রকাশ করেছেন আদুরির মা।