চেক চুরি ও প্রতারণার অভিযোগ সেই বহিস্কৃত প্রতারক ছাত্রলীগ নেতা আকিবুল ইসলাম আকিব (৩২)কে গ্রেফতার করেছে বাকলিয়া থানার পুলিশ৷ একই অভিযোগে আকিবের বাবা হাজী নুরুল আবছার (৬০) পলাতক রয়েছে৷আকিব চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক।
অভিযুক্ত পিতা-পুত্র আনোয়ারা উপজেলার খাসকামা,অলি মিয়া বাড়ির বাসিন্দা৷ তারা নগরীর বাকলিয়া থানাধিন কালামিয়া বাজার এলাকায় বসবাস করে৷
বাকলিয়া থানার ওসি (তদন্ত) মঈন উদ্দিন আসামী আকিবুল ইসলাম আকিবকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আজ (২৪ ডিসেম্বর) রাতে থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে সি,আর মামলায় আকিবকে গ্রেফতার করা হয় এবং পলাতক আসামীকে হাজী নুরুল আবছারকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি৷
জানা গেছে, ইতিপূর্বে ভূক্তভোগী শামিমা আক্তার মুক্তার একাধিক অভিযোগের ভিত্তিতে আকিব গ্রেফতার হয়ে কারাবরণ করে। সর্বশেষ গত ২৩ জুলাই তারিখে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ৬ষ্ঠ আদালতে চেক চুরি, প্রতারণা সহ বিভিন্ন অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেন শামিমা৷ উক্ত সি,আর মামলাটি (নাম্বার ১৬১/২০২০, বাকলিয়া) পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেয় আদালত৷ পিবিআই এর উপ-পুলিশ পরিদর্শক মোঃ শাহজাহান মামলাটি তদন্ত করে বেশ কিছু অভিযোগের সত্যতা পায় মর্মে গত ৩১ অক্টোবর আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন৷ এর প্রেক্ষিতে আদালত অভিযুক্ত পিতা-পুত্রের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করলে আজ বাকলিয়া থানা পুলিশ মামলার ২য় আসামী আকিবুল ইসলাম আকিবকে গ্রেফতার করে৷
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, নিজেকে পুলিশের এএসপি পরিচয় দিয়ে দুই কন্যার জননী শামিমা আক্তারের (৩২) সাথে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে আকিবুল ইসলাম আকিব (৩২)৷ স্বামী পরিত্যাক্তা শামিমা পুলিশ কর্মকর্তা ভেবে আকিবের সাথে গভীর সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন৷ এক পর্যায়ে আকিবের আসল পরিচয় প্রকাশ পায়। কিন্তু ততদিনে ভূয়া জাতীয় পরিচয় পত্র ব্যবহার করে শামিমাকে বিয়ে করে আকিব৷ নিজেদের স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে একত্রে বসবাস করার পাশাপাশি অন্তরঙ্গ মূহুর্তের ছবি ধারণ করা হয় শামিমার৷ সেই সাথে নানান কৌশলে নগদ অর্থ সহ নানান মূল্যবান সামগ্রী হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ তুলেন শামিমা৷
একপর্যায়ে সব হারিয়ে শামিমা ভূয়া স্বামী, কথিত এএসপি আকিবের বিরুদ্ধে বাকলিয়া থানায় অভিযোগ করেন। চলতি বছর ৬ জানুয়ারি দুই সন্তানের জননীকে ধর্ষণের অভিযোগে কথিত এএসপি বাস্তবে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আকিবুল ইসলাম আকিবকে গ্রেফতার করে বাকলিয়া থানা পুলিশ। সেই মামলায় কারাগারে থাকা অবস্থায় পরিবারের সদস্যদের যোগসাজসে ভূক্তভোগী শামিমার আপত্তিজনক ছবি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হয় মর্মে আবারো অভিযোগ তুলেন শামিমা৷ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা সেই মামলায় আকিবের সাথে তার পরিবারের সদস্যদের আসামী করা হয়৷ যার প্রেক্ষিতে আকিবের এক বোন গ্রেফতার হয়ে কারাবরণ করেন বলে জানা গেছে৷
দীর্ঘদিন জেলখেটে জামিনে বেরিয়ে শামিমা আক্তারের বিরুদ্ধে পালটা প্রতারণার অভিযোগ তুলে মামলা করেন আকিব৷ সেই মামলায় শামিমা আক্তার মুক্তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পারোয়ানা জারি করা হলে গত ২৪ নভেম্বর চকবাজার থানা পুলিশ দুই কন্যার জননী শামিমা আক্তারকে গ্রেফতার করে৷ সেদিন (২৪ নভেম্বর) দুপুরে ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার জাহান এর সিএম-৩ আদালতে জামিন আবেদন করা হলে জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো হয় শামীমা আক্তার মুক্তাকে।
আকিবের দায়ের করা মামলায় জেলখেটে জামিনে মুক্ত হয়ে শামিমা জানতে পারে ইতিপূর্বে তার বাসা থেকে একাধিক চেক চুরি করে আকিব তার বাবার মাধ্যমে নগদায়নের চেষ্টা করেছে৷ এক পর্যায়ে সেইসব চেক ফিরিয়ে দিতে শামিমার কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করার অভিযোগ তুলে আবারো আদালতে মামলা দায়ের করা হয়৷ আজ সেই মামলায় ফের গ্রেফতার হয়েছে আকিব৷