ইলিশের লাগামহীন দামের লাগাম টানতে এবার কেন্দ্রীয়ভাবে মূল্য নির্ধারণে যাচ্ছে সরকার। চাঁদপুর জেলা প্রশাসকের পাঠানো প্রস্তাবের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্তের পথে অগ্রসর হয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। ইতোমধ্যে প্রধান উপদেষ্টার সম্মতি পাওয়ার পর বিষয়টি বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম শুরু করার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।
চাঁদপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন মঙ্গলবার রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে ইলিশের দাম নির্ধারণের একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছিলাম। সেটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ হয়ে প্রধান উপদেষ্টার কাছে উপস্থাপন করা হলে তিনি এতে সম্মতি দেন।’
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাঠ প্রশাসন সংযোগ শাখা থেকে পাঠানো একটি অফিস আদেশে বলা হয়েছে, ইলিশের মূল্য নিয়ন্ত্রণে প্রস্তাবটি গ্রহণ করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে এবং এর বাস্তবায়ন অগ্রগতি সম্পর্কে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে অবহিত করতে বলা হয়েছে।
প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়, চাঁদপুরে ধরা পড়া ইলিশের স্বাদ ও সুনামের সুযোগ নিয়ে অসাধু ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা নিজেদের ইচ্ছেমতো দাম নির্ধারণ করছেন। ফলে সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে ইলিশ। শুধু চাঁদপুর নয়—বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, কক্সবাজার, বরগুনা, ঝালকাঠিসহ দেশের ১০ থেকে ১২টি উপকূলীয় জেলা থেকে ইলিশ আহরণ করা হয়। অথচ এসব জায়গায় উৎপাদনের কোনো সরাসরি খরচ না থাকলেও সিন্ডিকেটের কারণে বাজারে ইলিশের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে।
প্রস্তাবে আরও বলা হয়, যেহেতু ইলিশ একটি প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন মাছ এবং এর উৎপাদনে মূলত আহরণ ও পরিবহন ব্যয়ই জড়িত, তাই দেশব্যাপী একটি যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করা হলে ভোক্তারা সাশ্রয়ী মূল্যে ইলিশ কিনতে পারবেন এবং বাজারেও স্থিতিশীলতা আসবে।
জেলা প্রশাসক মোহসীন উদ্দিন বলেন, ‘আমরা চাঁদপুরে অংশীজনদের নিয়ে আলোচনা করে ইলিশের দাম নির্ধারণ করতে চেয়েছিলাম। তবে ইলিশ তো কেবল চাঁদপুরেই নয়, দেশের বিভিন্ন জেলায় ধরা পড়ে এবং বিক্রি হয়। তাই জাতীয়ভাবে মূল্য নির্ধারণের প্রয়োজন ছিল। সেই উদ্দেশ্যেই আমরা প্রস্তাব পাঠিয়েছিলাম।’
তিনি জানান, দাম নির্ধারণের বিষয়টি এখন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে। প্রস্তাব চূড়ান্তভাবে তারা গ্রহণ করলে শিগগিরই সারাদেশে ইলিশের নির্ধারিত মূল্য কার্যকর হতে পারে।
এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে ইলিশ বাজারে নৈরাজ্য কমবে এবং ভোক্তারা স্বস্তিতে মাছ কিনতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।