বাংলাদেশে রাজধানী ঢাকার পুলিশ বলছে, কবি ও প্রাবন্ধিক ফরহাদ মজহারের অপহরণের বিষয়টি নিয়ে রহস্য তৈরি হয়েছে, কারণ অপহরণের পর আদালতে ফরহাদ মজহার যে জবানবন্দি দিয়েছেন তাদের তদন্তে সেই তথ্যের সঙ্গে তারা মিল খুঁজে পাচ্ছেন না।
অন্য দিকে মি মজহারের পরিবার বলছে, অপহরণের তদন্ত না করে পুরো বিষয়টি যেন ভিন্ন খাতে প্রবাহের চেষ্টা চলছে। সবমিলিয়ে পুরো বিষয়টি নিয়ে তৈরি হয়েছে একপ্রকার ধোঁয়াশা।
যদিও পুলিশ জানিয়েছে, খুব তাড়াতাড়ি সব কিছুই পরিষ্কার করা হবে।
গত ৩রা জুলাই রাতে যশোর থেকে ফরহাদ মজহারকে পুলিশ উদ্ধার করে আনার পর তিনি ঢাকার আদালতে একটি জবানবন্দি দিয়েছেন।
পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, সেই জবানবন্দিতে তিনি বলেছেন ভোরে বাসা থেকে বের হওয়ার পর অপহরণ করে মাইক্রোবাসে তোলা হয় এবং চোখ বেঁধে রাখা হয়। এরপর একটি ফেরিতে পার হচ্ছেন বলেও বুঝতে পারেন।
সন্ধ্যা সাতটার দিকে তাকে ছেড়ে দেয় অপহরণকারীরা। এর মধ্যে কয়েক দফায় মুক্তিপণ চেয়ে পরিবারের সদস্যদের কাছে তার মোবাইল ফোন থেকে ফোনও করা হয়। এরপর থেকে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন মি. মজহার।
ওই ঘটনার নয়দিন পর ঢাকার পুলিশ কমিশনার মোঃ. আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, জবানবন্দিতে তিনি যেসব তথ্য উল্লেখ করেছেন, তাদের তদন্তে তার সঙ্গে অনেক কিছুই মিলছে না।
বুধবার ঢাকায় একটি অনুষ্ঠানে পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, এই অপহরণ নিয়ে অত্যন্ত রহস্য তৈরি হয়েছে।
“ফরহাদ মজহার সাহেব আদালতে ১৬৪ ধারায় যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটির তদন্ত করতে গিয়ে আমরা যে সিসিটিভি ফুটেজ পেয়েছি, কললিস্ট পেয়েছি, বস্তুগত সাক্ষ্যপ্রমাণ পেয়েছি, তার সঙ্গে ওনার বক্তব্যের কোন মিল নেই।”
তিনি আরও বলছেন, “তারপরেও বলবো, চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসার জন্য আমাদের আরো দুই একদিন সময় লাগবে। কারণ আমরা ইতিমধ্যে যেসব তথ্য সংগ্রহ করেছি, সেই তথ্যের বিচার বিশ্লেষণ চলছে। দুই একদিন পরেই পুলিশ মহাপরিদর্শক এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাবেন।”
খুলনায় ঢাকাগামী বাসে ওঠার আগে তিনি শহরের একটি রেস্তোঁরায় খেয়েছেন আর নিজেই টিকেট কেটেছেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা দাবি করেছেন।
বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যাচ্ছে, মি. মজহার এ সময় একজন নারীকে মোবাইলের মাধ্যমে টাকা পাঠিয়েছিলেন বলেও ওই নারী আদালতে একটি জবানবন্দীতে জানিয়েছেন, যদিও এরপর থেকে ওই নারীর আর খোঁজ মেলেনি।
আর সর্বশেষ খুলনা শহরের নিউ মার্কেটের একটি সিসি ফুটেজে দেখা যাচ্ছে যে, ফরহাদ মজহারের মতো দেখতে একজন ব্যক্তি বিকাল পাঁচটার দিকে নিউমার্কেটে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
কিন্তু সেখানে পোশাকআশাকে মিল মনে হলেও, চেহারা একেবারেই অস্পষ্ট। আর এই ভিডিওটির সত্যতাও যাচাই করে দেখা সম্ভব হয়নি।
তবে এটি সত্যি হলে, তাকে সাতটা পর্যন্ত আটকে রাখার তথ্য নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়।
খুলনার সাংবাদিক গৌরাঙ্গ নন্দী বলছিলেন, এই ঘটনায় বিভিন্ন স্থান থেকে পুলিশ কিছু তথ্য ও সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছেন বলে তিনি নিশ্চিত হয়েছেন।
পুলিশ বলছে, তারা যেসব তথ্যপ্রমাণ পাচ্ছেন, তা এখন বিশ্লেষণ করে দেখা হচ্ছে। পুরোপুরি যাচাইয়ের পর, দুই একদিনের মধ্যেই এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।
কিন্তু এসব জটিলতায় তদন্ত নিয়েই আস্থাহীনতায় ভুগছেন মি. মজহারের পরিবার।
মি. মজহারের স্ত্রী ফরিদা আখতার বলছেন, “অপহরণ হওয়ার যেসব লক্ষণ যেমন, তিনি আমাকে জানিয়েছেন যে, তাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে, মেরে ফেলবে, টাকার কথা বলা, এসব সারাদিন আমি যত ফোন পেয়েছি, মেসেজ পেয়েছি, সবই সাথে সাথে পুলিশকে জানিয়েছি। কারণ তারা আমার ওখানেই বসে ছিলেন।”
“ফোনটাও তারা ট্র্যাক করছিলেন। ফোনে যেহেতু তার কণ্ঠ আছে, তার মানে তিনিও সেখানে ছিলেন। তাহলে তখনি তো তাদের তাকে (ফরহাদ মজহার) পাওয়া উচিত ছিল। এখন তারা কী তদন্ত করছেন, কাদের জবানবন্দি নিচ্ছেন, তাদেরকে কি অবস্থায় কথা বলানো হচ্ছে, তা তো আমরা জানি না!”
তিনি প্রশ্ন তোলেন, “ওখানেই তো তারা তাকে ধরতে পারতো। তাহলেও তো বোঝা যেত এটা অপহরণ কি না?”
তিনি বলছেন, এখন সেই একটি ঘটনার তদন্ত না করে অন্য দিকের যেসব তথ্য নিয়ে ঘাটাঘাটি করা হচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে এখানে যে একটি অপহরণের অংশ আছে বা অপহরণ হয়েছে, সেই জিনিসটাকে তারা আর দেখছে না।
বরং মনে হচ্ছে, এই অপহরণের ঘটনাটিকে অন্য দিকে নেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।
ফরহাদ মজহার এবং পুলিশের এই ভিন্ন বক্তব্যের কারণে পুরো বিষয়টি নিয়েই তৈরি হয়েছে নানা প্রশ্নের।
তবে পুলিশের কর্মকর্তারা আভাস দিয়েছেন, বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের পুলিশ মহাপরিদর্শক সাম্প্রতিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে যে সংবাদ সম্মেলন করতে যাচ্ছেন, সেখানেই ফরহাদ মজহারের অপহরণের পুরো বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যেতে পারে।
আমাদের পেজে আরও পড়ুন :
এতো এতো পুরনো কাপড় কোথায় যায়?