তাই আমরা একজন আরেকজনের হাত ধরে বেঁচে থাকতে চাই।

Date:

Share post:

লেখাটা া জেনারেল হাসপাতালের এনেেশিওলজি াগীয় প্রধান ডা. শাহজাদ হোসেন মাসুম’র ফেসবুক থেকে নেওয়া।

কিছু লিখতে ভালো লাগেনা। এইসব গল্প কারো ভালো লাগার কিছু নেই। অনেকে মনে করতে পারে এইসব লোক দেখানো কাহিনী। তবুও বলি। লিখা থাক আমাদের কথা। আমার গল্প আমার সব সহকর্মীদেরই গল্প। আমাদের জীবন আর কবে স্বাভাবিক হবে আমরা জানিনা।

আমি ধনী ৎসক নই, কিন্তু আমার সৌখিনতা আমার নিকটের কাছে কৌতুকের বিষয়। আমি যেটুকু করি সেটুকু খুব গুছিয়ে করতে চাই। আমার রুমে আমি কোন জিনিষ একটু বাঁকা থাকলেও সহ্য করতে পারতামনা, আমি সেটা সোজা করে দিতাম। সেই আমি গত বাইশ দিন থেকে একটা ছোট ঘরে একা থাকি। আমার কাপড় ধোয়া, ঘর ঝাড়া, কাপ প্লেট ধোয়া নিজ হাতে করি। আমার ঘরের সামনে একটা ছোট টেবিলে প্লেট ধুয়ে রাখা থাকে। স্ত্রী এসে খাবারটা ঢেলে দিয়ে যান। পঞ্চাশোর্ধ বয়সের মাষ আমি বিছানার পায়ের কাছে একটা টুলে বসে কোলে প্লেট একা একা খেয়ে নেই। তারপর প্লেটটা ধুয়ে রেখে ার সেই ছোট ঘরটায় ঢুকে যাই। রোষ্টার অনুযায়ী ডিউটির জন্য অপেক্ষা করি। যখন সময় আসে, ডিউটিতে যাই। ফিরে এসে আবার সেই ছোট ঘর। আমার ছোট ছেলেটি মাঝেমাঝেই আমার ঘরের সামনে এসে ধমক খেয়ে চলে যায়।

আমি আমার ারের সাথে আবার কবে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারব বা আদৌ করতে পারব কিনা জানিনা। আমি একা বসে আমার স্বাভাবিক দিনগুলোর কথা ভাবি। এর মাঝে আবার অন্য এক হাসপাতালের সহকর্মী দেখলাম লিখেছেন, আমরা কুর্মিটোলার ডাক্তাররা রেডিসনে আরাম করছি। জেনে লিখেন ভাই। রেডিসন আমাদের নেয়নি, হয়তো আপনাদের নিবে, নেতা মানুষ। কুর্মিটোলার পরিচালক মহোদয় দ্বারে দ্বারে ঘুরে ঘুরে গুলশানে আমাদের জন্য একটি হোটেল ব্যাবস্থা করছেন। যাদের বাসায় এরকম একটি আলাদা রুম নেই তারা ব্যাগ ট্যাগ নিয়ে সেখানে উঠেছেন। সেখানে তারা কতটা আরাম করছেন তা একবার দেখে যাবেন।

এই গল্প আমার একার নয়। আমার সব সহকর্মীদেরই একই গল্প। মানুষ আমাদের কাছে আরো চায়। আমাদের দমবন্ধ লাগতে থাকে। তারা আমাদের অনেক ত্রুটির কথা বলে যায়। আমাদের ক্লান্ত লাগে। তারা জানেনা আমরা কোন বিশেষ সুবিধা প্রাপ্তির আশায় কাজ করছিনা। এই দেশের প্রতিটা ডাক্তার শুধুমাত্র তারা ডাক্তার এই জন্য কাজ করে যাচ্ছে। প্রায় একশ জন ডাক্তার, ষাট জনের মতো নার্স ইনফেক্টেড হয়ে গেছে। এটি সবার কাছে একটি সংখ্যাই শুধু। আমাদের কাছে তা নয়। আমার কাছে আমার কন্যাসমা ডাক্তার মেয়েটি পজিটিভ হবার পর ফোন করে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে, স্যার আমার কি হবে? আমি পারলে তার মাথাটি আমার বুকে ধরে রাখতাম, পারিনা। শুধু কান্না আটকে বলি, তোমার কিছু হবেনা বেটা, কাঁদেনা বেটা, কাঁদেনা।

এইসব গল্প কোথাও লেখা হবেনা। আমাদের জন্য কেউ কিছু করবেনা, আমরা বুঝে গেছি। তাই আমরা একজন আরেকজনের হাত ধরে বেঁচে থাকতে চাই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Related articles

জুলাইয়ে শহীদ হতে না পারাটা আমার জন্য আফসোস—ফেসবুকে আসিফ মাহমুদ

যুব, ক্রীড়া এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া শুক্রবার (৪ জুলাই) রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক...

বিশাল বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল ইতালির রাজধানী, আহত ২৭

ইতালির রাজধানী রোমের পূর্বাঞ্চলীয় একটি পেট্রোল পাম্পে বিশাল বিস্ফোরণ ঘটেছে। শুক্রবার (৪ জুলাই) এই বিস্ফোরণে ১০ পুলিশ কর্মকর্তা...

ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য বন্ধ করুন : জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞ

ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্যিক ও আর্থিক সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন অধিকৃত ফিলিস্তিনি...

ইরানে হামলায় যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানিও জড়িত: রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত

যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং জার্মানি ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েলি আক্রমণকে উৎসাহিত করার ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করেছিল। তাই তাদের...