ছিলাম হুইসেল কুইন, এখন শিস প্রিয়া: অবন্তী সিঁথি

Date:

Share post:

ফেসবুকের ওয়ালজুড়ে গতকাল শনিবার রাতে ছিল এশিয়া কাপ ক্রিকেটে তামিম-মুশফিকদের ক্রীড়ানৈপুণ্যের বন্দনা। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রিকেটের এই দুই তারকার পাশাপাশি ফেসবুকে এক সংগীত তারকার প্রশংসায় মেতে ওঠেন অনেকে। ভারতের জি বাংলার জনপ্রিয় রিয়্যালিটি শো ‘সারেগামাপা’য় বাংলাদেশের মেয়ে অবন্তী সিঁথি কণ্ঠের জাদু আর গানের ভিন্ন রকম উপস্থাপনা দিয়ে ভারতের গুণী সংগীত তারকাদের চমকে দেন। অবন্তীর পরিবেশনা দেখে প্রতিযোগিতার মূল বিচারক শ্রীকান্ত আচার্য, শান্তনু মৈত্র, কৌশিকী চক্রবর্তী, মোনালী ঠাকুর ছাড়া অন্য বিচারক পণ্ডিত তন্ময় বোস, রূপঙ্কর বাগচী, জয় সরকার ও শুভমিতা দাঁড়িয়ে সম্মান জানান। এদিকে ‘সারেগামাপা’ অনুষ্ঠানের নবম আসরের গতকালের পর্বটির প্রচার শেষ না হতেই অবন্তীর অংশটুকু ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যায়। সেই ভিডিও ক্লিপ অনেকেই ফেসবুকে শেয়ার করেন, অবন্তীকে শুভেচ্ছা জানান। আজ রোববার তা আরও বেড়ে যায়। অবন্তী সিঁথি এখন আছেন ভারতের কলকাতায়। সেখান থেকে আজ সকালে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেন তিনি।

আপনার গান শুনে ‘সারেগামাপা’র বিচারক শান্তনু মৈত্র, শ্রীকান্ত আচার্য, কৌশিকী চক্রবর্তী, মোনালী ঠাকুর দাঁড়িয়ে সম্মান জানিয়েছেন।
ওই সময় আমি কথা হারিয়ে ফেলেছিলাম। কী বলব, বুঝে উঠতে পারছিলাম না। ভেতরে-ভেতরে খুব আনন্দ হচ্ছিল। স্টেজে দাঁড়িয়ে নিজের হার্টবিট শুনতে পাচ্ছিলাম। ভাবতেই পারিনি, এই পরিবেশনা তাঁদের এতটা ভালো লাগবে! এটা আমার জন্য অসাধারণ অভিজ্ঞতা। আমি ভীষণ খুশি।

মঞ্চে বিচারকেরা আপনাকে অনেক কিছু বলেছেন। অনুষ্ঠান শেষে তাঁদের কারও সঙ্গে কোনো কথা হয়েছে?
না। তবে আমাকে সবাই হুইসেল বাজাতে দেখেছেন। অনুষ্ঠান শেষে দেখি মোনালী ঠাকুর আমার সেই হুইসেল বাজানোর চেষ্টা করছেন!

পণ্ডিত তন্ময় বোস বললেন, আজ থেকে আপনার নাম শিস প্রিয়া।
এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না। সবাই খুব প্রশংসা করছিলেন। এর মধ্যে পণ্ডিত তন্ময় বোস আমাকে ‘সওয়াল-জবাব’ করতে বললেন। আমিও সাহস করেছি। এরপর তিনি আমাকে ‘শিস প্রিয়া’ নাম দিয়ে দিলেন! আগে ছিলাম হুইসেল কুইন, এখন শিস প্রিয়া।

এবার কিশোর কুমারের ‘আকাশ কেন ডাকে’ গেয়েছেন। পরের পর্বে কোন গানটি গাইবেন?
আমরা কয়েকটা গান প্রস্তুত করে রাখি। যেকোনো মুহূর্তে গান বদলে যায়। তবে ‘চেয়ে চেয়ে দেখি সারা দিন’ গানটি গাইতে পারি।

‘সারেগামাপা’র সঙ্গে কীভাবে যুক্ত হলেন?
আমি কিছু শেখার জন্য এই রিয়্যালিটি শোতে অংশ নিয়েছি। গুরুজির কাছে ছোটবেলায় শিখতাম। আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা জামালপুরে। সেখান থেকে ঢাকায় আসার পর সেভাবে আর গান শেখা হয়নি। শিখব বলেই ‘সারেগামাপা’য় অংশ নিয়েছি।

আপনি বাংলাদেশের রিয়্যালিটি শোতে অংশ নিয়েছিলেন, এখন ভারতে। দুই দেশের অনুষ্ঠান আয়োজনে কোনো পার্থক্য চোখে পড়েছে?
অনেক পার্থক্য। একটা গান কী করে গাইতে হয়, সেটা এই আয়োজনে অংশ না নিলে শেখাই হতো না। এখানে না এলে অনেক কিছুই অজানা থেকে যেত। এখানে প্রত্যেক প্রতিযোগী অনেক তৈরি হয়ে আসেন। প্রত্যেকে আলাদা ভয়েস লেসনে মহড়া করেন। একজন আরেকজনের সঙ্গে ভাবনার শেয়ার করেন। আমি পুরো ব্যাপারটা ভীষণ উপভোগ করছি। প্রতিযোগিতায় কতটুকু কী করতে পারব, জানি না। কোনো অবস্থানে যেতে না পারলেও দুঃখ থাকবে না। আমি যে এত কিছু শিখছি, আন্তর্জাতিক মানের সংগীতশিল্পীদের সঙ্গে মঞ্চ ভাগ করছি, তাতেই ভীষণ খুশি। এই অভিজ্ঞতাগুলো পরে আমার জীবনে কাজে লাগাতে চাই।

সংগীত নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কী?
আপাতত ইউটিউবে কিছু নিরীক্ষামূলক কাজ করছি। সর্বশেষ করেছি একটা ‘ব্যালুন সং’। জন্মদিনের এই গানটি অনেকেই পছন্দ করেছেন। আমি চাই, মানুষ একটু অন্য রকম মিউজিক দেখুক। প্লেব্যাক করার ইচ্ছে আছে। হুইসেলিং নিয়েও কাজ করতে চাই।

সেটা কী রকম?
ভাবতে হবে। ইনস্ট্রুমেন্টাল কিছু করতে চাই।

আপনি তো বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন।
করতাম। এখানে আসার পর ক্লাস নিচ্ছি না।

চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন?
আপাতত চাকরি করছি না।

এখন তাহলে শুধু গান?
এখন গান ছাড়া আর কিছুই ভাবতে চাই না। এখানে আসার পর আত্মবিশ্বাস আরও বেড়েছে। বিসিএস দেওয়ার প্রস্তুতি চলছিল। কিন্তু এখন পড়ায় আর মন বসছে না।

আপনি কোথায় পড়াশোনা করেছেন?
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি, রসায়ন শাস্ত্রে। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে যুক্ত হই। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আনন্দন সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। নিয়মিত গান করেছি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে।

‘কাপ সং’ তৈরির ব্যাপারে আগ্রহী হলেন কেন?
ফেসবুকে একটি হিন্দি গানের ভিডিও দেখেছিলাম। সেখানে ‘কাপ সং’ দেখে আমি তো মুগ্ধ! তারপর নিজেই চেষ্টা শুরু করে দিই। আটঘাট বেঁধে নেমে পড়ি। প্রথমে ব্যতিক্রমী বাদ্যযন্ত্রের তালে সোলস ব্যান্ডের ‘কেন এই নিঃসঙ্গতা’ গানটি গেয়ে ভিডিও করে ফেসবুকে দিই। দেখি অনেকেই গানটি শেয়ার করছেন। তবে কুমার বিশ্বজিতের গাওয়া ‘যেখানে সীমান্ত তোমার’ গানটির পর দর্শকের ভালোবাসা বাড়তে থাকে। তখন মজা পেয়ে যাই। এরপর এ ধরনের আরও কয়েকটি গান করেছি।

গানের সঙ্গে আপনার যোগাযোগ কবে থেকে?
ছোটবেলা থেকেই। জামালপুর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক আর দিগপাইত শামসুল হক ডিগ্রি কলেজে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার্থী থাকার সময় গান গেয়ে পরিচিতি পাই। গিটার আর হারমোনিয়াম বাজানো ছোটবেলায় শিখেছি। কলেজে পড়ার সময় বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও গান করতাম। ২০০৩ ও ২০০৪ সালে লোকগান ও নজরুলসংগীত গেয়ে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছি। এ ছাড়া ২০০৫ সালে ক্ল্যাসিক্যাল ও লোকসংগীত গেয়ে পেয়েছি ‘ওস্তাদ আলাউদ্দিন খান স্বর্ণপদক’। ২০১২ সালে অংশগ্রহণ করি ‘ক্লোজআপ ওয়ান তোমাকেই খুঁজছে বাংলাদেশ’ প্রতিযোগিতায়। শেষ পর্যন্ত সেরা ১০ পর্যন্ত ছিলাম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Related articles

আবারো এস আলমে আগুন 

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী এলাকায় এস আলম গ্রুপের চিনির গুদামের পর এবার তেলের মিলে আগুন লেগেছে। ফায়ার সার্ভিসের ৮টি ইউনিটের...

জিম্মি নাবিকদের উদ্ধার চেষ্টার সময় গুলি বিনিময়

সময় ডেস্ক সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর নাবিকদের উদ্ধারে অভিযান চালিয়েছে অন্য একটি জাহাজ। দুই...

শেষ ম্যাচে ভুটানকে উড়িয়ে দিলো বাংলাদেশ

সময় স্পোর্টস ডেস্ক সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল আগেই নিশ্চিত করেছিলো বাংলাদেশের মেয়েরা। ১০ মার্চ ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে মাঠে...

নারী দিবসে নারী কর্মীদের সম্মান জানিয়ে এবারই প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করছেন নারী কর্মীরা

সময় ডেস্ক আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আজ শুক্রবার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট পরিচালনা করেছেন নারীরা। রাজধানীর শাহজালাল...