রিয়াল মাদ্রিদের ৭ নম্বর জার্সিটা এখনো মালিক খুঁজে পায়নি। রাউল গঞ্জালেজ চলে যাওয়ার আগেই ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো এসেছিলেন। উত্তরসূরি খোঁজার আগেই ‘৭’ নম্বর জার্সির ভার কে নেবেন, সেটা জানা ছিল। কিন্তু রোনালদো চলে যাওয়ার প্রায় এক মাস হতে চলল, রিয়াল মাদ্রিদ তাদের ৭ নম্বর জার্সি কারও গায়ে পরানোর সাহস করতে পারল না। তবে এবার সম্ভবত সময় এসেছে। রিয়ালের বিখ্যাত ৭ নম্বর জার্সি গায়ে চাপাতে পারেন কিলিয়ান এমবাপ্পে।
৭ নম্বর জার্সি এবার এমনিতেই গায়ে চাপিয়ে বসে আছেন এমবাপ্পে। নতুন মৌসুমে প্যারিস সেন্ট জার্মেইয়ে সাতকেই বেছে নিয়েছেন বিশ্বকাপজয়ী এই ফরোয়ার্ড। গত মৌসুমেই এমবাপ্পে পিএসজি নিয়ে এসেছে। ১৮০ মিলিয়ন ইউরোতে মোনাকো থেকে কিনেই আনার কথা ছিল। কিন্তু উয়েফার ‘ফিন্যান্সিয়াল ফেয়ার প্লে’র নীতিতে আটকে পরায় গত মৌসুমে কিনতে পারেনি পিএসজি। তাই তারা মোনাকোর কাছ থেকে এমবাপ্পেকে এক বছরের জন্য ধারে নেয়। সে চুক্তিতে বলা হয়েছিল এক বছরের ধারের মেয়াদ শেষ হলে তাঁকে ১৮০ মিলিয়ন ইউরো দিয়ে কিনে নিতে পারবে পিএসজি।
কিন্তু এফএফপির সমস্যাটা নতুন মৌসুমেও যায়নি। পিএসজির বিরুদ্ধে চলা তদন্ত এ মাসে আবার শুরু করেছে উয়েফা। ইউরোপিয়ান ফুটবলের নিয়ম অনুযায়ী একটি ক্লাব তাদের নিজেদের আয় অনুযায়ী ব্যয় করতে পারবে। ফুটবলীয় কাজকর্মের আয় দিয়ে খেলোয়াড়দের ব্যয় বহন করবে এবং সে আয়ের একটা নির্দিষ্ট সীমা অনুযায়ী বেতন দিতে পারবে। এ ক্ষেত্রে মালিক পক্ষ থেকে পাওয়া কোনো প্রকার অর্থ ব্যবহার করা যায় না। কিন্তু কাতারভিত্তিক ক্লাব পিএসজি বার্সেলোনাকে নেইমারের বাই-আউট ক্লজ ২২২ মিলিয়ন ইউরো দিয়ে এনেছে। এরপর আবার কিলিয়ান এমবাপ্পেকে কেনা। অর্থাৎ ৪০০ মিলিয়ন ইউরো ব্যয়, এর বিপরীতে খেলোয়াড় বিক্রি বা স্পনসরদের কাছ থেকে সম পরিমাণ আয় দেখানোর কথা তাদের।
উয়েফা যদি পিএসজির আর্থিক নীতিতে কোনো সমস্যা খুঁজে পায়, তবে তারা এই মৌসুমে কোনো খেলোয়াড় কিনতে পারবে না। যার ফলে এ মৌসুমে এমবাপ্পের ১৮০ মিলিয়ন ইউরো পরিশোধ করতে পারবে না পিএসজি। এই টাকা পরিশোধ না করতে পারলে এমবাপ্পেকে আবার মোনাকোতে ফেরত যেতে হবে। এই সোমবার এমবাপ্পের ধারের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এর মাঝে পিএসজি এই অর্থ প্রদান না করতে পারলে আগের ক্লাব মোনাকোতেই যেতে হবে তাঁকে।
প্রশ্ন আসতে পারে, সবই ঠিক আছে, তাতে মোনাকোর লাভ হচ্ছে, রিয়াল মাদ্রিদ এখানে আসছে কীভাবে? কীভাবে এমবাপ্পেকে নিজেদের নম্বর ‘৭’ পরাবে রিয়াল? এখানেই নিজের খেলা দেখাবেন সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ। যদি পিএসজি তাদের ১৮০ মিলিয়ন ইউরো দিয়ে এমবাপ্পেকে ধরে রাখতে না পারে, তবে মোনাকোর কাছ থেকে তাঁকে কিনতে কোনো বাধাই থাকবে না রিয়াল মাদ্রিদের। গত মৌসুমেও রিয়াল এ দামে তাঁকে কিনতে চেয়েছিল কিন্তু বেল-বেনজেমা-রোনালদোর জন্য বেঞ্চে থাকতে হবে, এ কারণে এমবাপ্পেই পিএসজিকে বেছে নিয়েছিলেন। এবার রোনালদো নেই, ফলে এমবাপ্পের একাদশে জায়গা পাকা।
এ মৌসুমে ইংলিশ ও ইতালিয়ান লিগের দলবদলের সময় শেষ হয়ে হয়েছে। ফলে বড় ক্লাব হিসেবে একমাত্র রিয়াল মাদ্রিদেরই সুযোগ আছে এমবাপ্পেকে কেনার। আর পিএসজিতে যাওয়ার পর এমবাপ্পে যে বেতন পাচ্ছেন, সেটা মোনাকো তাদের কোনো খেলোয়াড়কেই দেয় না। সে দিক থেকেও এমবাপ্পের মোনাকো নয়, রিয়ালকে বেছে নেওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আর রোনালদো চলে যাওয়ার পর দেড় মাস হয়ে যাওয়ার পর কোনো বড় তারকাকে না টানাটা পেরেজের স্বভাবের সঙ্গে ঠিক যায় না। বিশেষ করে রিয়ালের তহবিলে যেখানে ৩০০ মিলিয়ন ইউরো পড়ে আছে!
পিএসজির যদিও এখনো সুযোগ আছে এমবাপ্পেকে নিজেদের কাছে রেখে দেওয়ার। এ জন্য উয়েফার কাছে নিজেদের নির্দোষ প্রমাণ করতে হবে। না হলে বাকিটা বাংলা সিনেমার মতোই পরিষ্কার। পাঁচ বছর অনেক নাটকের পর রিয়াল আর এমবাপ্পের মিল হবে সময়ের ব্যাপার। তবে সময় খুবই অল্প, আগামী শুক্রবারই যে দলবদলের বাজার বন্ধ হচ্ছে!