বাংলাদেশের ঢাকায় কিভাবে কাটে তরুণীদের অবসর সময়?

Date:

Share post:

বাংলাদেশের তরুণীরা বলছেন, সামাজিক মাধ্যমেই তাদের অবসর বেশি কাটে
Image caption বাংলাদেশের তরুণীরা বলছেন, সামাজিক মাধ্যমেই তাদের অবসর বেশি কাটে

বাংলাদেশের ঢাকায় সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কয়েক লাখ তরুণী চাকরি করেন। তাদের অনেকে ঢাকায় যেমন পরিবারের সঙ্গে থাকেন, আবার অনেকে একাই বসবাস করছেন।

কিন্তু নিয়মিত চাকরির বাইরে কেমন তাদের অবসর জীবন? এত বড় একটি শহরে তাদের বিনোদনের কতটা সুযোগ রয়েছে?

ঢাকায় নানা সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে কয়েক লাখ তরুণী চাকরি করছেন। কিন্তু অফিস আর বাসার নিয়মিত রুটিনের বাইরে তারা কি করেন?

ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন আমেনা আখতার। তিনি ভালো আয় করেন, কিন্তু বলছেন, নিজের বিনোদনের কথা চিন্তা করার সময় তাকে পারিবারিক অনুশাসন আর সমাজের কথাও চিন্তা করতে হয়।

তিনি বলছেন, ”আমার একজন স্বাধীনতা মতো, নিজের ইচ্ছামতো নিরাপদে ঘুরবো ফিরবো সেটা এখানে সম্ভব না। যেমন হয়তো অফিসের পর বন্ধুদের সাথে ঘুরলাম, এরপর রাত ৯টা বা ১০টায় বাসায় ফিরে বিশ্রাম নিলাম, যাতে আমার রিফ্রেশমেন্টও হল, ঘোরাফেরাও হল আবার কাজও হল, কিন্তু এই ঢাকাতে সম্ভব না।”

এর কারণ হিসাবে তিনি বলেন ”আমি যে সোসাইটিতে থাকি, সেখানে রাত ১০টার সময় যদি কোন মেয়ে বাসায় যায়, তখন অনেক কথা উঠবে। এজন্য সেটা সম্ভব হচ্ছে না। তাই মেয়েদের স্বাধীনতার জন্য সমাজেরও পরিবর্তন দরকার।”

Image caption বাংলাদেশের তরুণীরা বলছেন, ঘুরে বেড়ানো বা রেস্তোরায় খাওয়া তাদের বিনোদনের অন্যতম উপায়

ঢাকার তরুণী চাকরিজীবীরা বলছেন, ঢাকায় চলাচলের সমস্যা, যানজট আর নিরাপত্তা অভাবের কারণে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাদের ঘরে সামাজিক মাধ্যমে বা টেলিভিশন দেখে সময় বেশি কাটে। তার বিবাহিত তরুণীদের অফিসের বাইরে সংসার সামলাতে অনেক সময় কেটে যায়।

তাহেরা সুলতানা নামের একজন তরুণী বলছেন, ”একজন ছেলের মতো আমরা ইচ্ছা করলেই বাইরে যেতে বা ঘুরাফিরা করতে পারছি না। এ কারণেই সামাজিক মাধ্যম গুলোতেই আমাদের বেশি সময় কাটছে। এর মাধ্যমে বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ করেই বেশিরভাগ সময় কাটে।”

অনেকে শপিং মলে ঘুরে বেড়াতে বা কেনাকাটা করতে পছন্দ করেন। এর বাইরে তাদের কাটানোর আরেকটি উপায় কোন উপলক্ষ ধরে রেস্তোরায় খাওয়া দাওয়া করা।

আমেনা আখতার যেমন বলছেন, ”অনেক সময় পরিবার বা বন্ধুদের কেউ বলে, ভালো লাগছে না, চলো কোথাও থেকে ঘুরে আসি। কিন্তু কোথায় ঘুরতে যাবো? পার্কের যে অবস্থা, সেখানে তো যাওয়া যায় না। নিরাপত্তার অভাব। তখন চিন্তা করি, একটা ভালো রেস্তোরায় গিয়ে আজ একজন খাওয়াচ্ছে, কাল আরেকজন। এটাই যেন এখন আমাদের সবচেয়ে বড় বিনোদন হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

তবে একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী কানিজ ফাতেমা বলছেন, মেয়েদের জন্য ঢাকার মতো একটি মহানগরীতে আরো কিছু সুযোগ সুবিধা থাকা উচিত।

তিনি বলছেন, ”এরকম যদি কোন জায়গা বা সংস্থা থাকতো, যেখানে গিয়ে মেয়েরা ছেলেদের মতো সময় কাটাতে পারবে, যেমন টেনিস, ব্যাডমিন্টন বা গলফ খেলতে পারবে, তাহলে খুব ভালো হতো। ঢাকায় যে দুই একটি ক্লাব রয়েছে, সেখানে সবাই যেতে পারে না বা অনেকগুলো মেয়েদের জন্য নিরাপদও না। তাই সবার জন্য এরকম জায়গা হলে অনেকে যেতে পারতো।”

এসব ক্ষেত্রে সমাজের মনোভাবেরও পরিবর্তন দরকার বলে তিনি মনে করেন।

ছবির কপিরাইট Rahat Mahfuz
Image caption সমাজবিজ্ঞানী সামিনা লুৎফা বলছেন, গত দুই দশকের তুলনায় বিনোদনের বিষয়ে নারীদের মনোভাবের অনেক পরিবর্তন হয়েছে

সমাজ বিজ্ঞানীদের মতে, গত দুই দশকের তুলনায় বাংলাদেশের মেয়েদের সামাজিক অবস্থানের যেমন অনেক পরিবর্তন হয়েছে, তেমনি তাদের অবসর বা সময় কাটানোর ধরনেরও অনেক পরিবর্তন এসেছে।

সমাজবিজ্ঞানী সামিনা লুৎফা বলছেন, এক সময় বই পড়া বা সপ্তাহে একদিন সিনেমা দেখার মধ্যে যে বিনোদন সীমাবদ্ধ ছিল, তা এখন গণ্ডি পেরিয়ে দেশের ভেতরে বাইরে ভ্রমণেও রূপান্তরিত হচ্ছে।

সামিনা লুৎফা বলছেন, ”গত দুই দশকে মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্ত নারীরা অনেক বাইরে এসেছে। অবসর নিয়ে তাদের ধারণাও অনেক পাল্টে গেছে। অনেকে হয়তো কর্পোরেট চাকরি শেষে, যানজট ঠেলে আসা যাওয়ার পর বিনোদনের ইচ্ছাটাও থাকে না। আবার নিরাপত্তারও অনেক অভাব আছে। তারপরেও নিজের বিনোদন নিয়ে নারীদের মনোভাবের অনেক পরিবর্তন হয়েছে।”

”হয়তো আমাদের দেশে ক্লাব, পাব এগুলো সে অর্থে নেই বা যা আছে, তাও হাতেগোনা উচ্চবিত্তদের গণ্ডির মধ্যে। কিন্তু সেটাই তো একমাত্র বিনোদন নয়।”

সামিনা লুৎফা বলছেন, ”আগে যেমন শুধু সিনেমা দেখতে যাওয়া ছাড়া বা বই পড়া ছাড়া নারীদের তেমন কিছু করার ছিল না। কিন্তু এখন তারা সামাজিক মাধ্যমে অনেক সময় কাটাচ্ছেন। পাশাপাশি দল বেধে ঘুরতে যাচ্ছেন। আর্থিক স্বাবলম্বী হওয়ার কারণে তার নিজের সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা বেড়েছে। এখন তারা একা বা দল বেধে ঘুরতে যেতে পারেন। এগুলো কিন্তু দুই দশক আগেও ছিল না।”

সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, একটি মহানগরী হিসাবে ঢাকার বাসিন্দাদের বিনোদনের যেসব সুযোগসুবিধা থাকা উচিত তার অনেক কিছুই হয়তো এখনো পর্যাপ্ত নয়, আর মেয়েদের জন্য তা আরো অপ্রতুল। তবে তাদের মতে, ধীরে হলেও সেই অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে।

Source from: http://www.bbc.com/bengali/news-44407175

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Related articles

আবারো এস আলমে আগুন 

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী এলাকায় এস আলম গ্রুপের চিনির গুদামের পর এবার তেলের মিলে আগুন লেগেছে। ফায়ার সার্ভিসের ৮টি ইউনিটের...

জিম্মি নাবিকদের উদ্ধার চেষ্টার সময় গুলি বিনিময়

সময় ডেস্ক সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর নাবিকদের উদ্ধারে অভিযান চালিয়েছে অন্য একটি জাহাজ। দুই...

শেষ ম্যাচে ভুটানকে উড়িয়ে দিলো বাংলাদেশ

সময় স্পোর্টস ডেস্ক সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল আগেই নিশ্চিত করেছিলো বাংলাদেশের মেয়েরা। ১০ মার্চ ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে মাঠে...

নারী দিবসে নারী কর্মীদের সম্মান জানিয়ে এবারই প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করছেন নারী কর্মীরা

সময় ডেস্ক আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আজ শুক্রবার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট পরিচালনা করেছেন নারীরা। রাজধানীর শাহজালাল...