এক ব্রিটিশ কিশোরীর জঙ্গি হওয়ার গল্প

Date:

Share post:

ছবির কপিরাইট METROPOLITAN POLICE
Image caption সাফা বাউলার

যুক্তরাজ্যের প্রথম ফিমেল টেরর সেল এর অংশ হয়ে হামলার ষড়যন্ত্রের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলো কিশোরী সাফা বাউলার। আর এ ঘটনাটি থেকেই বের হয়ে আসে একটি সত্যিকার অকার্যকর হয়ে পরিবারের কার্যক্রম।

২০১৭ উত্তর পশ্চিম লন্ডনের একটি বাড়িতে সশস্ত্র পুলিশ গ্যাস নিক্ষেপ করতে করতে প্রবেশ করে এবং পরে পুলিশ যখন ওখানে ঢুকে তখন ২১বছর বয়সী একজন গুলিবিদ্ধ হয়।

ব্যথায় কাতরাচ্ছিলেন আর ক্ষুব্ধ কণ্ঠে চিৎকার করে রাস্তার দিকে যাচ্ছিলেন ফার্স্ট এইডের জন্য।

“আমাকে স্পর্শ করোনা।আমার শরীর পোশাক স্পর্শ করোনা” তিনি বলছিলেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছিলো।

এই তরুণীই ওই অভিযানের অন্যতম লক্ষ্য ছিলো।

সেখান থেকে প্রায় ৫০ মাইল দুরে রিজলেইন এর মা মিন ডিস আটক হন এক যুব কারাগারের সামনে থেকে।

সেখানেই বিচারের অপেক্ষায় বন্দী ছিলো সাফা তখন তার বয়স মাত্র সতের।

সাফার বোন ও মাও ততক্ষণে তার সাথে নিরাপত্তা হেফাজতে যাওয়ার পথে এবং তারা সবাই অভিযুক্ত ছিলেন যুক্তরাজ্য প্রথমবারের মতো মেয়েদের একটি দলের সন্ত্রাসী পরিকল্পনার ঘটনায়।

Image caption অভিযান শেষ হয়

সাফা বাউলারকে যখন উইটনেস বক্সে নেয়া হয় তার আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য তখন সে পুরোপুরি পেশাদার একজন শিক্ষার্থী।

মিনিস্কার্ট, টপ ও কার্ডিগান পরিহিত সাফার চুলে তখন হালকা রং করানো।

সে ছিলো বিনয়ী কিন্তু দৃঢ় এবং কথা বলছিলো ধীরে কিন্তু স্পষ্ট করে।

অথচ এক বছর আগে তার আটকের সময় তার পরনে ছিলো রক্ষণশীল মুসলিম পোশাক।

রিজলেইন ও সাফা বাউলার টেমসের তীরবর্তী একটি এলাকায় বড় হচ্ছিলেন যেটি ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থার সদর দপ্তরের কাছেই।

তাদের মরক্কো-ফরাসী বাবা মায়ের মধ্যে ভাঙ্গন ধরেছিলো অত্যন্ত তিক্ততার মধ্য দিয়ে।

তখন সাফার বয়স মাত্র ছয়।

অবশ্য বাবার সাথে তার সম্পর্ক ছিলো ভালো।

পরে বিচারের সময় সে তার মাকেই অভিযুক্ত করে সহিংসতা ও প্রতিহিংসার জন্য।

মিনা মগ ছুড়ে মারতো কিংবা রড ছুড়ে মারতো কিন্তু পরদিন এমন আচরণ করতো যে কিছুই হয়নি। আর বলতো সে তার সন্তানদের গভীরভাবে ভালোবাসে।

ছবির কপিরাইট METROPOLITAN POLICE
Image caption মেয়েদের সাথে মা মিনা ডিচ

মায়ের শিক্ষা

পরিবারটি খুব বেশি ধর্মান্ধ ছিলোনা। কিন্তু সন্তানেরা যখন বড় হচ্ছিলো তখন মিনা ইসলামের চরমপন্থি ব্যাখ্যা গুলো গ্রহণ করতে শুরু করেন।

এটি তিনি করছিলেন কোন সত্যিকার ধর্মীয় নির্দেশনা ছাড়াই অনেকটা অনলাইন থেকে।

তিনি তার মেয়েদের পর্দার কথা বলতেন। যখন দেখলেন ১৬ বছর বয়সী রিজলাইন অনলাইনে একজনের সাথে কথা বলছে ও পশ্চিমা পোশাক পড়ছে তখন তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন।

তিনি তার কন্যাকে প্রহার করেন এবং রিজলাইন দৌড়ে পালায়।

সাফা যখন ফোনে তার স্কুলের ছেলেদের সাথে কথা বলতো তখন তার মা ব্যথিত হতো। তিনি ফোন কেড়ে নিতেন ও মেয়েকে ইসলামি রক্ষণশীল পোশাক পরাতেন।

মায়ের চাপে এক পর্যায়ে রিজলাইন মায়ের মতাদর্শ গ্রহণ করতে শুরু করে।

অন্যদিকে সাফার জীবন বিপর্যয়ে পড়ে ১৪ বছর বয়সেই। তার টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিস ধরা পড়ে। ফলে সারাজীবনই তাকে ইনসুলিন ইনজেকশন নিতে হবে।

কিন্তু বিচারের সময় সে আদালতে বলে যে পরীক্ষা নিরীক্ষায় এ ধরনের ফল আসায় সে বেশ খুশীই হয়েছিলো।

“আমি মায়ের কাছে গুরুত্ব পেতে শুরু করলাম যা আমার দরকার ছিলো। সে আমাকে ছোট যুবরাজ্ঞীর মতো যত্ন করতো”।

কিন্তু একমাস পর সে নিজেই ডায়াবেটিস নিয়ে তার করণীয় শিখে যায়।

তাকে বারবার হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়। কিন্তু তার বাড়িটি হয়ে উঠে ধর্মীয় বক্তৃতার কেন্দ্র অথচ সেখানে সন্তানদের দেখাশোনা বা অভিভাবকত্বের বিষয় ছিলো কমই।

ছবির কপিরাইট METROPOLITAN POLICE
Image caption মিনা ডিচ

২০১৪ সালের ২৯শে অগাস্ট সাফা পালায়।

“ঘর আমার জন্য সঠিক জায়গা নয়,” এই নোট সে লিখে যায় যাওয়ার সময়।

কিন্তু এই পালানো দীর্ঘস্থায়ী হয়না, তাকে পাওয়া যায় স্থানীয় একটি পার্কে।

সিরিয়া যাওয়ার চেষ্টা

২০১৪ সালে পরিবারে যখন চরম হট্টগোল তখন সাফার বড় বোন রিজলাইন সিরিয়ায় পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।

পরে সাফা ও তার বড় ভাইয়ের ফোন পেয়ে পুলিশ তাকে থামায়।

এরপর রিজলাইনকে ইস্তাম্বুল থেকে ফেরত আনা হয়।

পরে সে স্থিতাবস্থা অর্জন করা পর্যন্ত পুলিশ ও সোশ্যাল সার্ভিস বিষয়টি মনিটর করে।

কিন্তু বিচারে সাফা বলেছে রিজলাইনকে তার মা এক লোকের সাথে বিয়ে দেন যে তার মাত্র পাঁচ দিনের পরিচিত ছিলো।

এরপর একটি বাচ্চা হওয়ার পর তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ হয়।

ওদিকে ডায়াবেটিস বেড়ে যাওয়ায় সাফাকেও কিছুটা স্থিতিশীল মনে হচ্ছিলো কিন্তু এ নিয়ে সে খুশী ছিলোনা।

২০১৫ সালের নভেম্বরে প্যারিস অ্যাটাকের ঘটনা তার ওপর প্রভাব ফেলে।

Image caption পালানোর চেষ্টা করেছিলেন রিজলাইন

সিরিয়ার নিজস্ব ধরনের ইসলামিক স্টেট সম্পর্কে তিনি আগ্রহী হয়ে ওঠেন এবং একজন ভালো মুসলিম হতে করণীয় সম্পর্কে তার মায়ের বক্তৃতা থেকে জানতে চাইতেন মুসলিম হিসেবে একে সহায়তা করা তার দায়িত্ব কিনা।

অনলাইনে তিনি একজন নারীর সাথে যোগাযোগ করেন যিনি রাকায় মেয়েদের রিক্রুট করছিলেন। ওই নারী ছিলেন প্রথম ইংরেজি ভাষী নারী যিনি আইএসের হয়ে প্রচারণা চালাতেন।

মূলত তার মাধ্যমেই শতশত নতুন মানুষের সাথে সাফার যোগাযোগ তৈরি হয়।

“এটা ছিলো বিশেষ কিছু ও এক্সাইটিং”, সে বিচারের সময় বলে কারণ স্কুলের বন্ধুদের সাথে বাইরে যাওয়ার অনুমতি ছিলোনা তার। তাই নতুন বন্ধু পাওয়া ছিলো আনন্দের।

এর মধ্যে একজন মানুষ তার জীবন পাল্টে দেন।

তার নাম নাভিদ হুসেইন যিনি ২০১৫ সালে তার এক বন্ধুর সাথে সিরিয়া যান।

তারা কখনো দেখা করেননি কিন্তু অনলাইনেই রোমান্স উপভোগ করতে থাকেন।

ছবির কপিরাইট METROPOLITAN POLICE
Image caption নাভিদ হুসেইন

নাভিদ রাকায় তার ব্যস্ত জীবনের কিছু ছবিও পোস্ট করেন। যুদ্ধের কোন ছবি ছিলোনা।

কিন্তু সে সাফাকে এমন ভয়াবহ ছবি পাঠান যেখানে তিনি প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় এমন একজনের পাশে দাড়িয়ে ছিলেন।

রিক্রুটাররা যে বলেন ওখানে জীবন চমৎকার সেটি তিনি নিশ্চিত করেন নানাভাবে। আর এগুলো সবই তিনি করেছেন একজন তরুণীকে প্রলুব্ধ করার জন্য।

সাফা তার সাথে চ্যাট করেছেন দিনে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত।

“তিনি ছিলেন খুব যত্নশীল, মিষ্টি ও প্রাঞ্জল। এই প্রথম কোন পুরুষের কাছ থেকে এ ধরনের গুরুত্ব পাচ্ছিলাম”।

২০১৬ সালের অগাস্টে সাফা তখন মরক্কোতে দাদা বাড়িতে।

এক গভীর রাতে নাভিদ হুসেইনের সাথে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে তার কথা হয়।

হুসেইন তাকে লিখেন, “আমি তোমাকে ভালোবাসি। মিস করি। স্পর্শ করতে চাই এটি নিশ্চিত হতে যে তুমি সত্যি কেউ এবং আমি কোন স্বপ্ন দেখছিনা”।

ছবির কপিরাইট METROPOLITAN POLICE
Image caption নাভিদ এ ছবিটি সাফাকে পাঠিয়েছিলেন

জবাবে সাফা লিখেন, “আমিও”।

তারা একে অপরকে চুমু ছুড়ে দেন এবং সিরিয়ায় একে অন্যের সাথে সাক্ষাত করার এবং শত্রুর সামনে দুজনে একসাথে নিজেদের উড়িয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।

একই সাথে নাভিদ হুসেইন বোমাসহ বেল্ট পরিহিত নিজের একটি ছবি দেন সাফাকে।

“বেল্ট তোমাকেও পরতে হবে। পিন খুলে ফেলতে কোন দ্বিধা করোনা। কোনো কাফিরের জীবনের চেয়ে তোমার সম্মান বড়”, নাভিদ লিখে সাফাকে।

“এই পিন কি আমাকে নিয়ে যাবে?” সাফা জানতে চায়।

নাভি জবাবে বলে, ” হ্যাঁ সোজা উড়িয়ে নেবে। আমারটায় পাঁচ সেকেন্ডের টাইমার দেয়া আছে”।

ছবির কপিরাইট METROPOLITAN POLICE
Image caption বিস্ফোরক বেল্টসহ নাভিদ

সাফা হাসির একটি ইমোজি পাঠায় এবং বলে, “কখন তুমি এগুলোর ব্যবহার আমাকে শেখাবে আল্লাহর ইচ্ছায়?”

তার বিচারের সময় প্রসিকিউটাররা বলেন যে এই আলোচনা ছিলো সন্ত্রাসী কার্যক্রমের একটি প্রস্তুতি।

একটি বিবাহ

এই জুটির সম্পর্ক এগিয়ে চলে।

মেসেজিং অ্যাপে একটি গোপন অনুষ্ঠান হয়। যেখানে সাফা, হুসেইন, আইএস এর একজন শেখ ও একজন কথিত অভিভাবক একসাথে অনলাইনে আসেন।

টেক্সট বার্তা লিখে লিখে ১৬ বছর বয়সী সাফা বাউলার নাভিদ হোসেনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।

আবার যখন যুক্তরাজ্যে ফেরার জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন তখন সব বার্তাই তিনি ডিলিট করে দেন গোপনীয়তার স্বার্থে।

সাফা বিচারকদের বলেন সে তার বোন ২০১৬ সালেই সিরিয়ায় যাওয়ার বিষয়ে আলোচনা করেন। এর মধ্যেই তিনি হুসেইনকে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন। দু বোনই যুক্তরাজ্য ছেড়ে সিরিয়া যাওয়ার বিষয়ে একমত ছিলেন।

কিন্তু এর মধ্যেই তারা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরে আসেন এবং মরক্কো থেকে ফেরার সময় তাকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়।

পুলিশ তার ফোন ও পাসপোর্ট জব্দ করে।

ছবির কপিরাইট METROPOLITAN POLICE
Image caption আটকের পর রিজলা্‌ইন

সেখানে নাভিদ হুসেইনের সাথে কথা বলেছেন ও সিরিয়া যাওয়ার পরিকল্পনার কথা স্বীকারও করেন।

কিন্তু বিয়ের বিষয়টি গোপন রাখেন।

এরপর গোয়েন্দা সংস্থার তার দিকে নজরদারি আরও বাড়িয়ে দেয়।

এমআই ফাইভ সাদা পোশাকে একটি টীমও মোতায়েন করেন এবং তারা অনলাইনে উগ্রপন্থী হিসেবে অভিনয় করেন।

তাদের দায়িত্ব ছিলো যত বেশি সম্ভব তথ্য হুসেইনের কাছ থেকে বের করে আনা।

হুসেইনের কাছে তাদের পরিচয় ছিলো আবু মারিয়াম ও আবু সামিনা।

তারা যুক্তরাজ্যে হামলা সংগঠনের প্রস্তাব দেয়।

এ অভিযানের লক্ষ্য ছিলো হুসেইন ছাড়াও আর কারা আছে সেটি বের করা।

ওদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হুসেইন এমআইফাইভ কে উদ্দেশ্য করে বার্তা দেয়।

হুসেইন সম্ভাব্য টার্গেটের একটি তালিকা দেয়। যার মধ্যে লন্ডন জাদুঘরও ছিলো।

ছবির কপিরাইট PA
Image caption ব্রিটিশ মিউজিয়ামকে টার্গেট করার চক্রান্ত হচ্ছিলো

কিন্তু সে বলে রাকার আইএস কমান্ডাররা সহযোগিতা করতে পারবে যদিও সে স্বেচ্ছাসেবকদের চিনতে পারে।

কমপক্ষে পাসপোর্টের কপি, রেকর্ড করা বার্তা– যেটা হামলার পর প্রচার করা হবে।

স্বাভাবিকভাবেই এমআইফাইভ সেটি দিতে পারেনি।

“ভাই আমরা একা আমাদের মিশনে। দু:খজনকভাবে এখান থেকে কোন সহযোগিতা পাওয়া যাবেনা। কারণ দ্যা স্টেট (আইএস) জানেনা তোমরা কারা এবং তারা ভেরিফাই ও করতে পারেনি। তাই আল্লাহকে বিশ্বাস করে আমিই তোমাদের জন্য একমাত্র সহযোগিতাকারী।”

হুসেইন এরপর আরও সহযোগিতার অফার দেয় যদি গোপনে কাজ করার অফিসাররা অস্ত্র ও বোমার ব্যাক প্যাক নিয়ে এগিয়ে আসতে পারে।

হুসেইন জানায় আরও দুই ‘ভাই’ হামলার দিন যোগ দেবে।

তাই এমআইফাইভ বিষয়টি নিয়ে আরও তথ্য পেতে উদগ্রীব হয়ে পড়ে। বিশেষ করে ওই দুই ভাই সম্পর্কে।

ব্রিটিশ মিউজিয়াম

এই সময়ে হুসেইন বুঝতে পারেন সাফার পাসপোর্ট নেই ও তার সিরিয়া আসার পরিকল্পনা নেই।

তাই তিনি যুক্তরাজ্যেই হামলার বিষয়ে তাকে প্রলুব্ধ করতে থাকে।

যে বার্তা সাফা ও গোপনে থাকা গোয়েন্দাদের তিনি দেন তাতে গ্রেনেডকে উল্লেখ করা হয় আনারস হিসেবে।

হুসেইন বিশ্বাস করতে শুরু করে যে এমআইফাইভ ভাইয়েরা অস্ত্র সহযোগিতা দেবে।

প্রসিকিউটররা বলেন সাফা বাউলার হুসেইনের পরিকল্পনার অংশ হতে একমত হয়েছিলেন এবং তিনিই ছিলেন গোপন থাকা ‘দুই ভাইয়ে’র একজন।

ছবির কপিরাইট METROPOLITAN POLICE
Image caption এমআইফাইভ সদর দপ্তরের সামনে সেলফি তুলেছিলেন সাফা

২রা এপ্রিল হুসেইন গোপন পরিচয়ে থাকা কর্মকর্তাদের চাপের মুখে তার পরিকল্পনার কিছু গুরুত্বপূর্ণ অংশ প্রকাশ করেন।

” ব্রাদার ৪ আমার পরিবার”।

যদিও এমআইফাইভ জানতো যে চার নাম্বার ভাই হুসেইনের আসল ভাই নয়।

তার নাম ছিলো নাদিম এবং সে ইতোমধ্যেই ইসলামিক স্টেটের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে বন্দী ছিলো।

তাই সাফার দিকেই দৃষ্টি গেলো তাদের।

পরদিন সন্ধ্যার সময় হুসেইন সাফাকে জানায় যে সে নামাজ যাচ্ছে।

কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই খবর আসে যে হুসেইন নিহত হয়েছে যদিও খবরটি নিশ্চিত করা যায়নি।

পরে অবশ্য তারা নিশ্চিত হয়ে যায়।

পরে বার্তা আসে।

ছবির কপিরাইট PA
Image caption এমআইফাইভের বাইরে সিসিটিভিতে সাফা

“সালাম আমি আবু নাদিম। আবু উসামার ভাই ও আমির। বোন, আমি তোমাকে একটি চমৎকার সংবাদ দিচ্ছি যে আবু উসামা শহীদ হয়েছে। আল্লাহ তাকে স্বর্গে গ্রহণ করুন।এখন থেকে তোমাকে কিছু করতে হবেনা- যতক্ষণ না আমি আবার যোগাযোগ করি”।

এর মধ্যেই বাউলার পরিবারের মধ্যে এমআইফাইভের একটি রেকর্ডিং ডিভাইস রাখা ছিলো।

আদালতে যখন সেটি বাজানো হয় তখন কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে সাফা আর তার মা চিৎকার করে বলতে থাকে যে , “আল্লাহ মহান”।

এর মধ্যেই সাফা তার মায়ের কাছে তার সম্পর্কের বিষয়টি স্বীকার করে ও তার মাও নাভিদ হুসেইনের সাথে ফোনে কথা বলেন।

সাফার গ্রেফতার

পরদিন আবু নাদিম (গোপন পরিচয়ে থাকা গোয়েন্দা কর্মকর্তা) সাফার সাথে আবারো যোগাযোগ করে এবং হুসেইনের সাথে তার পরিকল্পনার বিষয়ে আরও জানতে চায়।

ছবির কপিরাইট METROPOLITAN POLICE
Image caption এই বক্সে করেই সাফাকে ফোন পাঠিয়েছিলো নাভিদ

জবাবে সে জানায় যে তাকে বিস্তারিত জানানো হয়নি।

“আমি জানিনা কত দ্রুত আমি প্রভুর কাছে যাবো। সে আমাকে কয়েকটি বিষয় বলেছে তোকারেব (একটি রাশিয়ান অস্ত্র) ও আনারস সম্পর্কে”।

“আর সে একটি স্থানের নাম বলেছে”।

সাফা বাউলার আটক হয়েছেন এবং সন্ত্রাসী ঘটনার প্রস্তুতির দায়ে অভিযুক্ত হয়েছেন। কিন্তু তদন্তকারীদের আরও জানা প্রয়োজন যে আর কারা এর সাথে আছে”।

তার ফোন কলগুলো মনিটর করা হয়েছে। সেখানে একবার সে তার মায়ের কাছে জানতে চেয়েছে যে পুলিশ তার বালিশ কি করে পেলো যেখান তার গোপন ফোন ছিলো।

মায়ের কাছে সে জানতে চেয়েছে যে তার বালিশটি ফেলে দিয়েছে কি-না।

পরে তার মা জানায় যে সেটি পুলিশ নিয়ে গেছে।

ছবির কপিরাইট METROPOLITAN POLICE
Image caption মায়ের কয়েকজন জঙ্গি বন্ধুর সাথে সাফা (বিচারে উপস্থাপিত তথ্য থেকে)

টি পার্টি

প্রসিকিউটাররা আদালতে বলেছেন সাফা তার মা ও বোনকে মিশন শেষ করতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। সেখানে তারা হামলার কোড দিয়েছিলেন ‘টি-পার্টি’ ও ‘কেক’।

পুলিশ অভিযান চালানোর তিন দিন আগে রিজলাইন তার বোনের সাথে কথা বলেন যার রেকর্ডও আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে।

সেখানে নানা কথার মধ্যে সাফা বলে, “এই বৃহস্পতিবার? তুমি সিরিয়াস?”

রিজলাইন বলে, “হ্যাঁ”।

এই কথোপকথনই বড় প্রমাণ হিসেবে এসেছে রিজলাইন বাউলার ও মিনা ডিচের বিরুদ্ধে।

রিজলাইন ও তার মা ওয়েস্ট মিনিস্টার এলাকাতেও গিয়েছিলেন হামলার লক্ষ্য ঠিক করতে। তারা ছুড়ি কিনেছিলেন কিন্তু পরে বড় একটি ফেলেও দেন।

মিনা এরপর কেন্টে কারাগারে গিয়ে সাফার সাথে কথা বলেন।

আর রিজলাইন তার বন্ধু খাওলা বার্গহুটির সাথে দেখা করে।

খাওলাকে পরে রিজলাইনের প্রস্তুতি নিয়ে পুলিশকে না জানানোর অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

ছবির কপিরাইট METROPOLITAN POLICE
Image caption রিজলাইনের ঠিকানায় পাওয়া ছুড়ি

কোন নেতা নেই

স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের কাউন্টার টেররিজমের সিনিয়র ন্যাশনাল কো-অর্ডিনেটর ডিন হেইডন বলেছেন বাউলার পরিবার নিয়ে তদন্ত করতে গিয়ে তার টীম সবচেয়ে বেশি অস্বাভাবিক ঘটনার মুখোমুখি হয়েছেন।

“পরিবার হিসেবে এটি ছিলো অকার্যকর। তাছাড়া নিরাপত্তা ইস্যু ছিলো”।

পুলিশ পরিবারে কোন নেতা আছে এটি চিহ্নিত করতে পারেনি।

এমনকি মিনা কখন হুমকি হয়ে উঠলো তাও বোঝা যায়নি।

যদিও তার কন্যা বলেছে যে তার মা আই এস সম্পর্কিত নানা কিছু অনলাইনে ডেভেলপ করেছে।

তারপরেও সম্ভবত মিনা সাফাকে বড় কিছুতে জড়িত হতে বাধাই দিয়েছে।

সাফা বলেছে নরকের ভয়েই সে বেশী ধর্মীয় হতে চেয়েছে।

Image caption আদালতে প্রথম বার

এর মধ্যে বিচার শুরুর পর সাফা সম্পূর্ণ পরিবর্তিত একজন নারী।

“কারাগারে আসার পর ভিন্ন ধরনের নানা ব্যক্তির সাথে কথা বলার সুযোগ হয়েছে। আমি শিখছি কিভাবে ভালো মানুষ হতে পারি”।

বিবিসি বুঝতে পারছে ধর্মান্ধতা থেকে মুক্তি পেতে সাফা ইতিবাচক সাড়া দিচ্ছে কিন্তু তার মানে এই নয় যে সে অপরাধ থেকে মুক্ত।

পুরো মামলাতে সাফার আত্মপক্ষ সমর্থন ছিলো সাধারণ। সে ব্যবহৃত হয়েছে। মা ও বড় বোন দ্বারা হয়রানির শিকার হয়েছে।

যদিও বিচারকরা দেখছেন সে সিরিয়া যেতে চেয়েছে সক্রিয়ভাবে এবং যুক্তরাজ্যেও হামলা চালাতে চেয়েছে।

এমনকি আটক হওয়ার পরেও তার মা ও বোনকে সেজন্য উদ্বুদ্ধ করেছে।

এখন তার কারাদণ্ডের বিষয়টিও বিবেচনা করা হচ্ছে।

Source from: http://www.bbc.com/bengali/news-44486466

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Related articles

আবারো এস আলমে আগুন 

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী এলাকায় এস আলম গ্রুপের চিনির গুদামের পর এবার তেলের মিলে আগুন লেগেছে। ফায়ার সার্ভিসের ৮টি ইউনিটের...

জিম্মি নাবিকদের উদ্ধার চেষ্টার সময় গুলি বিনিময়

সময় ডেস্ক সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর নাবিকদের উদ্ধারে অভিযান চালিয়েছে অন্য একটি জাহাজ। দুই...

শেষ ম্যাচে ভুটানকে উড়িয়ে দিলো বাংলাদেশ

সময় স্পোর্টস ডেস্ক সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল আগেই নিশ্চিত করেছিলো বাংলাদেশের মেয়েরা। ১০ মার্চ ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে মাঠে...

নারী দিবসে নারী কর্মীদের সম্মান জানিয়ে এবারই প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করছেন নারী কর্মীরা

সময় ডেস্ক আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আজ শুক্রবার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট পরিচালনা করেছেন নারীরা। রাজধানীর শাহজালাল...