আপনার মোবাইল ফোন কি আপনার ওপর গোয়েন্দাগিরি করছে?

Date:

Share post:

যখন আমরা বিনামূল্যের কোন অ্যাপ ডাউনলোড করি আর সেটিতে নানা শর্তে সম্মতি দেই, তখন কি আমরা একবারও ভেবে দেখেছি যে, এসব অ্যাপ আমাদের সম্পর্কে কতটা তথ্য জানতে পারছে?

কোন অ্যাপ ডাউনলোড করার সময় অনেকগুলো শর্ত আসে বা সম্মতি চাওয়া হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এগুলো না পরে সবাই ওকে করে দেন। তার মানে সেই অ্যাপটিকে ফোনের অনেক তথ্যে প্রবেশাধিকার দেয়া হলো।

এসব তথ্যের মধ্যে রয়েছে বন্ধুদের সঙ্গে আমরা কি কথা বলি বা কি বার্তা পাঠাই, পরিবারের সদস্যদের ফোন নম্বর, মোবাইলের ছবি বা ভিডিও এমনকি আমাদের আর্থিক তথ্যও।

কারা ব্যবহার করে এসব তথ্য

মূলত বিভিন্ন থার্ড পার্টি কোম্পানি এসব তথ্য ব্যবহার করে থাকে। হয়তো কোন সাম্প্রতিক মেডিকেল টেস্টের তথ্য বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানিকে বিক্রি করা হয়, যা দেখে তারা এসব গ্রাহকের কাছে তাদের ওষুধের তথ্য পাঠাবে।অথবা সাম্প্রতিক কোন বিদেশ ভ্রমণের তথ্য চলে যাবে বিমান কোম্পানি বা ট্রাভেল কোম্পানির কাছে।

তথ্য সুরক্ষা নিয়ে কাজ করেন, এরকম একজন ভারতীয় আইনজীবী ভাকুল শর্মা বলছেন, এখনকার বিশ্বে কোন কিছুই ফ্রি নেই। বিনামূল্যে এসব অ্যাপ ডাউনলোড করে আসলে আপনি আপনার নিজের, পরিবারের বা বন্ধুদের তথ্য বিনিময় করলেন।

এসব তথ্য কি কাজে লাগে

ভাকুল শর্মা বলছেন, ফোনের এসব তথ্য নিয়ে বিভিন্ন অ্যাপ একেকজন ব্যক্তির ডিজিটাল প্রোফাইল তৈরি করছে। যার ফলে তার পছন্দ অপছন্দ অনুযায়ী বিভিন্ন পণ্য প্রস্তাব করা যায়।

বিভিন্ন বেসরকারি কোম্পানি টাকার বিনিময়ে এসব অ্যাপ নির্মাতা কোম্পানি থেকে তথ্য কেনে। তারপর গ্রাহক অনুযায়ী, তাদের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য অফার করা হয়।গ্রাহকদের তথ্য বিক্রি করে অনেক কোম্পানি কোটি কোটি টাকা আয় করছে

ধরা যাক আপনি হয়তো ইলেকট্রনিক পণ্য পছন্দ করেন, তখন বিভিন্ন ইলেকট্রনিক কোম্পানির পক্ষ থেকে আপনার কাছে অফার আসবে। অথবা আপনি বেড়াতে ভালোবাসেন, তখন বিভিন্ন ট্রাভেল কোম্পানি বা এয়ারলাইন্সের কাছ থেকে নানা আকর্ষণীয় প্রস্তাব পেতে থাকবেন।

মি. শর্মা বলছেন, যখন আমরা মোবাইলে একা কাজ করি, ফেসবুক বা টুইটারে লিখি, তখন আসলে আমরা নিজেদের মতো করেই সেখানে কাজ করি। ফলে সেখানে প্রত্যেকের একেবারে নিজস্ব চরিত্রের ছাপ থেকে যায়। আর এর ফলে আমাদের সম্পর্কে সঠিক তথ্য পেয়ে যায় এসব অ্যাপস।

আর ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে এলগরিদমও ব্যবস্থাও শক্তিশালী হয়ে ওঠে।

ভারতের মতো বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেই এখনো এসব ক্ষেত্রে তথ্য সুরক্ষার জন্য আইন তৈরি হয়নি।

কেউ জানেনও না এসব তথ্য কোথায়, কার কাছে, কিভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।মোবাইল ফোনে বা ইন্টারনেটে নিজেদের তথ্য যতটা সম্ভব কম দেয়ার পরামর্শ সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের

তাহলে কি করা উচিত?

ভারতে এখন এ ধরণের কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে আইন করার দাবি উঠছে। অনেকে বলছেন, যেহেতু এসব কোম্পানি সাধারণ নাগরিকদের তথ্য বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা আয় করে, এসব টাকার ভাগ এই নাগরিকদেরও পাওয়া উচিত।

তবে এর সবচেয়ে বড় সমাধান হলো, যখনি কোন অ্যাপ ব্যবহার করা হবে, তখনি খুব ভালো করে দেখে নেয়া যে, সেটি আপনার ব্যক্তিগত তথ্যের মধ্যে কতটা নাক গলাতে চায়।

আপনি এসব অ্যাপকে আপনার বিষয়ে তথ্য সংগ্রহে কতটা অনুমতি দিতে চান, সেটাও আপনার ওপরই নির্ভর করছে।

সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ প্রীতরাজ সিং বলছেন, মোবাইল, অ্যাপ বা ইন্টারনেটে আপনি আপনার নিজের সম্পর্কে যত কম তথ্য দেবেন, তত নিরাপদ থাকবেন। কারণ আমাদের কারো জানা নেই, আজ থেকে ১০/২০ বছর পরে এসব তথ্যের কি হবে।

(বিবিসি হিন্দির ভিনিট খেরের প্রতিবেদনের বাংলা অনুবাদ, ঈষৎ সংক্ষেপিত)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Related articles

আবারো এস আলমে আগুন 

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী এলাকায় এস আলম গ্রুপের চিনির গুদামের পর এবার তেলের মিলে আগুন লেগেছে। ফায়ার সার্ভিসের ৮টি ইউনিটের...

জিম্মি নাবিকদের উদ্ধার চেষ্টার সময় গুলি বিনিময়

সময় ডেস্ক সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর নাবিকদের উদ্ধারে অভিযান চালিয়েছে অন্য একটি জাহাজ। দুই...

শেষ ম্যাচে ভুটানকে উড়িয়ে দিলো বাংলাদেশ

সময় স্পোর্টস ডেস্ক সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল আগেই নিশ্চিত করেছিলো বাংলাদেশের মেয়েরা। ১০ মার্চ ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে মাঠে...

নারী দিবসে নারী কর্মীদের সম্মান জানিয়ে এবারই প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করছেন নারী কর্মীরা

সময় ডেস্ক আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আজ শুক্রবার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট পরিচালনা করেছেন নারীরা। রাজধানীর শাহজালাল...