নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জের সবচেয়ে প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবার। এ পরিবারের আলোচিত ব্যক্তি শামীম ওসমান। দেশব্যাপী যিনি একনামে পরিচিত। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি তিনি। প্রতাপশালী রাজনীতিক হিসেবে তাকে চেনেন না এমন ব্যক্তি পাওয়া ভার। তবে লোকটির কিছু অজানা কাহিনীও রয়েছে, যা অনেকেই হয়তো জানেন না। তরুণ বয়সে যে মেয়েটির প্রেমে পড়েছিলেন তিনি তা নিয়ে কম ধকলও যায়নি তার।
গত বছর একটি অনুষ্ঠানে তার সহধর্মীনী সালমা আক্তার লিপির সঙ্গে প্রেম ও ভালোবাসার গল্প শুনিয়েছিলেন। তিনি যখন নারায়ণগঞ্জ সরকারি তোলারাম কলেজে রাজনীতি করেন তখন সালমা আক্তার লিপির প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিলেন। প্রেমে পড়া মেয়েটির মন জয় করতে কত যে তাবিজ-কবচ করেছেন তা অকপটেই বলে ফেললেন এই রাজনীতিক। কবিরাজের বাড়ির রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে জুতার তলা ক্ষয় করে ফেলেছেন তিনি। তবে বন্ধুদের সহযোগিতার কথা বারবারই মনে পড়ে তার। মজার তথ্য হলো- বোমা, গুলি, হামলা-মামলা এসব কিছুর ভয় না পেলেও সালমা আক্তার লিপির সামনে ছিলেন তিনি ভেজা বেড়াল!
শামীম ওসমান বলেন, আমি কোনোদিন ভয় পাই না। তবে একদিন কলেজে ভয় পাইছিলাম; মারাত্মক ভয়। এমন ভয় পাইলাম, এক দৌড়ে কলেজের প্রিন্সিপালের রুমে। তিনি বলেন, আমারে গুলি করছে তাতে আমি ভয় পাই না। আমার উপরে বোমা মারছে ভয় পাই না। পুলিশ ধরতে আসছে ভয় পাই না। সেনাবাহিনী ধরতে আসলেও ভয় পাই না। কিন্তু সেইদিন ভয় পাইছিলাম। কারণ আমার পেছনে যে মহিলা বইসা আছে আমি ওনার পিছে পিছে একটু ঘুরতাম। কিন্তু বেশি চান্স দিতো না।
শামীম ওসমান বলেন, অনেকে চান্স দিতো, যারা বেশি চান্স দিতো তাদের ভালো লাগতো না। যেহেতু চান্স দেয় নাই বহুত ত্যাড়া মহিলা। এজন্য পিছে একটু বেশিই ঘুরতাম। ঘুরতে ঘুরতে একটা সময় ভাবলাম যে, চান্স যখন দিলই না এটারেই বিয়া কইরাম! তিনি বলেন, কিন্তু আমার বাসায় বাবা ছিল খুব কঠিন মানুষ। ভাইয়েরা আমাকে খুব শাসন করতো। আমি যখন তোলারাম কলেজের ভিপি তখনো মাগরিবের নামাজের পর বাসায় ঢুকতে পারতাম না। মাগরিব পড়ার সাথে সাথে আমাকে বাসায় ঢুকতে হতো। হাত-মুখ ধুয়ে পড়তে বসতে হবে।
শামীম ওসমান বলেন, আমি যত বড় যত কিছুই হই না কেন আমার এ দুঃখ আমার বন্ধুবান্ধবের ভাল্লাগে না। বড়ই হা-হুতাশ। আল্লাহরে, কী করে একে পাওয়া যায়। এটা আমার বন্ধুদের সহ্য হইলো না। আমার দুই বন্ধু- একটা মারোয়ারি আরেকটা এখন কানাডায়। ওরা আমার দুঃখে দুঃখিত, আমার কষ্টে কষ্টিত হয়েছে। তিনি বলেন, পঁচাশি ছিয়াশি সালের ঘটনা, দেখলাম এতগুলো গোল মরিচ নিয়ে এসেছে। এরকম পাঁচ কেজি গোল মরিচ। আমি বললাম, এসব কী? বলে, এগুলা গোল মরিচ। আমি বলি, কী করতে হবে? বলে, সকাল বেলা সাতটা গোল মরিচ ফজরের নামাজের আগে উইঠা চুলার মধ্যে ছেড়ে দিবি। তারপর কী হবে? তারা বললো, গোলমরিচ যখন জ্বলবে তখন ওর (সালমা লিপি) মন আমার জন্য জ্বলে জ্বলে উঠবে। সাতদিন লাগবে বেটা, তারপর দেখবি তোর জন্য দৌড়াইয়া আসবে। তাই বন্ধুর কথায় ট্রাই করতে অসুবিধা কী। প্রতিদিন সকাল বেলা রান্নাঘরে চুলার মধ্যে গোল মরিচ পোড়াই।
মজার ব্যাপার, একদিন হঠাৎ করে পোড়ানোর সময় দেখি বাবা পিছনের দাঁড়াইয়া আছে। বাবা জিজ্ঞাসা করে রান্না ঘরে কী করো। এর মধ্যে আমার গলা শুকাইয়া গেছে। বাবা বলছে, কি করো টস টস করে আওয়াজ হচ্ছে। বলছি গোল মরিচ পোড়াচ্ছি। বলে, কেন পোড়াচ্ছো? মিথ্যা করে বলি, আব্বা আমারে এক ফকির বলছে ফজরের নামাজের আগে যদি এ গোল মরিচ পোড়াও বাসার ভিতরে নাকি কোন খারাপ জিনিস আসতে পারবে না। শামীম ওসমান বলেন, আমাকে কাউকে জানাইতে মানা করছে। তারপর বলে, তাহলে পোড়াও সমস্যা নাই। এরপর আন্দোলন লাগছে।
একদিন মহিলা কলেজে ঢুকছি। ঢোকার পর ওই যে আমার বন্ধু বলছে দৌড়াইয়া আমার বাসায় চলে আসবে। আমার দিন শেষ, বাসায় চলে আসলে আমার বাপ দিব আমারে মাইর। তখনো কিন্তু আমার বিয়ের বয়স হয় নাই। কি করি! তিনি বলেন, আমি ভাবছি মিথ্যা কথা হবে না। এ কলেজে আসছি বক্তব্য রাখতে। তখন কলেজে গেট ছিল বন্ধ, বাহির হতে দিতো না মেয়েদের। এরা দেখছে আমি ঢুকছি, উনি (লিপি ওসমান) ওনার বান্ধবীরা দেখছে আমি ঢুকছি। আমি তখন পপুলার ছাত্র নেতা ছিলাম। আমি ঢুকছি তাই কলেজের গেট খুলতে হবে। শামীম ওসমান, কলেজের গেট যেই না খুলছে উনারা কলেজের কোণা থেকে দৌড় দিছে, তখন আমি ভয় পেয়ে গেছি। আমি এক দৌড়ে প্রিন্সিপালের রুমে। যার ভয়ে দৌড় দিলাম ওনারা ডান দিক দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে।
(parliamentnews24.com)