বাংলাদেশ সফররত চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, রোহিঙ্গা সমস্যা বাংলাদেশের জন্যে একটি বড় রকমের সংকট এবং এ সংকট সমাধানে চীন বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে চায়।
ঢাকায় চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাতের পর সাংবাদিকদের বলেছেন, বাংলাদেশকে মিয়ানমারের সাথে দ্বিপাক্ষিকভাবেই এর সমাধান করতে হবে।
কিন্তু বাংলাদেশ সরকার বহু পক্ষকে সাথে নিয়ে এই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে ফেরত নিতে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য চীনের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সাথে সৌজন্য সাক্ষাতে বলেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে আলোচনায় সহায়তা করতে চায় চীন।
এই সংকট বাংলাদেশের জন্য বিশাল চ্যালেঞ্জ বলে তিনি উল্লেখ করেন এবং লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়ার জন্য বাংলাদেশকে ধন্যবাদ দিয়েছেন । প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বিবিসি বাংলাকে এ কথা নিশ্চিত করেছেন।
মি. করিম আরো জানান, সফররত ছীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী রোহিঙ্গা সমস্যা মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সমস্যা বলে উল্লেখ করলেও বলেন, এটি বাংলাদেশে প্রভাব ফেলেছে। তাই দুই দেশের মধ্যে আলোচনা সহজতর করতে ভূমিকা নিতে চায় চীন।
চীনা দূতাবাসে আমন্ত্রিত সাংবাদিকদের চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এ বক্তব্য নতুন করে আবার বার্তা দিল যে মিয়ানমারের পক্ষেই তাদের অবস্থান।
কারণ মিয়ানমার যে সুরে কথা বলছে তারা ঠিক একই সুরে জানালো যে, দ্বি-পাক্ষিকভাবে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে সমস্যঅর সমাধান করতে হবে।
এই একইকথা কিন্তু মিয়ানমার বলে আসছিল এবার সংকট শুরুর পর থেকে যে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়াটি হবে ৯২ সালের রিপ্র্যাট্রিয়েশন চুক্তির আওতায় ।
কিন্তু অগাস্ট মাসে নতুন করে রাখাইন রাজ্যে সহিংসতার পর লাখ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নেয়ার পর বাংলাদেশ এবার বলছে, রিপ্যাট্রিয়েশন বা প্রত্যাব্যাসন প্রক্রিয়ায় বহু পক্ষকে যুক্ত করতে হবে। কারণ দ্বিপাক্ষিক প্রক্রিয়ার মাঝখানে বিষয়টি বহু বছর ধরেই ঝূলে আছে, সেকারণে বাংলাদেশ এই প্রক্রিয়া আরো অনেক পক্ষকে যুক্ত রাখতে চায় যেন তারা মাঝখানে তাগিদ দিতে পারবে।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেযা লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে ফেরত নিতে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইছছুল করিম জানান, প্রধানমন্ত্রী বলেন বাংলাদেশ মানবিক ভিত্তিতে ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। কিন্তু তিনি বলেন রোহিঙ্গারা মায়ানমারের নাগরিক, এবং বাংলাদেশ ও মায়ানমারের সুসম্পর্ক বজায় জন্য দেশটিকে তার নাগরিকদেরকে বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে নিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের দুর্দশার কথা উল্লেখ করেন, বিশেষ করে নারী ও শিশুদের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। তিনি বলেন রোহিঙ্গা নারীদের একটি বড় অংশ গর্ভবতী।
প্রতিবেশী দেশ বিদ্রোহের কারণে কোনো সন্ত্রাসী গ্রুপকে তাদের সন্ত্রাসী তৎপরতা চালানোর জন্য বাংলাদেশের ভূখণ্ডকে ব্যবহার করতে দেয়া হবে না এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন শেখ হাসিনা।
অন্যদিকে সফররত জার্মানি, জাপান, সুইডেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রীলা আজ কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে যান। তারা উখিয়ার কুতুপালংয়ে রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি ঘূরে দেখেন এবং জাতিসংঘের অধীন সংস্থাগুলো এবং স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক অন্যান্য উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গেও মতবিনিময় করেন।
এদিকে দুইদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছেন। সে বিষয়ে বাংলাদেশের তরফে এখনো কিছূ জানানো হয়নি।