সায়েবা’স মেথড: কনডম যেখানে মুমূর্ষু মায়ের জীবন বাঁচায়

Date:

Share post:

প্রসব পরবর্তী জরায়ুর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একদিন আঠারো বছর বয়েসী একটি মেয়ে মারা যায়। ড. সায়েবা আক্তার তখন ওই হাসপাতালের গাইনি বিভাগের প্রধান।

বাংলাদেশে প্রসবকালীন মাতৃমৃত্যুর অন্যতম একটি কারণই এই ধরণের রক্তক্ষরণ।

যদিও এ ধরণের সমস্যার চিকিৎসা পদ্ধতি আছে, কিন্তু এজন্য বিদেশী যেই প্রযুক্তিটি পাওয়া যায় সেটির দাম তিনশ ডলার, বাংলাদেশী টাকায় চব্বিশ হাজার টাকার মতো।

২০০০ সালের কথা। ঢাকা মেডিকেল কলেজে তখন এই প্রযুক্তিটির একটিমাত্র কপি আনা হয়েছিল, একবারের বেশী ব্যবহারের কথা নয়, কিন্তু চিকিৎসকেরা কয়েকবারই ব্যবহার করেছিলেন সেটি।

একদিন সেটি হারিয়ে যায়। সেদিনই মারা যায় মেয়েটি।

প্রযুক্তিটি মূলত একটি বেলুন, যেটি জরায়ুর ভেতরে ঢুকিয়ে ফুলিয়ে দিলেই কার্যত রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়।

“সেই রাতে খুব মনে হচ্ছিল, একটি বেলুন যদি পেতাম, তাহলে মেয়েটাকে বাঁচানো যেত। সারারাত ঘুমাতে পারিনি”,নির্ঘুম রাতে ড. আক্তারের মনে হঠাৎই চলে আসে শিশুদের খেলনা বেলুনের কথা।

“মাঝে মাঝে আমি দেখেছি গ্রামে কনডমকে ওরা বাতাস দিয়ে ফুলিয়ে খেলনা হিসেবে ব্যবহার করে। হঠাৎ আমার মনে হল এই কনডমকে যদি আমি ইউটেরাসের (জরায়ু) ভেতর ঢুকাই, কারণ কনডম একটা মেডিকেল ডিভাইস, এটাকে যদি ইউটেরাসের ভেতর ঢুকিয়ে তারপর ফুলিয়ে চাপ সৃষ্টি করি, তাহলে হয়তো রক্তপাত বন্ধ হবে”।

“তারপর আমি দেখলাম, কনডম কতটুকু পানি বা স্যালাইন ধরতে পারে। আমি এক লিটার ফ্লুইড ওটার ভেতরে ঢুকিয়ে অনেক চেষ্টা করেও সেটিকে ফাটাতে পারলাম না”।

পরদিন তিনি হাসপাতালে গিয়ে দেখেন, চিকিৎসকেরা একটি মেয়ের জরায়ু কেটে ফেলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। অনেক সময় প্রসব পরবর্তী রক্তক্ষরণ ঠেকাতে জরায়ু কেটে ফেলা হয়।

“আমি বললাম একটু অপেক্ষা কর। সে-ই আমার প্রথম কেস, যেখানে আমরা কনডমটাকে ক্যাথেটার দিয়ে বেঁধে ওর ইউটেরাসের ভেতর ঢুকিয়ে স্যালাইন দিয়ে ফুলিয়ে দেয়ার পর পনেরো মিনিটের মধ্যেই ব্লিডিং বন্ধ হয়ে গেল”।

পুরো ব্যবস্থাটি করতে খরচ হল একশ টাকারও কম।

সেই থেকে পদ্ধতিটি সায়েবা’স মেথড নামে পরিচিত। ব্যবহার করা হচ্ছে বিশ্বের বহু দেশে। বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোতে এটি একটি স্বীকৃত চিকিৎসা ব্যবস্থা।

ড. আক্তার এখন সরকারি চাকরি থেকে অবসরে চলে গেছেন।

তবে মায়েদের ফিস্টুলা নিয়ে ভাবেন তিনি চিকিৎসকের পেশাজীবনের শুরু থেকেই।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে থাকতেই তার একটি উদ্যোগ আজ পরিণত হয়েছে ‘ন্যাশনাল ফিস্টুলা সেন্টারে’, বিবিসিকে বলেন ড. সায়েবা আক্তার।

আর অবসরে যাওয়ার পর তিনি ঢাকার নিউ ইস্কাটন এলাকায় গড়ে তোলেন ‘মামস ইন্সটিটিউট অব ফিস্টুলা অ্যান্ড ওমেনস হেলথ’, যেটি মূলত একটি কুড়ি শয্যার দাতব্য হাসপাতাল।

নারী শিক্ষায়ও ভূমিকা রাখছেন ড. আক্তার, এজন্য স্বল্প আয়ের পরিবারের মেয়েদের কর্মমুখী শিক্ষা দেবার জন্য ঢাকা ও গাইবান্ধায় দুটি প্রতিষ্ঠান তিনি চালাচ্ছেন।

ড. সায়েবা আক্তারের জন্ম হয়েছে চট্টগ্রামে। পিতা ছিলেন টাঙ্গাইলের করটিয়া সাদত কলেজের শিক্ষক, সেই সুবাদে ওই ক্যাম্পাসেই বেড়ে ওঠা।

চিকিৎসাশাস্ত্র পড়েছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, প্রথম কর্মস্থলও ওখানেই।

স্বামী ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর কবিরও একজন ডাক্তার। তিনি একজন কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ এবং ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব কিডনি ডিজিজ অ্যান্ড ইউরোলজির সাবেক পরিচালক।

তিন মেয়ে এক ছেলের মধ্যে বড় মেয়েটিও ডাক্তার।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Related articles

জিম্মি নাবিকদের উদ্ধার চেষ্টার সময় গুলি বিনিময়

সময় ডেস্ক সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর নাবিকদের উদ্ধারে অভিযান চালিয়েছে অন্য একটি জাহাজ। দুই...

শেষ ম্যাচে ভুটানকে উড়িয়ে দিলো বাংলাদেশ

সময় স্পোর্টস ডেস্ক সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল আগেই নিশ্চিত করেছিলো বাংলাদেশের মেয়েরা। ১০ মার্চ ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে মাঠে...

নারী দিবসে নারী কর্মীদের সম্মান জানিয়ে এবারই প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করছেন নারী কর্মীরা

সময় ডেস্ক আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আজ শুক্রবার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট পরিচালনা করেছেন নারীরা। রাজধানীর শাহজালাল...

চিত্র নায়িকা নিপুণ চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করছেন

মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন তিনি। জানা গেছে,...