মিয়ানমার থেকে প্রাণভয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের দেখতে ঢাকায় কর্মরত প্রায় অর্ধশত বিদেশি কূটনীতিক ও বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা বুধবার কক্সবাজার সফর করেছেন।
সেখানে তারা শরণার্থী ক্যাম্পে ঘরে ঘরে গিয়ে নতুন করে আসা শরণার্থীদের দুর্ভোগের কাহিনী শোনেন এবং কথা বলে পুরনোদের সাথেও।
সেখানে উপস্থিত একজন কূটনীতিক বলেন, রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়টি নিয়ে তারা তাদের নিজ নিজ সরকারের সাথে আলোচনা করবেন।
কূটনীতিকরা পরে সীমান্ত সংলগ্ন এলাকাও পরিদর্শন করেন।
মূলত রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মিয়ানমারের ওপর চাপ তৈরির যে চেষ্টা বাংলাদেশ শুরু করেছে তারই অংশ হিসেবে বিদেশি কূটনীতিকদের বিশাল এই দলটিকে কক্সবাজার নিয়ে যায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
সকালে একটি বিশেষ বিমানে করে তাদের নেয়া হয় কক্সবাজারে।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইওরোপীয় ইউনিয়ন, রাশিয়া, চীন, ভারত, সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূতরা এই সফরে সামিল হয়েছিলেন।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ বিদেশি কূটনীতিকরা এরপর সড়কপথে যান কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্পে।কূটনীতিকরা ক্যাম্পের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে ঘুরে দেখেন।
কূটনীতিকদের এই সফর স্থানীয় অধিবাসী এবং ক্যাম্পে থাকা অসংখ্য শরণার্থীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য তৈরি করে।
কূটনীতিকরা কখনও গাড়িতে চড়ে আবার কখনও পায়ে হেঁটে শরণার্থীদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করেন।
এরপর কূটনীতিকরা অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের সাথে আলাপ করেন।
কূটনীতিকদের পক্ষে কথা বলার সময় ঢাকায় নেদারল্যান্ডসের দূত বিয়া টেন টুসার উষ্ণ হৃদয় দিয়ে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রশংসা করেন।
“অবশ্যই এটা এখন আগের চেয়েও বেশি বিপর্যয়কর। অনেক বেশি মানুষ, নি:সন্দেহে এটি একটি মানবিক সংকট,” তিনি বলেন, “আমাকে অবশ্যই বাংলাদেশ সরকারের প্রশংসা করতে হবে এতো মানুষকে উষ্ণতার সাথে গ্রহণ করার জন্য।”
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, তারা মনে করছেন বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য যে প্রচেষ্টা নিয়েছে সেটিকে আরও জোরদার করবে বিদেশি কূটনীতিকদের এই পরিদর্শন।
তিনি বলেন, “সব দূতাবাসের প্রধানরা আছেন। মিয়ানমারের আচরণে মানবতার যে ক্ষতি হচ্ছে সেটি তারা দেখছেন। তারা উপলব্ধি করতে পারবেন ও নিজ দেশকে বার্তা দিবেন আশা করি যে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতেই হবে।”
এর আগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঢাকায় দু’দফায় বিদেশি কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক নানা সংস্থার প্রতিনিধিদের রোহিঙ্গা পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করেছে।
ঐ বৈঠক দুটিতে বাংলাদেশের তরফ থেকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার জন্য মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ তৈরির আহ্বান জানানো হয়।