জামায়াত ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমান বলেছেন, দেশ আমাদের সবার। সুতরাং এ দেশে আমরা মর্যাদা ও শান্তির সাথে নিরাপদে বসবাস করতে চাই। গত ১৫ বছর আমাদের ওপর বিভিন্নভাবে জুলুম-নির্যাতন গিয়েছে। এর অবসান হয়েছে ৫ আগস্ট। ওই রাতেই আমি আমার দলের সব সহকর্মীকে আহ্বান জানিয়েছি আল্লাহর ওয়াস্তে কারো ওপর কোনো প্রতিশোধ নিবেন না। জাতিকেও একই কথা বলেছি। আপনাদের স্মরণ থাকার কথা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, তাদের সরকারের পতন হলে কমপক্ষে পাঁচ লাখ লোককে হত্যা করা হবে। এরকম হলে প্রত্যেক গ্রামে এক দুইজন লোক মারা যেত। কিন্তু এরকম হয় নাই। প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধ কখনো শান্তি বয়ে আনতে পারে না।
গতকাল দুপুরে কুলাউড়া উপজেলা জামায়াতের আয়োজনে কুলাউড়া পৌরসভা মিলনায়তনে কেন্দ্র ঘোষিত দেশব্যাপী গণসংযোগ পক্ষ পালন উপলক্ষে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের নিয়ে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি উপরি উক্ত কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমরা রাষ্ট্রের দায়িত্বে যাই আর না যাই আপনাদের সাথে আছি, আমরা আপনাদের সাথে থাকব। রাষ্ট্রের দায়িত্বে কে যাবে না যাবে সেটা আল্লাহ ফায়সালা করবেন। এটা জোর করে নেয়ার বিষয় নয়। যারা জোর করে নেয় তারা অপদস্থ ও অপমানিত হয়। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে জামায়াত নেতাকর্মীরা সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর পাহারা দিয়েছে। আমাদের কোনো নেতাকর্মী এসব কোনো কাজে জড়িত ছিলেন না।
অমুসলিমদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আগামীতে কোনো জালেম যদি আপনাদের ওপর জুলুম করে, আপনারা প্রতিবাদ করবেন, প্রতিরোধ করবেন, আমাদের সাথে রাখবেন। আমরা চাই না জুলুমের শিকার হয়ে কেউ ধুঁকে ধুঁকে কষ্ট পাক। তার প্রিয় জন্মস্থান ছেড়ে অন্যত্র চলে যাক। আমি আমার জন্মস্থানে থাকব এবং সম্মানের সাথে থাকব।
শফিকুর রহমান বলেন, অন্যায় অপরাধ করে থাকলে তার বিরুদ্ধে মামলা হবে, যিনি মামলা করবেন অপরাধ প্রমাণ করার দায়িত্ব তার, যদি তিনি অপরাধ প্রমাণ করতে পারেন তাহলে অপরাধীর বিরুদ্ধে দেশের সংবিধান অনুযায়ী শাস্তি হবে। আমি কে আইন হাতে তুলে নেয়ার? রাষ্ট্র কি আমাকে এই অধিকার দিয়েছে? কাউকে দেয়নি।
কুলাউড়া উপজেলা আমির অধ্যাপক আব্দুল মুন্তাজিমের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি বেলাল আহমদ চৌধুরীর পরিচালনায় মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সিলেট মহানগর জামায়াতের আমির মো: ফখরুল ইসলাম, সিলেট জেলা আমির মাওলানা হাবিবুর রহমান, মৌলভীবাজার জেলা জামায়াতের আমির ইঞ্জিনিয়ার মো: শাহেদ আলী, জেলা নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুর রহমান সেক্রেটারি মো: ইয়ামীর আলী, বড়লেখা ও জুড়ী আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী মাওলানা আমিনুল ইসলাম, মৌলভী বাজার পৌর আমির হাফেজ তাজুল ইসলাম সদর উপজেলা আমির মো: ফখরুল ইসলাম, রাজনগর উপজেলা আমির আবুর রাইয়ান শাহীনসহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এ ছাড়াও বক্তব্য রাখেন কুলাউড়া পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ডা: অরুনাব দে, সাধারণ সম্পাদক অজয় দাশ, সদস্য অশোক ধর, কুলাউড়া ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ সৌম্য প্রদীপ ভট্টাচার্য্য ও পূজা উদযাপন পরিষদ কুলাউড়া পৌরসভার আহ্বায়ক বিচিত্র দে।
সকালে জামায়াত আমির ভুকশীমইল ইউনিয়ন জামায়াত আয়োজিত দাওয়াতি সভায় বক্তব্য রাখেন। দুপুরে তিনি জুড়ী উপজেলা জামায়াত আয়োজিত দাওয়াতি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন। এ ছাড়াও বিকেলে কুলাউড়া উপজেলার রবিরবাজার ইউনিয়ন, ব্রাহ্মণবাজার ও ভাটেরা ইউনিয়নে দাওয়াতি সভা করবেন।
মে দিবসে বাণী
নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমান বলেছেন, মানবরচিত কোনো মতবাদই মানুষের সমস্যার সঠিক সমাধান দিতে সক্ষম নয়। ইসলামী শ্রমনীতি চালু হলেই মালিক-শ্রমিক স্বার্থরক্ষা হবে। ‘শ্রমিকদের গায়ের ঘাম শুকানোর আগেই শ্রমিকের ন্যায্য পাওনা পরিশোধ করার জন্য’ রাসূলে করীম সা: জোর তাকিদ দিয়েছেন। শ্রমিকদের মর্যাদা রক্ষার জন্যে রাসূল সা:-এর নির্দেশনা বাস্তবায়নের মধ্যেই মালিক-শ্রমিক উভয়ের জন্যই প্রকৃত কল্যাণ নিহিত রয়েছে।
১ মে ‘আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস’ তথা ‘মে দিবস’ পালনের আহ্বান জানিয়ে গতকাল এক বিবৃতিতে তিনি এ কথা বলেন। জামায়াত আমির বলেন, ১৮৮৬ সালের ১ মে আমেরিকার শিকাগো শহরে শ্রমিক সমাজ তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আত্মত্যাগের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল। বিশ্বের শ্রমিক সমাজ তা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এখনো তাদের অধিকার আদায়ের আন্দোলন চালিয়ে আসছে। শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের সে আন্দোলন আজও পুরোপুরি সফলতা লাভ করেনি। প্রায় সময় শ্রমিকদেরকে তাদের ন্যায্য বেতন-ভাতার দাবিতে রাজপথে আন্দোলন করতে দেখা যায়। এমনকি ন্যায্যপাওনা আদায় করতে গিয়ে তাদের মূল্যবান জীবনও দিতে হয়। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে শ্রমিকরাও তাদের অধিকার আদায়ের আন্দোলন করতে গিয়ে প্রতিষ্ঠানের ক্ষতিসাধন করে। এমনকি অগ্নিসংযোগের ঘটনাও সংঘটিত হয়, যা নিতান্তই দুঃখজনক। এ অবস্থার অবসান হওয়া দরকার।
তিনি আরো বলেন, আমরা মনে করি, ইসলামী শ্রমনীতি চালু করার মাধ্যমেই শ্রমিক সমাজের প্রকৃত মুক্তি ও কল্যাণ নিশ্চিত হতে পারে এবং মালিকদের স্বার্থও সংরক্ষিত হতে পারে। দেশে বিরাজমান এ পরিস্থিতিতে যথাযথ গুরুত্ব সহকারে ১ মে ‘আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস’ তথা ‘মে দিবস’ পালনের জন্য দেশের সর্বস্তরের শ্রমজীবী সমাজ ও দেশবাসীর প্রতি আমি উদাত্ত আহ্বান জানান তিনি।
নারী সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনা অবিলম্বে বাতিল দাবি : জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম বলেন, নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনা পবিত্র কুরআনের বিধানের সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক এবং ইসলাম ও মুসলিম পরিচয়ের বিপরীত। এ প্রস্তাবনার মাধ্যমে দেশের মানুষের ধর্মীয় মূল্যবোধ, পারিবারিক কাঠামো ও সামাজিক স্থিতিশীলতাকে ধ্বংস করার গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। নারী সংস্কার কমিশনের এ প্রস্তাবনা অবিলম্বে বাতিল ঘোষণা করতে হবে।
গতকাল গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলা জামায়াতের আয়োজনে সদস্য (রুকন) সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন। উপজেলা আমির অধ্যাপক শহীদুল ইসলাম মঞ্জুর সভাপতিত্বে এবং উপজেলা সেক্রেটারি অধ্যাপক আতাউর রহমানের পরিচালনায় সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও গাইবান্ধা জেলা আমির, সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মো: আব্দুল করিম, জেলা নায়েবে আমির ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাজেদুর রহমান। এ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জেলা সেক্রেটারি মাওলানা জহুরুল হক সরকার, জেলা সহকারী সেক্রেটারি সৈয়দ রোকনুজ্জামান, মো: ফয়সাল কবির প্রমুখ।
রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তন চাই : তাহের
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি ডা: সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের গত ২৭ এপ্রিল বাংলাদেশ সফরত চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সাথে বৈঠকের পর এ সম্পর্কে যে ব্রিফিং দিয়েছেন তাতে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে তার বক্তব্যের ব্যাখ্যা প্রদান করে গতকাল ২৮ এপ্রিল এক বিবৃতি প্রদান করেছেন। বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘‘গত ২৭ এপ্রিল বাংলাদেশ সফররত চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সাথে বৈঠকের পর প্রেস ব্রিফিংয়ে আমি যে বক্তব্য দিয়েছি তাতে মূলত বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের সম্মানজনক ও নিরাপদভাবে তাদের দেশে প্রত্যাবর্তন করার ব্যবস্থা ও তাদের জন্য একটি নিরাপদ অঞ্চল গড়ে তোলার বিষয়টি বুঝাতে চেয়েছি। আমার বক্তব্যের মাধ্যমে কোনো ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হলে তা এ বিবৃতির মাধ্যমে নিরসন হবে বলে আমি আশা করি। এটিই বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর দৃষ্টিভঙ্গি।”