রোহিঙ্গা ইস্যু: সু চি’র রাজনৈতিক দূর্বলতা নাকি কৌশল

Date:

Share post:

রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিকভাবে সমালোচনার মুখে অং সান সু চী

তাঁকে অনেকেই বর্ণনা করতেন গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারের চ্যাম্পিয়ন হিসেবে।

তিনি যখন দীর্ঘসময় গৃহবন্দি ছিলেন, তখন তাঁর মুক্তির ্য অনেকেই সরব হয়েছিল।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গণতন্ত্র কামী মানুষের কাছে তিনি ছিলেন সম্মানীয় এবং পূজনীয় একজন ব্যক্তিত্ব।

অনেকেই ভেবেছিলেন, রিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে তাঁর ক্ষমতায় আসলে দেশের পরিস্থিতি আমূল বদলে যাবে। বিশেষ করে ক্ষুদ্র জাতী ও ধর্মীয় গোষ্ঠী তাদের অধিকার নিয়ে বাঁচতে পারবে।

কিন্তু পরিস্থিতি এতোটাই উল্টোদিকে মোড় নেবে মোড় নেবে সেটা অনেকে ভাবতেই পারেন নি।

যার কথা এখানে বলা হচ্ছে, তিনি হলেন মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি।

পশ্চিমা দেশ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছে অং সান সু চি ছিলেন

ংশ শতাব্দীর গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রতীক। মিজ সু চি-কে তারা এমন একটি আসনে অধিষ্ঠিত করেছিলেন, যেখানে খুব কম মানুষ স্থান পায়।

কিন্তু অং সান সু চি’র সমালোচনা এবং নিন্দায় এখন সরব হয়েছেন অনেকে।

মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলমানদের হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন এবং বাড়িঘরে অগ্নি সংযোগের পর হাজার-হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন।

জাতিসংঘের হিসেবে গত আট মাসে প্রায় এক লক্ষ পঁত্তর হাজার রোহিঙ্গা নিপীড়নের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এর মধ্যে গত দশ দিনে এসেছে ৯০ হাজার।

বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে বেশ সমালোচনার মুখে পড়েছেন অং সান সু চি।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে ঘরে-বাইরে চাপের মুখে আছেন তিনি। তবে ঘরের চাপ এক ধরনের এবং বাইরের চাপ অন্য ধরনের।

গত একমাস যাবত মিয়ানমারে অবস্থান করছেন ভারতের াদিক সুবীর ভৌমিক।

প্রায়ই তিনি মিয়ানমারে যাতায়াত করেন। সেখানকার রাজনীতিবিদসহ বিভিন্ন মহলে কথাবার্তা বলেছেন মি: ভৌমিক।

তিনি বলছিলেন, ” এ রোহিঙ্গা ইস্যুতে অং সান সু চি এবং তাঁর দল দু’তরফ থেকে সমস্যায় পড়েছে। এদিকে পশ্চিমি দুনিয়া, বিভিন্ন মানবাধিকার ঠন … সবাই অং সান সূচীকে লক্ষ্য করে সমালোচনা মুখর হচ্ছে।”

কিন্তু মিয়ানমারের ভেতরে রোহিঙ্গা বিরোধী তীব্র মনোভাব আছে বলে উল্ করেন সুবীর ভৌমিক।

তারা মনে করে ‘রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের’ আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হচ্ছে রাখাইনরা।

” তাদের একটা চাপ রয়েছে। কোনভাবেই রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের সাথে কথাবার্তা আলোচনা বা এমন কিছু করা যাবে না যাতে রোহিঙ্গাদের সুবিধা হয়। সেখানে স্বার্থ দেখতে হলে রাখাইনদের স্বার্থ দেখতে হবে,” বলছিলেন সুবীর ভৌমিক।

রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের জাতিগত ভাবে নির্মূল করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

ের নোবেল বিজয়ী মালালা ইউসুফজায়ী এবং জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের মিয়ানমার বিষয়ক দূত ইয়াংহি লি আহবান জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা নিপীড়নের বিরুদ্ধে অং সান সু চি যেন সরব হয়। কিন্তু তাতে খুব একটা কাজ হবে বলে মনে হয় না।

রোহিঙ্গা নিপীড়নের বিরুদ্ধে মিজ সু চি’র সরব না হওয়ার কারণ কী? এটা কী তাঁর রাজনৈতিক দুর্বলতা নাকি রাজনৈতিক কৌশল?

সাংবাদিক সুবীর ভৌমিক মনে করেন, এটা মিজ সু চি’র রাজনৈতিক দুর্বলতা। বর্তমান সরকারে অং সান সু চি’র অবস্থান বিদেশ মন্ত্রী এবং স্টেট কাউন্সিলর।

তাঁর দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি বা এনএলডি সরকার গঠন করলেও তার হাতে কর্তৃত্ব কম।

স্বরাষ্ মন্ত্রণালয়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং সীমান্ত সংক্রান্ত মন্ত্রণালয়ের কর্তৃত্ব সেনাবাহিনীর হাতে।

মি: ভৌমিক বলেন, এমন অবস্থায় সু চি’র পক্ষে চাইলেও কিছু করা সম্ভব নয়।

” সেনাবাহিনী কন্সটিটিউশন (সংবিধান) এমনভাবে করেছিল যে পার্লামেন্টে এক চতুর্থাংশ তাদের সদস্য থাকবে। এটা মেনেই অং সান সু চি নির্বাচন করতে হয়েছে এবং এটা পরিবর্তন করার কোন সম্ভাবনা নেই।.. . অং সান সু চি’র টিকে থাকতে গেলে এবং নতুন কোন সেনাবাহিনীর তৎপরতা যাতে না হয় ওনাকে গদিচ্যুত করার, তাহলে তার পক্ষে মনে হচ্ছে খুব বেশি বলা সম্ভব না,” বলছিলেন মি: ভৌমিক।

বিষয়গুলো নিয়ে অং সান সু চি’র দল এনএলডি’র মধ্যে এক ধরনের চাপা অসন্তোষ আছে বলে লক্ষ্য করছেন মি: ভৌমিক।

দলের একটি অংশ মনে করে, অং সান সু চি’র উচিত সেনাবাহিনীর কাছে বিষয়গুলো জোরালো ভাবে তুলে ধরা।

কিন্তু মিজ সু চি সে সাহস এখনো সঞ্চয় করতে পারেন নি বলে মনে করছেন মি: ভৌমিক।

রাখাইন রাজ্যের ভাগ্য নিয়ন্তা সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনী তাদের মতো করে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে চাইছে।

এখানে অং সান সু চি’র কথা কতটা গুরুত্ব পাবে সেটি নিয়ে সংশয় আছে সাংবাদিক সুবীর ভৌমিকের।

তবে সু চি’র দল এনএলডি’র একটি মনে করে, মিয়ানমারে জাতিগত সংঘাত নিরসনে সেনাবাহিনী অতীতেও কোন ভূমিকা রাখতে পারেনি এবং ভবিষ্যতেও পারবে না।

নির্বাচনের আগে মিজ সু চি’র প্রতিশ্রুতি ছিল, তিনি গণতন্ত্রের পাশাপাশি সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর সাথে শান্তি প্রক্রিয়া শুরু করবেন। কিন্তু মিজ সু চি’র সে প্রতিশ্রুতি এখন সুদূর পরাহত।

অন্যদিকে সেনাবাহিনীর একটি অংশ মনে করে, মিয়ানমারে নির্বাচন হলেও রাখাইন রাজ্যে তাদের কাজ অসমাপ্ত রয়ে গেছে।

এ অসমাপ্ত কাজটি হচ্ছে, রোহিঙ্গাদের সে অঞ্চল থেকে বিতাড়িত করা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Related articles

বিশাল বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল ইতালির রাজধানী, আহত ২৭

ইতালির রাজধানী রোমের পূর্বাঞ্চলীয় একটি পেট্রোল পাম্পে বিশাল বিস্ফোরণ ঘটেছে। শুক্রবার (৪ জুলাই) এই বিস্ফোরণে ১০ পুলিশ কর্মকর্তা...

ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য বন্ধ করুন : জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞ

ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্যিক ও আর্থিক সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন অধিকৃত ফিলিস্তিনি...

ইরানে হামলায় যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানিও জড়িত: রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত

যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং জার্মানি ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েলি আক্রমণকে উৎসাহিত করার ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করেছিল। তাই তাদের...

ইউক্রেনে বড় ধরনের হামলা করল রাশিয়া

ইউক্রেনে বেশ বড় ধরনের ড্রোন হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। ২০২২ সালে আগ্রাসন শুরুর পর এটাই ছিল রাশিয়ার সবচেয়ে বড়...