কাশ্মীর সংকটই পাকিস্তান-ভারত দ্বন্দ্বের মূল কেন্দ্রবিন্দু এবং অঞ্চলটির ভবিষ্যৎ নির্ধারণে কাশ্মীরিদের মতামতকে উপেক্ষা করা অযৌক্তিক—এমনটাই মন্তব্য করেছেন পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব আয়াজ আহমদ চৌধুরী।
জিও পাকিস্তানকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, জম্মু ও কাশ্মীরের ৯৩ শতাংশ মানুষ মুসলিম, কিন্তু ১৯৪৭ সালে গভীর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে এই অঞ্চল পাকিস্তানের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়।
তার মতে, সাম্প্রতিক ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা আবারও প্রমাণ করেছে, কাশ্মীর সমস্যার সমাধান ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ায় স্থায়ী শান্তি সম্ভব নয়। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘ভারতের উচিত বুঝে নেওয়া যে কাশ্মীরিরা তাদের সঙ্গে থাকতে চায় না। তাদের দমননীতিই সংঘাতকে দীর্ঘায়িত করছে।’
আয়াজ চৌধুরী আরও বলেন, পাকিস্তানের ‘পরিমিত পাল্টা জবাবে’ ভারতের আতঙ্ক এটা প্রমাণ করে, ন্যায়বিচারের শক্তি এখনো আছে। তার মতে, ভারত যত দ্রুত বাস্তবতা মেনে আলোচনা শুরু করবে, ততই উভয় দেশের মঙ্গল।
কাশ্মীরের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, ২০১৯ সালে ভারতের সংবিধান থেকে ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের পর থেকেই অঞ্চলটিতে স্বায়ত্তশাসন বিলুপ্ত এবং রাজনৈতিক অধিকার খর্ব হয়েছে। সেই সময় হাজারো রাজনীতিককে গ্রেফতার করা হয়, ইন্টারনেট বন্ধ থাকে মাসের পর মাস, এবং কড়া সামরিক উপস্থিতি অব্যাহত থাকে।
মানবাধিকার কর্মীরা অভিযোগ করছেন, কাশ্মীরে মানুষের বাকস্বাধীনতা, মতপ্রকাশের অধিকার এবং রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের সুযোগ সীমিত হয়ে পড়েছে।
সর্বশেষ ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ এক হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যাদের বেশিরভাগই পর্যটক ছিলেন। ভারত এই হামলার জন্য পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তইয়্যেবাকে দায়ী করে।
এরপর ৭ মে ভারত ‘অপারেশন সিন্ধুর’ নামে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর ও পাঞ্জাবে ১৪টি স্থানে বিমান হামলা চালায়। পাল্টা জবাবে পাকিস্তানও ভারতের সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালায়, যার ফলে দুদেশের মধ্যে যুদ্ধাবস্থা তৈরি হয়।
চীন, যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব ও কাতারের মধ্যস্থতায় ১০ মে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। কিন্তু বিশ্লেষকদের মতে, কাশ্মীর সংকট থেকে নজর সরিয়ে রাখলে এই যুদ্ধবিরতি দীর্ঘস্থায়ী হবে না।