ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের হামলায় কমপক্ষে আরও ৮৬ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অনেকে। নিহতদের মধ্যে ক্ষুধার্ত ত্রাণপ্রার্থীর সংখ্যাই অর্ধশতাধিক। এর ফলে এই উপত্যকায় নিহতের মোট সংখ্যা ইতোমধ্যেই ৫৬ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
বুধবার (২৫ জুন) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা এই তথ্য জানিয়েছে।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, গাজার অবরুদ্ধ এলাকায় খাদ্য ও সহায়তা সংগ্রহ করতে আসা সাধারণ মানুষদের ওপর আবারও ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল বাহিনী। মঙ্গলবার ভোর থেকে শুরু হওয়া হামলায় কমপক্ষে ৮৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় হাসপাতাল সূত্র।
নিহতদের মধ্যে ৫৬ জন মারা গেছেন সহায়তা বিতরণ কেন্দ্রের আশপাশে গুলিবিদ্ধ হয়ে। গাজা উপত্যকার দক্ষিণের শহর রাফাহ-তেই ২৭ জন সাধারণ মানুষকে গুলি করে হত্যা করা হয়, যারা খাদ্যের জন্য সহায়তা কেন্দ্রে যাচ্ছিলেন।
গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) তাদের কার্যক্রম শুরু করার পর থেকে ক্ষুধার্তদের প্রতিদিন হত্যার ঘটনা বৃদ্ধি পেয়ে ৪০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি মারা গেছে।
গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত মোট প্রাণহানির সংখ্যা ৫৬ হাজার ছাড়িয়ে গেছে এবং আহত হয়েছেন প্রায় ১ লাখ ৩১ হাজার ৮৪৮ জন। হতাহতের এই সংখ্যা বিশ্বজুড়ে তীব্র উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।
আল জাজিরা বলছে, মঙ্গলবারের এই হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটেছে ‘গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন’ (জিএইচএফ)-এর তত্ত্বাবধানে স্থাপিত সহায়তা বিতরণ পয়েন্টগুলোর আশপাশে। মূলত জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিইএ-এর প্রধান এসব সহায়তা বিতরণ পয়েন্টগুলোকে আখ্যায়িত করেছেন “মৃত্যু ফাঁদ” হিসেবে।
বার্তাসংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস জানায়, গাজার মধ্যাঞ্চলে সালাহ আল-দীন সড়কে সহায়তা নিতে আসা মানুষের ওপর হামলায় কমপক্ষে ২৫ জন নিহত হয়েছেন। আরও ১৪০ জন আহত হয়েছেন, যার মধ্যে ৬২ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
ইনস্টাগ্রামে প্রকাশিত একটি ভিডিওতে দেখা যায়, নুসাইরাত শরণার্থী শিবিরের পাশে আল-আওদা হাসপাতালে মৃতদেহ আনা হচ্ছে। আল-জাজিরার যাচাইকারী সংস্থা সানাদ এই ভিডিওটির সত্যতা নিশ্চিত করেছে। এছাড়া খান ইউনিসের নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্সেও একই ধরনের দৃশ্য দেখা গেছে।
অন্যদিকে গাজা শহরের উত্তরে এবং রাফাহতেও সহায়তা নিতে আসা মানুষদের লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়। গাজা শহর থেকে আল-জাজিরার প্রতিবেদক জানান, আল-শিফা হাসপাতালের জরুরি বিভাগ রক্তে রঞ্জিত হয়ে উঠেছিল, অনেকেই চিকিৎসার অপেক্ষায় মারা যান।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি সেনারা মানুষজনের কাছে সাহায্যের ট্রাক পৌঁছানোর আগেই গুলি চালায়। আহমেদ হালাওয়া নামে একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, “এটা ছিল গণহত্যা। আমরা পালিয়ে যাচ্ছিলাম, এমন সময়েও ট্যাংক ও ড্রোন থেকে গুলি চালানো হচ্ছিল।”
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, তারা অভিযোগ খতিয়ে দেখছে এবং দাবি করেছে, সহায়তা কেন্দ্রে “সন্দেহভাজনরা” ঘনিষ্ঠভাবে এগিয়ে এলে তাদের প্রতিক্রিয়া জানাতে হয়। তবে প্রত্যক্ষদর্শী ও মানবিক সংস্থাগুলো বলছে, এই গুলিবর্ষণের বেশিরভাগ ঘটনাই কোনো ধরনের সতর্কতা ছাড়াই ঘটে।
জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টেফান ডুজারিক বলেন, মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে শুধু খাদ্য নেওয়ার চেষ্টা করার জন্য। সহায়তার নামে পরিচালিত এই সামরিকীকৃত বিতরণ ব্যবস্থা মানবিকতার মৌলিক শর্ত পূরণ করে না। এটি একটি ভয়াবহ বাস্তবতা।
তিনি আরও বলেন, উভয় পক্ষের নেতাদের এখনই রাজনৈতিক সাহস দেখিয়ে এই হত্যাযজ্ঞ থামানো উচিত।